
Home ঝিনাইদহ জেলা / Jhenidah District > শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৩)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 16296 বার পড়া হয়েছে
শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৩)
ঝিনাইদহ জেলার একটি অতি প্রাচীন বধিষ্ণু গ্রাম এই শৈলকূপা। এই গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বহমান কুমার নদী। রূপ-রস-গন্ধে ভরপুর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি শৈলকূপা উপজেলা সদর। ১৮৯৩ সাল সুন্দর, মনোলোভা, রৌদ্রোজ্বল একটা প্রভাত। শৈলকূপার সাহা সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় শৈলকূপা বাজারের ছোট একটা ঘরে জন্ম নেয় আজকের শৈলকূপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি এবং ঐ সালেই বিদ্যালয়টি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উচ্চ ইংরেজী স্কুল হিসাবে অনুমোদন লাভ করেন। বিভিন্ন সমস্যা ও অসুবিধার মধ্য দিয়ে আসে ১৮৯৪ সালের ২৩শে আগস্ট-নব জন্ম হয় স্কুলটির। ঐ দিনে তৎকালীন এতদাঞ্চল খ্যাত শৈলকূপা মধ্য-ইংরাজী স্কুলটি বর্তমান স্কুলটির সঙ্গে সংযোজিত হয়। সেই সময় স্কুল দুইটির সংমিশ্রণ করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। স্থানীয় সাহা সম্প্রদায়ের এক বাক্যে সমর্থন ও চেষ্টায় সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অনেক সমস্যা ও বাধা বিপত্তিকে কাটিয়ে প্রয়াত বাবু মতিলাল সাহার অক্লান্ত পরিশ্রম, আত্নত্যাগ, অতুলনীয় দানও সুযোগ্য নেতৃত্বেও কারণে স্কুলটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। তাই মতিলাল বাবুকেই এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বললে ভূল হয় না। স্কুলটির প্রথম ক্লাস শুরু হয় একটি বড় খড়ের ঘরে। ছাত্রবৃদ্ধির সাথে সাথে স্থানাভাব দেখা দিলে খড়ের ঘরটি বিক্রয় করা হয়। ডাক্তার বিহারী লাল কর্তৃক প্রদত্ত ১৮ শতক জমির উপর তিনটি টিনের ঘর তৈরী করা হয়। কিন্তু ১৯১২ সালের জানুয়ারী মাসে যাবতীয় রেকর্ড পত্রসহ স্কুলটি অজ্ঞাত দুস্কৃতিকারী কর্তৃক ভষ্মীভূত হয়। স্কুলটির সংস্কারের পরেই ১৯১৪ সালে অনুরূপ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষের অনেক চেষ্টায় হাজার টাকা জোগাড় করে তদানীন্তন ঝিনেদা মহাকুমা প্রশাসক মিঃ এ ক্যাসেল এম,এ,আই,সি,এস এর দ্বারস্ত হন। সেই মহানুভব ইংরেজ মহকুমা প্রশাসক পুরাতন বিদ্যালয় সংলগ্ন জায়গা ক্রয় করে নিজ তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করলেন একতলা অট্টালিকা। পরর্তীতে সেই একতলার উপর দোতালা নির্মিত হয়েছে। দ্বিতল গৃহটী বেশ সুন্দর- পথিকের মনকে সহজেই আকৃষ্ট করে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির মোট জমির পরিমাণ ৬.৫৪ একর। এখানের রয়েছে ১৫ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন, ৩ কক্ষ বিশিষ্ট কম্যুনিটি স্কুল, স্কুল সংলগ্ন আধাপাকা মসজিদ, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন ও ছাত্রাবাস।
১৯৬৭-৬৮ সালে স্কুলটি বহুমুখী পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত হয়। স্কুলটির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকরূপে যারা কাজ করেছেন তাদের কর্মকাল ও যোগ্যতা নিম্নে দেওয়া হলো: ১) ১৮৯৪-১৮৯৬ বাবু ক্ষেত্রমোহন গাঙ্গুলী, এম, এ, (ডবল), ২) ১৮৯৬-১৯৩৬ বাবু পরশ নাথ মজুমদার (বি.এ), ৩) ১৯৩৬-১৯৪০ বাবু হরেন্দ্র মুখার্জী, (এম.এ. বি.এল), ৪) ১৯৪০-১৯৬০ বাবু প্রমদাভূষণ স্যান্যাল (বি.এ), ৫) ১৯৬১ বর্তমানে, মৌঃ মোঃ আবু বকর এম, এ, (ডবল) এম-এড। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদই বিদ্যালয়ের কাঠামো। পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সব সময়ই থাকতেন পদাধিকার বলে সরকারী কর্মকর্তা এবং সম্পাদকের পদটিও বিশেষভাবে প্রনিধান যোগ্য। এই পদে থেকে যারা স্কুলটির শুরু থেকে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন সত্যিই তাঁরা বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার, নিম্নে ক্রমানুসারে তাদের নাম দেওয়া হলো:
১) বাবু হরিচরণ সাহা, ২) ডাঃ শশধর চট্টোপধ্যায়, ৩) বাবু মতিলাল সাহা, ৪) পরেশ মজুমদার, ৫) রামচন্দ্র সাহা, ৬) ডাঃ গৌরপদ রায়, ৭) মৌঃ মোঃ মানিক খান এবং ৮) মৌঃ মোঃ মোশাররফ হোসেন।
তথ্য সূত্র :
শিক্ষালয়ের ইতিকথায় যশোর
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান বিপুল