
Home সাহিত্যিক / Litterateur > তারক সরকার / Tarak Sarkar (1838-1905)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 91289 বার পড়া হয়েছে
তারক সরকার / Tarak Sarkar (1838-1905)
তারক সরকার
Tarak Sarkar
Home District: Narail, Lohagara
পারিবারিক পরিচয়ঃ
ভারত ও বাংলাদেশের বিখ্যাত কবিয়াল তারক সরকার বর্তমান নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ে কাড়াল গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তারকের জন্ম সাল বাংলা ১২৪৫ মোতাবেক ইংরেজি ১৮৩৮। তারকের পিতার নাম কাশীনাথ কাড়াল। তিনি কবিয়াল পেশায় ছিলেন, তাকে সবাই কাশীনাথ সরকার বলতো।
বাল্য ও কৈশরঃ
তারক সরকারের পিতা বছরের অধিকাংশ সময় গ্রামের বাইরে অবস্থান করতেন। মায়ের যত্নেও ভালোবাসায় জয়পুর গ্রামের নবগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে তারক সরকার বেড়ে ওঠেন। ছোট বেলায় তার মধ্যে অসম্ভব মেধা ও বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। গুরুচাঁদ গ্রন্থ রচয়িতা মহানন্দ হালদার তারকের পরিবার পরিবেশ সন্বন্ধে লিখেছেনঃ
‘কাশী করে কবিগান দেশে দেশে পায় মান
জন্ম অন্ধ ছিলেন শম্ভনাথ,
ঢাকা কিংবা কলিকাতা, কাশী যায় যথাতথা
গানে মত্ত ছিল দিন রাত।।’
শিক্ষাজীবনঃ
তারক সরকার কোন পাঠশালা কিংবা টোলে পড়া শুনা করেছেন তা তার জীবনীকারেবা লেখেন নি। তবে তিনি যে, বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি অধ্যয়ন করেছিলেন তা তার রচনাবলী থেকে সাধারণ ভাবেই অনুমান করা যায়। আবার এটাও সত্য লক্ষ্মীপাশা ও কালিয়া অতি প্রাচীন শিক্ষিত মানুষের বাসস্থলী। এখানকার টোল কিংবা পন্ডিতি পাঠশালায় তারক অধ্যয়ন করতে পারেন বলেও ধারণা করা অমূলক নয়।
কবিগান শিক্ষাঃ
তারকের কবিগান শিক্ষা ও কবিগানের প্রতি অনুরাগ জন্মে ছিলো তার পিতার কাছ থেকে। পিতার আন্তরিকতাই তিনি কবিগানে প্রয়োগ করেছিলেন। কবিগান শিক্ষার বিষয়টি তিনি গ্রহণ করেছিলেন পিতা কাশানাথ সরকারের কাছ থেকে। তবে তার ধর্মীয় গুরু মৃত্যুঞ্জয় মুত্যুঞ্জয় তারককে কবিগান শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহিত করেন।
তারক সরকার মতুয়া উপম্প্রদায়েরও একজন গুরু ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে কবিগান পরিবেশন করেছিলেন। তারক সরকার কবিগানের বিভিন্ন উপাঙ্গ রচনা করে দুই বাংলার কবিয়ালদের নমস্য হয়েছিলেন। আজও তার রচিত ডাক, মালসী, ভবানীবিষয়ক, কবিগান লোকমুখে ও আসরে পরিবেশিত হয়ে থাকে। তারক সরকার শুধু সার্থক কবিয়ালই ছিলেন না তিনি বাংলাদেশও বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন কবিগানের আসর সৃষ্টি করে কবিগানের স্থায়ীত্বের জন্য যে কাজ করেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। সার্থক কবিয়াল তারক সরকারকে কালিয়ার পন্ডিতসমাজ ‘কবিরসরাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারক সরকারের সার্থক কবিয়াল শিষ্য গোপালগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামের মনোহর সরকার। এই কবিয়াল মনোহর সরকারের শীষ্য হলেন যুগান্ধর কবিয়াল বিজয় সরকার। কবিগান ছাড়াও তারক সরকারের রচিত দুইখানি গ্রন্থ মতুয়া সমাজের অতি প্রয়োজনীয়। এই দুই গ্রন্থ হলোঃ ১. হরিলীলামৃত ও ২. হরিসংকীর্তন।
কবিয়াল তারক সরকার ৭৬ বছর বয়সে বাংলা ১৩১২ সাল মোতাবেক ১৯১৫ সালে ইহধামত্যগ করেন। এবার আমরা কবিয়াল তারক সরকারের "স্বপ্ন বিলাস" কবিগানের অংশ বিশেষ উদ্ধতি করছিঃ
‘নিশীথে স্বপ্নাদেশে নন্দরাণী নন্দ রাজার কাছে কেঁদে বলতেছে
নন্দ বলবো কী আমি দুখিনী।।
শেষ নিশীথে দেখেছি স্বপন, শুনো জানাই স্বপ্নের বিবরণ
হায় গো তোমায় কী বলবো নন্দ, পেয়েছিলাম প্রাণগোবিন্দ
হলো কি আনন্দ, কপাল মন্দ-
আমার সে আনন্দ বিসর্জন।।
কোলে পেয়ে শ্যামত্রিভঙ্গ হেলায় নিন্দ্রাভঙ্গ
আজ নিশীতে দেখতে দেখতে সেই চন্দ্রবদন আর দেখলাম না।।
নন্দ নিশির শেষে দেখেছি স্বপ্নাদেশে প্রাণের কেলেসোনা।।
আমার বক্ষের ধন, এই ক্ষণ কোলে বসে মা বলে খেলতেছিল মেতে
হেসে হেসে পেয়ে সেই কালো রতন, করলেম না যতন
মনের মতো দেখতে দেখতে সেই চন্দ্রবদন
আর দেখলেম না।।
তথ্য সূত্র:
বৃহত্তর যশোরের লোককবি ও চারণকবি
লেখক: মহসিন হোসাইন
সংগ্রহ:
কবি মোহসিন হোসাইন