
Home ঐতিহ্য (Tradition) > ঐহিত্যবাহী যশোর জনপদ (আপডেট চলছে)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86898 বার পড়া হয়েছে
ঐহিত্যবাহী যশোর জনপদ (আপডেট চলছে)
বৃহত্তর যশোর জেলায় জেমস ওয়েস্টল্যান্ড জেলা কাক্টের থাকাকালীন সময়ে ১৮৬৯ সালে শুমারির ব্যবস্থা করেন। তিনি গ্রামের সম্পূর্ণ বিবরণ দেয়ার জন্য প্রতিটি গ্রামের গ্রাম প্রধানকে ছাপানো ফর্ম বিলি করেন। গ্রাম প্রধানদের দেওয়া বিবরণ থেকে শুমারি নির্ধারণ করা হয়। উক্ত শুমারি অনুযায়ী জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫,২৪,৮০৭ জন এবং ঘরবাড়ীর সংখ্যা ছিল ২,২৯,৭৪৬ টি। মোট জনসংখ্যার ৮,৩৩,৫০২ জন মুসলমান, ৬,৯০,৯০৮ জন হিন্দু ও ৩৯৭ জন খ্রিস্টান।
১৮৬১ সালের শুমারি অনুসারে যশোর জেলার তৎকালীন মহকুমাসমূহের জনসংখ্যা বিবরণ।
এটি যশোরের ১৯ কিলোমিটার পূর্বদিেক ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত বাসুন্দিরা যেশোরের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। ভৈরব নদীর তীরবর্তী হওয়াতে এখানে বড় বড় নৌযান চরাচল করে থাকে অর্থাৎ এটি হচ্ছে যশোরের একটি প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র। এখানে একটি পোষ্ট ও টেলিগ্রাম অফিস, বাসুন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং একটি মাদ্রাসা আছে। চিনি এবং ধানের ব্যবসা কেন্দ্র হিসাবে স্থানটি খুবই উল্লেখযোগ্য।।
যশোর শহরের উপকন্ঠে এবং শহর থেকে ১১/২ কিলোমিটার দক্ষিণে চাচড়ার রাজবাড়ী অবস্থিত। রাজা প্রতাপাদিত্যেল পতনের পর পরই চাঁচড়া জমিদার বংশ বিখ্যাত হয়ে উঠে এবং রাজা উপাধি লাভ করে। চাঁচড়ার জমিদারদের সময় রাজবাড়ীতে বহু অট্রালিকা ও মন্দির নির্মিত হয়। সপ্তদশ অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত মন্দির ও ইমারতগুলি প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মন্দিরগুলির মধ্যে দশমহাবিদ্যা মন্দির, শিব মন্দির ও জোড় বাংলা মন্দির উল্লেখযোগ্য।
আয়তন ও সীমানা:- ২৩'৪৭ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯'৫০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত যশোর হচ্ছে জেলার সদর শহর। এর আয়তন ৪৩৬'৮ বর্গ কিঃ মিঃ। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্রডগেজ অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেশন যা একদিকে খুলনা এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গীয় জেলাগুলিকে সংযোগ করেছে। এর উত্তরে ভৈরব নদী এবং নোয়াদা গ্রাম, পাঙ্গালান্দা ইত্যাদি মৌজা, পূর্বে মোবরকহাট এবং চাঁচড়া মৌজা, পশ্চিমে মৌদাখালী, খোলাডাঙ্গা ও আরবাপুর মৌজা দ্বারা বেষ্টিত। ১৮৬৪সালে ৪'৫ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে এখানে একটি পৌরসভা গঠন করা হয়। যশোর শহর ব্যতীত গোপী পুরাতন কসবা ইউনিয়ন কমিটি, বারান্দী ইউনিয়ন কমিটি, বেজপাড়া সংকরপুর ইউনিয়ন কমিটি, চাঁচড়া ইউনিয়ন কমিটি এবং যশোর সেনানিবাস এর অন্তর্গত। এটি ছিল প্রাক্তন যশোর থানা সদর দপ্তর যার অধীনে ১৫টি ইউনিয়নের ২৬২টি গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে যশোরের জনসংখ্যা ২২৪৬৭০৬জন। শহরের আবহাওয়া সমভাবাপন্ন গ্রীষ্মে সাধারণতঃ ৯৮ফারেনহাইট এবং শীতকলে ৫০০ ফারেনহাইট তাপমাত্রা উঠা নামা করে। তুলনামূলক ভাবে দেশের পূর্বাঞ্চলের চেয়ে এই জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। বৎসরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯৬'৫৬ ও সর্বনিম্ন ২৮'৫৯ ইঞ্চি।১
জনসংখ্যা:- ১৯৯১সনের আদমশুমারী অনুযায়ী শহরের বর্তমান লোকসংখ্যা ১৭৬৩৯৮জন। ১৯৮১সনের আদমশুমারী অনুযায়ী মুসলিম ৪০'৩%, হিন্দু ১৯'৬% এবং অন্যান্য ag©ej¤^x ০.১%।
¯^viZvi হার শতকরা ৪০জন যা আনুপাতিক হারে ভাল বলা চলে। এর কারণ হচ্ছে শহরে অবস্থিত বিভিন্ন পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যশোরের মাইকেল মধুসুদন কলেজের এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এই ডিগ্রী কলেজটি ১৯৪১সনে স্থাপিত হয় এবং ১৯৬৮সালে সরকারী করণ করা হয়। ক্রীড়া এবং খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য একটি ষ্টেডিয়াম আছে। যশোর বহু বিখ্যাত ফুটবলারের জন্য দিয়েছে যারা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে জয়ের সারথী হিসাবে সম্মান অর্জন করেছে। মাইকেল মধূসুদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাড়া শহরে আরও অনেক উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী কলেজ আছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সরকারী এম,এম,কলেজ, সরকারী মহিলা কলেজ, সরকারী সিটি কলেজ, বাঘারপাড়া কলেজ, শহীদ মশিয়ুর রহমান কলেজ, কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ, চৌগাছা কলেজ, মনিরামপুর কলেজ, নোয়াপাড়া কলেজ ইত্যাদি। বাংলাদেশের চারটি মাধ্যমিক উচ্চ ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে একটি যশোরের অবস্থিত। এই যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধমিক বিার্ড ¯^Zš¿ বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বাল। বোর্ডের যাত্রা শুরু ৭ই অক্টোবর ১৯৬৩ইং।২ কাজ শুরু হয় যশোর জুনিয়র ট্রেনিং কলেজ (বর্তমান শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়) ভবনের একংশে। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ৩৩/১৯৬১ শিক্ষা অধ্যাদেশবলে বিভাগীয় বিন্য্যালে বোর্ড গঠনের পরিকল্পনা ধরেই খুলনা বিভাগের বোর্ড স্থাপিত হয় যশোরে। শেখহাট ও কিশমত নওপাড়া মৌজার ৮'২০একর জমিতে ২কোটি টাকা ব্যয়ে বোর্ডের নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়। ১৯৬৪সন থেকে এটি অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করে আসছে। যাত্রাকাল থেকে এ যাবৎ ১৭জন টেয়ারম্যান বোর্ডের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন ডঃ আবদুল হক।৩ এই বোর্ড বৃহত্তর যশোর ও খুলনার অন্তর্গত সকল কেন্দ্রের মাধমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাসমূহ পরিচালনা করে থাকে।
এখানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৯০টি, বেসরকারী বিদ্যালয় ৩১২টি, জুনিয়র হাইস্কুল ৭৬টি, হাইস্কুল ২০৭টি এবং ৪২টি গার্লস হাইস্কুল আছে।
অফিসসমূহ:- এখানে জেলা শহরের সকল সরকারী অফিসসমূহ স্থাপিত রয়েছে। দেওয়ানী আদালতের সন্নিকটে একটি বহু পুরাতন সার্কিট হাউস অবস্থিত। অধিক ব্যক্তির থাকার সংস্থান m¤^wjZ ও উন্নতমানের পরঃ নিস্কাশন ও অন্যান্য সুবিধাদিসহ একটি নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। সাবেক ওয়াপদার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় একটি রেস্ট হাউস আছে। সেখানে বেসরকারী ব্যক্তিগণও অনুমতি নিয়ে অবস্থান করতে পারেন। যশোর জেলা হাসপাতালের বর্তমানে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া ফাতেমা ক্যাথলিক হাসপাতাল শিশু, পরিচর্যা ও প্রস্তুতি কেন্দ্র, পুলিশ হাসপাতাল এবং জেল হাসপাতাল আছে। বিনোদনের জন্য শহরে টাউন ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব, টাউন হল লাইব্রেরী ইত্যাদি আছে। টাউন ক্লাবে সাধারণত সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠানসমূহ অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভার মাধ্যমে Rb¯^v¯’¨, পানি সরবরাহ, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, প্রাথমিক শিক্ষা, জল ও পয়ঃ নিষ্কাশন ইত্যাদি পরিচালিত হয়ে থাকে। নাগরিকদের পানীয় জল সরবরাহের জন্য শহরে পানি প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প আছে। পি, ডি, বি, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া যশোর একটি কার্যকারী অন্যতম বৃহৎ শস্য বহুমুখীকরণ খামার আছে যা ১৯৪৭সালের পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যোগাযোগ:- দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে ‘যশোর বেঙ্গল এয়ার ফোর্সের’ সদর দপ্তর ছিল। সে সময় শহরের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। দেশ বিভাগের পর শহরের ৫মাইল উত্তরে একটি প্রথম শ্রেণীর সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা মহরের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি বরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন সময়ে যশোর শহরের নিকট একটি বিমনি বন্দর স্থাপন করা হয় এবং পরবর্তীতে এর যথেষ্ট উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। এটি বাংলাদেশ বিমানের একটি গরুত্বপূর্ন বিমান বন্দর। এই বিমান বন্দরটি যশোর, খুলনা এবং নিকটবর্তী শহরসমূহের যাত্রীগণ ব্যবহার করে থাকেন। খুলনা, দৌলতপুর, কালীগঞ্জ, দর্শনা, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও নড়াইলসহ আরো বহু গুরুত্বপুর্ণ বাৎসরিক এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সাথে যশোরের উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। শহরের অভ্যন্তরেও প্রথম শ্রেণীর পাকা রাস্তা আছে। যেমন যশোর রোড, হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড, সুভাষ রোড, চিত্তরঞ্জন রোডম ষ্টেশন রোড, রেল রোড ইত্যাদি। সকল থানা শহরের সাথেও যশোরের উন্নত পাকা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্তমান আছে। এছাড়া ডাক ব্যবস্থাসহ যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে এ জেলায় সরাসরি টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থাও কার্যকরী রয়েছে।১
যশোর শহরে বর্তমানে পূর্বের তুলনায় বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিখ্যাত যশোরের চিরুনী, বোতাম, মাদুর, ইত্যাদি তৈরীর একটি কারখান আজ হইতে প্রায় পঞ্চাশ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ জাতীয় আরো বহু কারখানা গড়ে উঠেছে। চিরুনী এবং বোতাম ছাড়া পাট, নারিকেল, চামড়া এবং হাতে বোনা কাপড় এ এলাকায় ব্যবসায় প্রধান পণ্য সামগ্রী। যশোরে খেজুর পাতা হতে উৎপাদিত দ্রব্যও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যশোরের খেজুর গুড় খুবই বিখ্যাত। এছাড়া যশোরের নকশী কাঁথায় জনপ্রিয়তা সর্বজনবিদিত। এর জনপ্রিয়তা ¯^‡`k পেরিয়ে বিদেশেও প্রসার লাভ করেছে এবং এর মাধমে বাংলাদেশ বহু বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে। শহরের উত্তরে মোবারকগঞ্জে চিনি শিল্প গড়ে উঠেছে।১ এ শিল্প গড়ে উঠার পেছনে স্থানীয় কাঁচামালে সহজলভ্যতাই প্রধান কারণ। যশোরে প্রচুর ইক্ষু উৎপাদিত হয়ে থাকে। তাছাড়া যশোর জেলার সিদ্দিপাশা ও মমিন নগড় এলাকায় তাঁত এবং নাভারণ এলাকায় বিড়ি শিল্প বিশেষ ভাবে বিকাশ লাভ করেছে।২ এছাড়া যশোরে ঘানি শিল্প, কাতা শিল্প (নারকেলের ছোবরার তৈরী দড়ি যা দিয়ে ঘর বানানো হয়), মৃৎ শিল্প, ঢেকি শিল্প, টাবুরে (মাঝি শ্রেণী) শিল্প, বাঁশ ও বেত শিল্প যথেষ্ট প্রসার লাভ করেছে। সমগ্র বাংলাদেশে নামকরা ইকোনো বলপেন, জিকো বলপেনের কোম্পানীও যশোরেই অবস্থিত।
মাজার, মসজিদ ও মন্দির:- যশোর জেলায় অনেক পীর ফকিরদের মাজার রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পুকুর ও দীঘি। হিন্দু ও মুসলিম উভয় যুগের নিদর্শনই এখানে মোটামুটি পাওয়া যায়। পীর ফকিরদের মাজার ছাড়াও এখানে অনেক মসজিদ, মন্দির এবং একটি খ্রিস্টান গীর্জা আছে। ১৮৪৩সনে খ্রিস্টান গীর্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন জজ সাহেব মিঃ বেন্টহল নীলকরদের নিকট হতে চাঁদা এবং কায়েদিদের শ্রম দ্বারা এটি নির্মাণ করেন। একই ভাবে যাজকদের একটি বাসভবন ও নির্মিত হয়। মিঃ জেফর ছিলেন প্রথম জাজক যিনি ১৮৪৬ থেকে ১৮৫৬সন পর্যন্ত এই ভবনে অবস্থান করেন। মিঃ জেফর গীর্জাটির বিভিন্ন দিকের উন্নতি বিধান করেন। শহরে দুটি খ্রিস্টান কবরস্থান আছে।
শিক্ষা দিক্ষায় সর্বাধিক অগ্রসর জেলাগুলির মধ্যে যশোর ছিল অন্যতম। এক্ষেত্রে যশোর পাবলিক লাইব্রেরীর অবদান উল্লেখযোগ্য। বেসরকারী উদ্যোগে যশোরের জেলা কালেক্টর আর,সি,রেক্স ১৮৫৪সনে যশোর পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও তখন ইংরেজী পড়ার মত লোক সমগ্র যশোর ছিল মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন। যশোর পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার পরের বছর ভারতে ইংরেজী শিক্ষা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। যশোরে পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার জন্য রেক্স সাহেব দুটি কারণে উদ্ধুদ্ধ হন। প্রথমতঃ বিলেতে তখন পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার জন্য পার্লামেন্টে লাইব্রেরী এ্যাক্ট পাশ হয়েছে। এতে রেক্স অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ কর্মক্ষেত্রে পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হন। দ্বিতীয়তঃ বিলেত থেকে আসা সাহেব আর সামান্য ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত স্থানীয় ব্যক্তিদের অবসর বিনোদনের জন্য তিনি পাবলিক লাইব্রেরী স্থাপনে সচেস্ট হন। কিন্তু সরকারী খরচে লাইব্রেরী স্থাপন সম্ভব ছিল না বিধায় তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সে কালের বিত্তবান শ্রেণীর কাছ থেকে লাইব্রেরীর ভবন নির্মাণ ও পুস্তক ক্রয়ের অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। কয়েকজন নীলকর সাহেব এবং নলডাঙ্গা ও নড়াইলের জমিদাররা এই লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠায় অর্থ সাহায্য দেন। ১৮৪৫সনে যশোর পাবলিক লাইব্রেরী নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়।৩ ১৮৬৪সনেই যশোরে পৌরসভা স্থাপিত হলে পাবলিক লাইব্রেরী ভবনেই পৌর কমিশনারগণ সভা করতেন। যশোরে এই পাবলিক লাইব্রেরীর সেই আদি ভবনটি কোথায় ছিল তা এখন আর জানা যায় না। প্রথম দিকে এটি ছিল একটি ছোট প্রতিষ্ঠান। সদস্যদের চাঁদায় এর ব্যয় নির্বাহ হত। এটি শুধুই বই পড়ার জায়গা ছিল না, ছিল অবসর বিনোদনের কেন্দ্রও। বহুকাল যাবত অবসর বিনোদনের কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হবার পর ১৯০৯সনে টাউন হল নির্মিত হলে পাবলিক লাইব্রেরীকে টাউন হলে স্থানান্তর করা হয়। লাইব্রেরীর কলেবর বৃদ্ধির সাথে সাথে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে যশোরে একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত হল টাউন ক্লাব এবং আর্য থিয়েটার। এছাড়া মাইকেল ইনিস্টিটিউট সাংস্কৃতিক সংগঠনও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
নিউ আর্য থিয়েটারের জন্য ১৯২১সনে নির্মিত হল বি,সরকার মেমোরিয়াল হল। ১৯২৭সনে লোহগড়ায় মজুমদার পরিবারের যদুনাথ মজুমদারের উদ্যেগে পাবলিক লাইব্রেরী, নিউ আর্য থিয়েটার এবং টাউন ক্লাব একত্রিত হয়ে একটি পরিপুর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠে। এভাবেই ১৯২৮সনে প্রতিষ্ঠিত হল যশোর ইনিস্টিটিউট এবং পাবলিক লাইব্রেরী এর অংগ সংগঠনে পরিণত হয়। ফলে পাবলিক লাইব্রেরীর পরিপুর্ণ নাম হল যশোর ইনিস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী এবং বি সরকার মেমোরিয়াল হলের বর্তমান নাম হল তসবির মহল সিনেমা যা হচ্ছে ইনিস্টিটিউটের নিয়োমিত আয়ের একটি প্রধান উৎস।১
বর্তমান যশোর শহরের উত্তরাংশ এককালে মুড়লী কসবা নামে পরিচিত ছিল। মুড়লী একটি প্রাচীন স্থান। আর্যদের প্রভাবে মুড়লী একটি শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত হয়। মুড়লীর ধ্বংসস্তুপের মধ্যে প্রাচীনকালের অনেক দেবালয়ের অস্তিত্বের প্রমান পাওয়ায় মনে হয় স্থানটি মহাভারতীয় যুগথেকে প্রতিষ্ঠিত। কালক্রমে হিন্দু সভ্যতার ক্রমাবকাশের সংগে সংগে এই স্থানটির আরও উন্নতি লাভ করে। প্রাচীনকালে মুড়লী ছিল গাঙ্গেয় উপদ্বীপের একটি বিরাটকায় চর যা বকচর নামে পরিচিত ছিল। তখন যশোর শহরের নামকরণ হয়নি। সুলতানী আমলে বর্তমান যশোর এলাকার বেশীর ভাগ মুড়লী কসবা নামে পরিচিত ছিল। বৃটিশ আমলে এসব স্থান যশোর নাম ধারন করে। প্রাচীন কালে চার পাঁচ মাইলব্যপী বিস্তৃত ছিল বলে জানা যায়। এই এলাকায় যে প্রচীন হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ীর কাছে একটি পদ্ম পুকুর খননের ফলে আবিস্কৃত বিষ্ণুমূর্তির মাধ্যমে।২ এছাড়াও এখানে একটি প্রচীন বৌদ্ধ স্তুপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এই বৌদ্ধ স্তুপের দক্ষিণধারে একটি সুন্দর পাকা কবর আছে যা উলুঘ খান জাহানের সহচর পীর বাহরাম শাহের। এছাড়াও প্রচীন মুড়লীতে জগন্নাত দেবের মন্দির, আধুনিক যুগের বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির দেবালয়, আখড়া ইত্যাদি আবিস্কৃত হয়েছে। মুড়লী ইমাম বাড়ী হাজী মোহম্মদ মহসীনের কীর্তি ঘোষনা করছে।৩
মুরলী কসবা নাম করণ:- মুড়লীতে মধ্যযুগে সৈন্যনিবাস ছিল। এখানকার মৃত্তিকা গর্ভে ছিল একটি সুরক্ষিত কেল্লা। আজ আর তার কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। লোকে এখনও এই বসতবাটিকে কেল্লাবাটি বলে অভিহিত করে। তুর্কি-আফগান আমলে পীর উলুঘ খান জাহান আলী বারো বাজার থেকে মুড়লীতে এসে ইসলাম প্রচারের জন্য একটি কেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি মুড়লীতে বেশীদিন অবস্থান করেননি, যার ফলে এখানে তার কোন কীর্তি দৃষ্ট হয়না। উলুঘ খান জাহান আলীর দুই সহচর বাহরাম শাহ ও গরীব শাহ যে স্থানে আস্তানা করে ছিলেন তার নাম হয় কসবা কসবা অর্থ বাজার। তৎকালে এদেশের অধিবাসীরা মুসলমান পীর ফকিরদের অলৌকিক কার্যকলাপে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে ভির জমাতে এবং দরবেশরা জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদেরকে আস্তানায় আশ্রয় দিতেন। ফলে স্থানটির লোক সমাগমে জমজমাট থাকত বলে পরবর্তী কালে এটি বাজারের রূপধারণ করে। যে জন্য এর নাম হয় কসবা। এই কসবা শহরে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন বাহরাম শাহ এবং গরীব শাহ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এখনও লোকে তাদের দরগায় সিন্নী দেয়, মানত করে।
যশোর নামকরণ:- বৃটিশ শাসনামলের প্রাথমিক পর্যায়ে মুর্শিদাবাদের নবাব সরকারের পতনের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোস্পানি বাংলাদেশের দেওয়ানী লাভ করে, তখনও মুড়লী জেলা সদর থাকাতে যশোরের প্রথম জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ টিলম্যান হ্যাংকেল এখানের একটি পুরানো বাড়ী সংস্কার করে তার বাসস্থান রূপে ব্যবহার করতে থাকেন। তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরী রিচার্ড রোক ১৭৮৯খ্রিঃ মুড়লীর পরিবর্তে সাহেবগঞ্জে জেলা সদর স্থানান্তর করেন। তখন এই স্থানের নাম যশোর রাখা হয়। (সাহেবগঞ্জ নামটি ব্যবহৃত না হলেও এখনও মাঝে মাঝে কসবা যশোর নামটি শোনা যায়)। এ সময় থেকেই হিন্দু, বৌদ্ধ ও পাঠান আমলের এই প্রচীন নগরটির গুরত্ব লোপ পেয়ে µgvš^‡q বিরল হয়ে পরে।
এক শতাব্দরি উপর পর্যন্ত যশোর শহরটি A¯^v¯’¨Kiiƒ‡c পরিচিত ছিল। ১৮০০সনে স্থানটির বর্ণনা ছিল এমন “সব জঙ্গল, গাছ এবং বাঁশ”। জায়গাটি স্যাঁতস্যাঁতে, আবহাওয়ায়ও A¯^v¯’¨Ki| যেখানে সেখানে বন বাদাড়, ঝোপঝাপ, বাঁশবাগান, বদ্ধজলাশয়, আধমরা ভৈরবে মশার বনেদী আড্ডা, ম্যালিরিয়ার উৎস মুখ। এখানে এসে তৎকালীন কালেক্টর উইলক আর পার্কার সাহেব অসুখে পড়ে লোকন্তরিত হন। ফলে যশোরের বদনাম আরও বেড়ে যায় এবং বহুদিন পর্যন্ত এটি A¯^v¯’¨Ki জায়গা হিসাবে কুখ্যাত ছিল। শুধু উনবিংশ শতকেই নয়, বিংশ শতকের তৃতীয় দশক পর্যন্ত যশোরের লোকজন প্রকৃতির উপর ছিল নির্ভশীল। যশোরের সংগ্রামী জনগোষ্ঠী প্রকৃতির উপর ন্যস্ত ¯^v¯’¨ ব্যবস্থা অতিক্রমের জন্য ১৯২২সালে প্রতিষ্ঠিত করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুল ও হাসপাতাল। উপমহাদেশে তখন এই চিন্তা করাও কঠিন ছিল। পরবর্তীকালে ১৮৬০সনের ধারা-২১বলে যশোর মেডিক্যাল ইনিস্টিটিউট সরকারী ¯^xK…wZ লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটি জন জীবনে আসার সঞ্চার করে। অনেক তরুন সমাজসেবী মানবতার সেবার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। অনেকে ডাক্তারী পেশায় আসার জন্য এই ইনিস্টিটিউটে ভর্তি হন। এর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি বছর জেলার জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছিল। এর কারণ ছিল ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ও বসন্তে অগনিত মৃত্যু। বিংশ শতকে এসে সমাজের বিত্তবানেরা উদ্যেগ গ্রহন করলেন দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠার। এ উদ্যেগে জেলা বোর্ডের ভূমিক ছিল লক্ষনীয়। লোহাগড়া wcZ¯^i ডিস্পেনসারী ছিল জেলার একটি প্রাচীন চিকিৎসালয়। এর প্রতিষ্ঠাকাল ১৯০৩সাল। যশোর শহরের লব্ধ প্রতিষ্ঠিত প্লিডার বাবু প্রফুল্ল কান্তি রায়ের একমাত্র পুত্র শ্রীমান শিব-প্রসাদ রায়ের অকাল মৃত্যুই চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠার পিছনে প্রধান ভূমিক রেখেছিল।
যশোর হাসপাতাল বেসরকারী চাঁদার তৈরী হয় ১৮৬৭সনে। এই হাসপাতালের প্রধান ভবন বিংশ শতাব্দীর গোড়াতেও টিনের তৈরী ছিল। পিতার স্মৃতিকে অমল্যান রাখার জন্য রঘোটিয়া জমিদার বংশের শ্রীকালিপদ ঘোষ হাসপাতালের প্রধান ভবন তৈরী করে দেন। যশোর (ঢ-জধু ঢ়ষধহঃ) এর প্রাণদান করেন স্যার এম, সিবোর্ণ ১৯৪৯সনে। ভবণ নির্মাণ করেন চব্বিশ পরগণার ইছাপুরের খ্যাতনামা মেসার্স বি,কে,মন্ডল এন্ড সন্স। ১৯৩৮সনে সাধুহাটি ইউনিয়ন দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯সনে প্রতিষ্ঠিত হয় চুড়ামনকাঠি ইউনিয়ন বোর্ড দাতব্য চিকিৎসালয়। এইসব চিকিৎসালয়গুলি এককও যৌথভাবে পরিচালিত হতো। পরবর্তীকালে ডিসপেনসারীগুলি জেলাবোর্ড ও জেলা কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত হতো। সমপ্রতি এগুলি সরকার পরিচালন করছেন।
জল নিষ্কাশন:-যশোরের চেহারা বদলানোর কাজে তখন যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের মধ্যে বিউফোর্ড অন্যতম। ১৮৫৪সনে ম্যজিস্ট্রেট মিঃ বিউফোর্ড যশোরে অতি কার্যকারী জল নিষ্কশনের সুব্যবস্থা করেন যা ছিল একটি স্মরণীয় পদক্ষেপ। এছাড়া এখানে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছিল দু’টি বড়দীঘি হতে। পানি বিশুদ্ধ করণের জন্য যান্ত্রিক এবং রাসায়ন ব্যবস্থাও গ্রহন করা হয়। বৃষ্টির পানি ভৈরব এবং হরিণা বিলে প্রবাহের জন্য আনুমানিক ৩০কিলোমিটার কাঁচা এবং পাকা নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে বিলটি প্লাবিত হয়ে যেত এবং ভৈরব এমন খরস্রোতা ছিল না যে বৃষ্টির পানি দ্রুত পানি অপসারণ করতে পারে। যার dj¯^iƒc পানি জমিতে প্রবেশ করে পুরো এলাটিকে স্যাঁতস্যাঁতে এবং A¯^v¯’¨Ki করে তুলেছিল। ফলে পৌরসভা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পরে। যার ফল ¯^iƒc ১৮৬৪ যশোর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৮৫সানে যশোর পৌরসভার প্রথম ত্রদেশীয় চেয়ারম্যান হন পিয়ারী মোহন গুহ, যিনি ছিলেন যশোরের খ্যাতিমান আইনজীবি। পরবর্তী কালে এই পৌরসভা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যশোরের প্রভূত উন্নতি সাধন করা হয়।