
Home ঐতিহ্য (Tradition) > ঐতিহ্যবাহী ঝিকরগাছা জনপদ
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86816 বার পড়া হয়েছে
ঐতিহ্যবাহী ঝিকরগাছা জনপদ
ঝিকরগাছা শহরে একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, একটি টেলিগ্রাফ অফিস, একটি প্রত্যাহিক বাজার এবং দুটি বড় সাপ্তাহিক হাট বসে যার মেধ্য একটি গরু ছাগল বিক্রির জন্য বিখ্যাত। ঝিকরগাছার প্রধান শস্য হচ্ছে ধান, পাট, ছোলা ও ইক্ষু। এটি গুড় উৎপাদন এবং পাটের বাজার হিসাবেও বিখ্যাত। দেশ বিভাগের পূর্বে কলিকাতার পাটকলগুলো। এখানকার সরবরাহের উপরই প্রধানত: নির্ভর করত। বর্তমানে এটি খুলনার পাটকলগুলিতে পাট সরবরাহ করে থাকে।
থানা পর্যায়ের সকল অফিস ঝিকরগাছায় অবস্থিত। এখানে একটি সাব রেজিষ্ট্রী অফিস, একটি ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিস, একটি ইউনিয়ন কমিউনিটি সেন্টার এবং একটি পশু পালন অফিস এবং একটি ছোট জেলা পরিষদ বাংলো আছে। ঝিকরগাছা পাবলিক ইনস্টিটিউট নামে একটি গণকেন্দ্র আছে যেখঅনে চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা হিসেবে একট পাঠাগার এবং পার্ক আছে। এছাড়া ছেলে ও মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় আছে যার মধ্যে একটি অবৈতানিক।
অমৃত বাজার:- অমৃত বাজার ছিল প্রাক্তন যশোর মহকুমার একটি গ্রাম যা ঝিকরগাছার আট কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ছিল। এটি ঝিকরগাছার সাথে জেলা বোর্ডের একটি রাস্তা দ্বারা সংযুক্ত। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে অমৃতবাজার গ্রামের ঘোষ বংশীয় একজন জমিদার তার মাতা অমৃতার নামানুসারে একটি বাজার ও ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৮৬৮খ্রিঃ অমৃতবাজার নামে একটি বাংলা সংবাদ পত্রের প্রকাশনা শুরু করেন। এই পরিবারের পরবর্তী জমিদার তুষার কান্তি ঘোষ ঐ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। পরবর্তীতে পত্রিকাটি কলিকাতায় স্থানান্তর করা হয় এবং শিশির কুমার ঘোষের সম্পাদনায় কালক্রমে এটি কলিকতার অন্যতম জনপ্রিয় ইংয়রেজী পত্রিকা হিসাবে পরিগণিত হয়ে আসছে। তুষারকান্তি ঘোষ অমৃতবজার গ্রামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গ্রামটি ছিল বেশ কিছু খ্যাতিমান লেখক এবং সাংবাদিকের বাসস্থান। বর্তমানে অমৃতবাজার নামে ঝিকরগাছায় কোন গ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
ঝিকরগাছা:- ঝিকরগাছা যশেঅরের পনের কিলোমিটার পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত যশোর জেলার একটি শহর। এটি ঝিকরগাছা ইউনিয়নের অন্তর্গত ঝিকরগাছা থানার সদর দপ্তর। এক সময়ে ঝিকরগাছার নম নীলকর ম্যাকানজি সাহেবের নামানুসারে ম্যাকাঞ্জগঞ্জ ছিল। এটি যশোর জেলার একটি সীমান্তবর্তী থানা যার উত্তরে কালীগঞ্জ ও মহেশপুর, দক্ষিণে খুলনা, পূর্বে কতোয়ালী ও মনিরামপুর এবং পশ্চিমে শার্শা থানা ও বনগাঁও (পশ্চিম বঙ্গ ভারত) অবস্থিত। ঝিকরগাছা একদিকে রেল ও সড়ক পথে যশোরের সাথে এবং অন্য দিকে ঘাট। খুলনার দক্ষিনাংশে হতে নদীপথে আনীত পাট ও সুন্দরবনের কাঠ এই ষ্টেশনের মাধ্যমে দৌলতপুর, যশোরের বিভিন্ন এলাকা এবং অন্যান্য জেলায় জ্রেররণ করা হয়। খুলনা জেলার সকল স্থান হতে ঝিকরগাছার উপর দিয়ে বাস, ট্রাক ও ট্ট্যাক্সি চলাচল করে। যশোরের করে। যশোরের ঝিকরগাছা থানার লাউজনী গ্রামে কিছূদিন পূর্বে শহীদ রফিক মিয়ার কবর চিহ্নিত করা হয়। জানা যায় রফিক মিয়া পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর রিুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় ১৯৭১এর ২রা এপ্রিল যশোর শহরতলীর চাঁচড়ায় শহীদ হন। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শহীদ রফিক মিয়ার একমাত্র ভাইসহ এলাকাবাসীরা কবরটি চিহ্নিত করে। এ ছাড়া আরো দু’জন শহীদের কবর চিহ্নিত হয়। এরা হলেন মনিরামপুর থানায় চন্ডীপুর প্রামের শহীদ মুকুল এবং কেসবপুর থানায় শহীদ দৌলত বিশ্বাস। ঝিকরগাছায় শহীদ রফিক মিয়া ছাড়াও আরো দুজন শহীদের কবর চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু এদের নাম জানা যায় নাই। বর্তমানে সবগুলি কবরই সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কবর চিহ্নিত করণের সময় জেলা প্রশাসক, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা m¤^wjZ একটি ফলক প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছে। অচিরেই তা সমাপ্ত হবে।
কায়েমখোলা মসজিদ:- যশোর জেলায় ঝিকরগাছা থানার একটি বধিষ্ণু গ্রাম কায়েমখোলা। এখানে একটি হাইস্কুল, একটি প্রাইমারী স্কুল, ফোরকানীয়া মাদ্রাসা ও একটি বিরাট গ্রাম্যে বাজার আছে। গ্রাম্যটি প্রাচীন আমলের মসজিদ আছে যা কায়েমখোলা মসজিদ নামে খ্যাত। মসজিদটির অবস্থান যশোর কাশীপুর ও ঝিকরগাছা চৌগাছা রাস্তার সংযোগ স্থলের পাশে। ৩ M¤^yR বিশিষ্ট মসজিদটির আয়তন সাড়ে ৩৩দ্ধ১৩হাত। মিনার বিহীন মসজিদের দেয়ালের পুরুষ ......হাত। মসজিদটির সামনের দিকে তিনটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে একটি মেহরাব। মসজিদটি কে কবে তৈরী করে ছিলেন সে সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছুই বলা যায় না। তবে ধারণা করা হয় এটি সুলতানী সে সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছুই বলা যায়না কবে ধারণা করা হয় এটি সুলতানী আমলের তৈরী। বর্তমানে মসজিদটি দ্রুত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ব বিভাগের তত্বাবধানের প্রয়োজন।
যশোর জেলার কালীগঞ্জের সিংহদা আওলিয়া জামে মসজিদটি অবস্থিত। এটি কে কবে তৈরী করেন জনা যায় না। তবে গঠন শৈলীর দিক দিয়ে মসজিদটি পঞ্চদশ শতকের বলে অনুমতি হয়।
মসজিদটির উত্তর দক্ষিণে একটি করে দুটি ও পূর্ব কিে তিনটি মোট পাঁচটি দরজা আছে। মসজিদটি অষ্টকোনাকার। এর অব্যন্তর ভাগের পশ্চিম দেয়ালে দুটি অর্ধবৃত্তকার মেহরাব আছে। দক্ষিণ দিকের মেহরাবটির উপরিভাগ বহুখাজ বিশিষ্ট এবং জ্যামিতিক নকশাযুক্ত একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে আবদ্ধ। মসজিদটির উপরে টিনের চাল দিয়ে বর্তমানে স্থানীয় জনগণ নামাজ আদায় করে। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব Ab¯^xKvh© বিধ্যায় পুরাকীর্তি হিসাবে এর সংরক্ষণের প্রয়োজন।
ব্রাহ্মণনগর:- ঝিকরগাছা হতে আনুমানিক দুই-তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব নাম ছির ব্রহ্মণনগর। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী ছিল।১ ব্রাহ্মণনগরে এক সময় অসংখ্য ইমারত ছিল। এগুলোর ধ্বংসাবশেষ কিছূদিন পূর্বেও দৃষ্টিগোচর হতো। বর্তমানে এর কিছুই অবশিষ্ট নেই। মুকুট রায়ের প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের ভগ্নাবশে লাউজানী প্রামে বিদ্যমান ছিল।২ স্থানীয় অধিবাসীরা এইসব লুপ্ত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে বহু দেবদেবীর মূর্তি উদ্ধার করেছিল। স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে বর্তমানে শুধু একটি উঁচু পাড়যুক্ত বড় দিঘীর অস্তিত্ব আছে। এস্থান হতে কিছুটা উত্তর পূর্ব দিকে বিখ্যাত সাধকগাজীর দরগা অবস্থিত। জথিত আছে এই গাজী ব্রাহ্মণ রাজা মুকুট রায়কে পরাজিত করেন এবং রাজকন্যা চম্পাবতী নিজেও ধর্ম সাধনায় নিজকে নিয়োজিত করেছিলেন। সাতক্ষিরা জেলায় লাবসা গ্রামে তার সমাধি অবস্থিত।৩ গাজী পীরের নামের সংগে সংযুক্ত করে এ স্থানের মাহাত্য প্রচারের কোন ক্রটি নেই একটি অতি জীর্ণ কুটিরে ততো ধিক জীর্ণ অবস্থায় একজন খাদেম তার অস্তিত্বকে কোন রকম টিকিয়ে রেখেছেন।