
Home ঐতিহ্য (Tradition) > ঝিনাইদহ জেলার ঐতিহ্য- আপডেট চলছে
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86893 বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ জেলার ঐতিহ্য- আপডেট চলছে
ঝিনাইদহ যশোরের ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে 23033 উত্তরে অক্ষাংশে এবং 89011 পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত জেলার সদর দপ্তর। যশোরের অর্ন্তগত রেল স্টেশন চুয়াডাংগা হতে এটি ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঐ রেল স্টেশনের সাথে এটি পাকা সড়ক দ্বারা সংযুক্ত। যশোর এবং মাগুরার সাথেও এটি পাকা সড়ক দ্বারা সংযুক্ত। ১৯৯১ সনের আদমশুমারী অনুযায়ী ঝিনাইদহের জনসংখ্যা ১৩,৮৮,৩৯২ জন। এর ইউনিয়নের সংখ্যা ১৭টি এবং গ্রামের সংখ্যা ২৬৯টি।
ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে ঝিনাইদহ মাহমুদশাহী পরগনার নলডাংগা রাজার জমিদারীর সদর দপ্তর ছিল। ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় এটা ভূর্ষণা থানার একটি চৌকি ছিল। ১৭৮৬ সনের ঝিনাইদহ মাহামুদশাহীর কলেক্টরের সদর দপ্তরে পরিণত হয়। এক বছর পর একে যশোর জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৬০-৬১ সনের নীল বিদ্রোহ ঝিনাইদহকে মহকুমা সদর দপ্তর স্থাপনে Zivwš^Z করে। তখন এর অধিকাংশ মাগুড়া মহকুমার অধীনে ছিল। কিন্তু ১৯৮৪ সনের প্রশাসনিক পুনরর্বিন্যাসের ফলে ঝিনাইদহ এবং মাগুরা মহকুমা এখন এক একটি জেলায় পরিণত হয়েছে।
সরকারী অফিস সমূহ ঃ
এখানে জেলা প্রশাসকের অফিস, দেওয়ানী আদালত, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পোস্ট ও টেলিগ্রাফ অফিস, ডিসপেনসারি ও হাসপাতাল এবং পৌরসভা আছে। এ ছাড়া খ্রিষ্টান মিশন, ডাকবাংলো এবং কলেজ আছে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত ক্যাডেট কলেজ ঝিনাইদহে অবস্থিত। মেয়েদের জন্য উচ্চ বিদ্যালয়, ঝিনাইদহ মহিলা কলেজ এবং একটি মাদ্রাসা আছে। ঝিনাইদহে একটি দৈনিক বাজার এবং বাজারের পশ্চিম দিকে হাটখোলায় সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। এখানে একটি কালীমন্দির এবং পাঁচু-পাঁচুই দেবতার তীর্থ মন্দির আছে,যার সম্পর্কে জেমস্ ওয়েস্টাল্যান্ড লিখে গেছেন। এই তীর্থ মন্দির নিঃসন্তান মহিলাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারতো। এক সময় ঝিনাইদহের পাশ্ববর্তী এলাকাসমূহ ডাকাতি ও দস্যূতার জন্য কুখ্যাত ছিল। ঝিনাইদহ হতে ৩৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একট বড় দীঘি এইসব অপরাধীদের প্রিয় আস্তানা ছিল। দীঘিটি চক্ষুকোরা নামে পরিচিতি ছিল।
কালীগঞ্জ ঃ
যশোর হতে ২৮ কিলোমিটার উত্তরে ঝিনাইদহ জেলায় কালীগঞ্জ অবস্থিত। এখানে ঝিনাইদহ সড়ক ১৮৫৩ সনে নির্মিত একটি সেতুর মাধ্যমে চিত্রা নদী অতিক্রম করেছে। এটি কালীগঞ্জ থানায় সদর দপ্তর এবং এর অধীনে ১৪টি ইউনিয়নের ২২৪টি গ্রাম আছে।
এখানে কালীগঞ্জ মাহতাবউদ্দীন কলেজ নামে একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, একটি হাসপাতাল, একটি ডাকঘর এবং পূর্ত অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন বাংলো আছে। এলাকাটি চিনি এবং ধানের ব্যবসার জন্য উল্লেখযোগ্য। এখানে একটি চিনির কল আছে। এই মিলে উৎপাদিত চিনি জেলার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট এবং তার দামও অপেক্ষাকৃত বেশী। কালীগঞ্জে চিত্রা নদীর তীরে মোস্তফাপুর বারুইপাড়া এবং নগর চাপরাইল গ্রামে পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কোটচাঁদপুর ঃ
ঝিনাইদহ থেকে ২৮ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদের তীরে কোর্টচাঁদপুর অবস্থিত। কালীগঞ্জের সাথে এটি একটি পাকা সড়ক দ্বারা সংযুক্ত।
জায়গাটির প্রকৃত নাম চাঁদপুর। নামের সাথে কোর্ট শব্দটির সংযুক্তির কারণ হচ্ছে মূঘল শাসনামলে এখানে একটি সেনাদূর্গ ছিল। নীল বিদ্রোহের সময় এই সেনাদূর্গকে মহকুমার সদর দপ্তর করা হয়। প্রথমে কোর্টচাঁদপুর এবং সুলেখানপুর গ্রামের মধ্যবর্তী একটি স্থান নির্ধারণ করে পরবর্তীতে শহরের পশ্চিমে অন্য একটি স্থান পছন্দ করে সেখানে একটি কাচারী ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১৯৬৩ সনে মহকুমা বিলুপ্ত করে কাচারী ভনটিকে বিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। শহরে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস, ডাক ও টেলিফোন অফিস, ডিসপেনসারী, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং একটি ডাক বাংলো আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্রডগেজ অঞ্চলের আওতায় কোর্টচাঁদপুরে একটি রেলওয়ে স্টেশন আছে। সপ্তাহে দু’দিন এখানে হাট বসে। সেখানে প্রচুর জন সমাগম হয় চিনির মৌসুমে এই বাজার অত্যন্ত জমজমাট থাকে। এখানে বিভিন্ন ধরণের পণ্য সামগ্রি, শাক-সব্জি এবং মাছ-মাংস ক্রয়-বিক্রয় হয়। এছাড়া বরিশাল থেকে আনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ধান এবং চালের কেনা-বেচাও হয়ে থাকে। কোট চাঁদপুরের খেজুরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব সর্বজন বিদিত। ১৮৮৯ সনে এখানে ৭৮টি পরিশোধনাগার ছিল। বিদেশী মালিকানাধীন সব কয়টি পরিশোধনাগার বর্তমানে বন্ধ। তবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চিনি উৎপাদনের জন্য কোটচাঁদপুর প্রসিদ্ধ স্থান।
নলডাংগার রাজবংশ ঃ
নলডাঙ্গা ঝিনাইদহ জেলার একটি গ্রাম। কালীগঞ্জ হতে ৪ কিলোমিটার, ঝিনাইদহ হতে ১৪ কিলোমিটার এবং যশোর হতে ৩২ কিলোমিটার দূরত্বে নলডাঙ্গা অবস্থিত। নলডাঙ্গা ঝিনাইদহ থানা সদরের অর্ন্তভূক্ত।
নলডাঙ্গা গ্রামটি নলডাঙ্গা জমিদার বংশের জন্য বিখ্যাত। এই নলডাঙ্গা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিঞ্চুদাস হাজরা। তিনি প্রবীন বয়সে সন্যাস গ্রহণ করে যশোরের বেং নদীর তীরে ক্ষেত্রগুণী গ্রামের নির্জন বনের মধ্যে তপস্যা করতেন। সেই সময় জনৈক মুঘল সুবেদার রাজমহলে যাবার পথে খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হলে সন্যাসী বিঞ্চুদাস হাজরা তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেন। সুবেদার তার কার্যে খুশী হয়ে e„w˯^iƒc তাকে নিকটবর্তী পাঁচটি গ্রাম দান করেন। তখন হতেই নলডাঙ্গা রাজবংশের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
বিষ্ণুদাস তার পুত্র শ্রীমস্ত দেবরায়কে গ্রামগুলি দেখাশুনার দায়িত্ব অর্পন করেন। শ্রীমন্ত বীরপুরুষ ছিলেন। তিনি নিজের বাহুবলে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি অনুসারণ করে কোটচাঁদপুরসহ মাহমুদশাহী পরগণার অধিকাংশ দখল করে নেন। অত:পর তিনি রাজা মানসিংহের সাথে সাক্ষাৎ করে তার নিকট হতে ‘রণবীর’ খাঁ উপাধি লাভ করেন।
নলডাঙ্গার কীর্তি ঃ
শ্রীমস্ত দেবরায়ের পর তার পুত্র গোপীমোহন এবং গোপীমোহনের পর চন্ডীচরণ জমিদারীপ্রাপ্ত হন। চন্ডীচরণ একজন বিশিষ্ট জ্ঞানপিপাষু, চরিত্রবান এবং প্রতাপশালী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর রীতিমত সৈন্য সামন্ত ছিল এবং তিনি ফিরিঙ্গিদেরকেও তার সৈন্যদলে নিযুক্ত করেছিলেন। চন্ডীচরণ পার্শ্ববর্তী জমিদার কেদারেশ্বরকে পরাজিত করে তার বাড়ীর গোপাল বিগ্রহ এনে নলডাঙ্গাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নলডাঙ্গায়ও বিঞ্চুদাসের সময় প্রতিষ্ঠিত একটি গোপাল বিগ্রহ ছিল। চন্ডীচরণ নিজ বাড়ির পূর্বদিকে একটি সুন্দর জোড় বাংলা নির্মাণ করে তার মধ্যে উভয় গোপালকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তারই সময় চাক্লা নামক স্থানে নলডাঙ্গা কাচারী বাড়ি নির্মিত হয়। চন্ডীচরণ সুবেদার শাহসুজার সাথে নানাবিধ উপঢৌকন নিয়ে সাক্ষাৎ করে তার নিকট হতে খেলাত ও ‘রাজা’ উপাধি পান। তিনিই ছিলেন এই বংশের প্রথম সম্মানিত রাজা।
পঞ্চরত্ন মন্দির ঃ
চন্ডীচরণের পর তার পুত্র ইন্দ্রনারায়ণ রাজা হন। তিনি একটি সুন্দর পঞ্চরত্ন নির্মাণ করে তার নামানুসারে দেবীর নাম ইন্দ্রেশ্বরী রাখেন। কিন্তু বর্তমানে সংস্কারের অভাবে মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এই মন্দিরটি সন্যাসী ব্রক্ষাণ্ডগিরির আদেশে কাশী হতে ভাস্কর এনে প্রস্তুত করা হয়েছিল। এই মন্দিরে কোন লিপি উৎকীর্ণ ছিল না। এর বাইরের মাপ ছিল 39-339-3 এ ছাড়া মন্দিরে একটি দুইফুট উচু প্রস্তর নির্মিত সুন্দর মূর্তি ছিল। এই বংশের অন্য একজন রাজা রামদেবের সময় রামেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ এখনো পরিলক্ষিত হয়।
নবাব আলীবর্দী খানের রাজত্বকালে বর্গীদের ভয়ে বর্ধমানের মহারাজা চিত্র সেন নলডাঙ্গায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং পাগড়ী বদল করে রাজা রঘুদেবের সাথে বন্ধুত্ব করেন। রাজা রঘুদেব তৈলকূপী নামক গ্রামে চিত্র সেনের জন্য পরিখা বেষ্টিত একটি আবাস বাটি নির্মাণ করে দেন। চিত্রসেন এখানে ‘গুঞ্জানাথ’ নামে একটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত করে। এই মন্দির গুঞ্জানাথ শিব মন্দির নামে পরিচিত। এই মন্দ্রিরের বাহিরের মাপ 28-28 ফুট, পূর্ব দিকে এর সদর দরজা। চতুর্দিকে বারান্দা পরিবেষ্টিত, তম্মধ্যে পূর্বদিকের বারান্দা খোলা। সেদিকেই দুটি স্তম্ভের উপর তিনটি খিলান। মন্দিরের নামানুসারে এ স্থানের নাম হয় গুঞ্জানাথ। মন্দিরটি বর্তমানে ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলায় নলডাঙ্গা রাজ পরিবারের অগাধ দান আছে। জনগণের হিতার্থে তারা অনেক অর্থ ব্যয় করেছেন। রাজা প্রথমভূষণ পিতার নামে ইন্দুভূষণ বৃত্তি এবং মাতার নামে মধুমতি বৃত্তি প্রবর্তন করেছিলেন। নলডাঙ্গা রাজ পরিবারের মধ্যে তিনিই একমাত্র সনদপ্রাপ্ত রাজা বাহাদুর ছিলেন। তিনিই প্রথম দেশীয় রাজাদের মধ্যে নীলের ব্যবসা আরম্ভ করেছিলেন। কিন্তু আজ তাদের রাজ প্রাসাদের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। ভাঙ্গা ইটের কঙ্কাল ছাড়া সেখানে আজ আর কিছুই দৃষ্টি গোচর হয় না।
ঝিনাইদহ জেলায় উত্তরাংশে শৈলকুপা থানা থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব হাকিমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত হরিহরা গ্রামের মধ্যমূলে একটি গড় অবস্থিত। এই গড়টি হরিহরার রাজার গড় নামে পরিচিতি। প্রায় দু’বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে এই ভিটার চারদিক দিয়ে পরিখা থাকার কারণে গ্রামের লোকেরা এলাকাকে গড়পাড়া বলে। বর্তমানে এই এলাকায় কিছু কিছু অংশ বাসোপযোগী করা হয়েছে। কয়েকটি ভিটার বসতবাড়ি নির্মাণের সময় মাটি খননকালে অসংখ্য টেরাকোটা এবং প্রচুর পোড়া ইট আবিস্কৃত হয়। এই ইটগুলো আকারে অনেক ছোট। আবিস্কৃত টেরাকোটাগুলো সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। লিখিত ইতিহাস, শিলালিপি তাম্রলিপি কিংবা ঐ জাতীয় এমন কোন প্রত্নতাত্বিক দলিলপত্র আজ পর্যন্ত এখানে পাওয়া যায়নি যা থেকে জানা যেতে পারে যে এই টেরাকোটাগুলো কোন আমলের মনে করা হয়। এইসব টেরাকোটা মুঘল পূর্বযুগের। কারণ হরিহরার গড় টেরাকোটা ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া এগুলির সাথে বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের হোসেনশাহী টেরাকোটার বৈশিষ্ট্যগত মিল আছে। বর্তমানে এইসব টেরাকোটার এবং পোড়া ইটের কোন চিহ্ন কোথাও নেই।
দিগনগরস্তুপঃ
ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু থানার অধীনে দিগনগর নামে একটি গ্রাম আছে। এইগ্রামে একটি প্রাচীন জলাশয়ের কাছে একটি বিরাট ঢিবি আছে। ১৯৮৪ খ্রিঃ ঢিবির উচ্চতা ভূমি থেকে তিন ফুটের বেশী ছিল না। এটি পূর্বে আরো বেশী উচুঁ ছিল। স্থানীয় জনগণ সেখানে চাষাবাদ করার ফলে এর উচ্চতা অনেক কমে গেছে। ঢিবির ভিতরে প্রশস্ত ভিত্তি দেয়ালের অস্তিত্ব এখনো টিকে আছে। ঢিবির চারদিকে বর্তমানে কৃষিক্ষেত্র। সেসব স্থানেও প্রচুর প্রাচীন ইট ও মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ দেখা যায়। তাতে মনে হয় এখানে এককালে বেশ কিছু ইমারতের অস্তিত্ব ছিল। এ স্থানের সঠিক কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে জনপ্রবাদ এই যে, এখানে শালিবাহন রাজার রাজবাড়ি ছিল। তিনি এ স্থান থেকে যশোর পর্যন্ত কড়ি দিয়ে একটি রাজপথ নির্মাণ করেছিলেন বলে শোনা যায়। এই রাজপথ এখনো ‘কড়ির’ জাংগাল নামে পরিচিত এবং সেই জাংগালের কিছু কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো কোথাও কোথাও নজরে পড়ে। দিগল কুম্ভকার নামে পরিচিত এই শালিবাহন রাজা প্রথম জীবনে খুবই দরিদ্র ছিলেন এবং পরবর্তীকালে তিনি নাকি এক A¯^vfvweK উপায়ে বিরাট ঐশ্বর্যের অধিকারী হন এবং শেষ বয়সে পায়রাদহ জলাশয়ে পরিবার পরিজনসহ আত্মহত্যা করেন।
শৈলকুপা মসজিদ ঃ
ঝিনাইদহ সদর থেকে প্রায় ১৬/২০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বদিকে কুমার নদীর তীরে অবস্থিত শৈলকুপা মসজিদ দক্ষিণবঙ্গে সুলতানী আমলের স্থাপত্য কীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। মসজিদটি যেখানে অবস্থিত সে স্থানের নাম দরগাপাড়া উত্তর দক্ষিণে j¤^v এই মসজিদের আয়তন ভিতরের দিকে 311/2-29 ফুট। দেয়ালগুলি ৫১/২ ফুট প্রশস্ত। চারকোনে চারটি মিনার বা টারেট আছে। এগুলো গোলাকার এবং বলয় আকারের ব্যস্ত দ্বারা অলংকৃত। মিনারগুলি মসজিদের অনেক উপরে উঠে গেছে। এগুলোর এই উঁচু রূপটি পরবর্তীকালের না মসজিদ তৈরি সময়ের তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে এ ধরণের কর্ণার টারেট সাধারণত: সুলতানী আমলের মসজিদে দেখা যায় না।
মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ২টি করে প্রবেশপথ আছে। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উভয় পার্শ্বে ১টি সরু মিনার আছে এবং এগুলো কোনের মিনারের চেয়ে কিছু নিচে, মসজিদের কার্নিস ইষৎ বাঁকানো। ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাব পাশের দুটি থেকে আকারে বড়। মসজিদের ভিতরে ২টি প্রস্তর স্তম্ভ আছে। স্তম্ভ দুটি পাঁচফুট উঁচু। এরপর এগুলোর উপরে আছে ইটের তৈরি খিলান। এ দুটি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর নির্মিত হয়েছে মসজিদের উপরে ছয়টি M¤^yR| এগুলো আকারে বেশ ছোট। সমজিদটি প্রধানত ইটের তৈরি। এই মসজিদটি এত মেরামত করা হয়েছে যে এর আদিরূপে কি ছিল তা সঠিকভাবে নিরুপণ করা মোটেই সহজ নয়। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ ও কোণের মিনারগুলি বহুলাংশে পরবর্তীকালের সৃষ্টি তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এটি যে সুলতানী আমলের মসজিদ তা সহজেই ধরা পড়ে।
মসজিদের পূর্বদিকে অনুচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত আনুমানিক 4530 ফুট আয়তনের একটি উম্মুক্ত স্থানে প্রাচীন আমলের একটি মাজার আছে। স্থানীয় লোকদের মতে এটি শাহমোহাম্মদ আরিফ-ই-রব্বানী শাহ’এর মাজার। এই মাজারের কাছে আরো ছয়জন আউলিয়ার মাজার আছে।
মসজিদ ও মাজারে কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি। তবে গঠন প্রণালী প্রমাণ করে এটি সুলতানী আমলের মসজিদ ও মাজার। এছাড়া শৈলকুপায় বল্লাল সেনের সময় জনৈক সন্যাসীর প্রচেষ্টায় রামগোপাল বিগ্রহ মন্দির স্থাপিত হয়।
বরবাজার ঃ
যশোর শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তরে যশোর ঝিনাইদহ পাকা সড়কের উপর ও প্রাচীন ভৈরব নদীর বাম তীরে অবস্থিত বারবাজার একটি অতি প্রাচীনতম স্থান। এখানে অসংখ্য প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। যশোহর-খুলনার ইতিহাস নামক গ্রন্থের লেখক সতীশ চন্দ্র মিত্র বলেন ‘বারবাজারের তিন চার মাইল বিস্তৃত স্থান ইষ্টক স্তুপে পরিপূর্ণ। সুন্দরবনের ইতিহাস গ্রন্থের লেখক আ,ফ,ম, আবদুল জলিল বলেন, ‘হিন্দিু বৌদ্ধ ও মুসলিম আমলে প্রায় দশ বর্গমাইল জুড়িয়া এই শহর বিস্তৃত ছিল’। ‘তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অপ্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে প্রায় দুই তিন বর্গকিলোমিটারের মধ্যেই সবচেয়ে বেশী প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ধ্বংসাবশেষ আছে।
এখানে অসংখ্য প্রাচীন জলাশয়ের অস্তিত্ব ছিল। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে জলাশয়ের সংখ্যা ছয়কুড়ি অর্থাৎ ১২৬টি। সতীশচন্দ্র মিত্র নিজেও অনেকগুলি জলাশয়ের উল্লেখ করেছেন তার গ্রন্থে। যেমন-রাজমাতার দীঘি, সওদাগার দীঘি, পীরপুকুর, মীরের পুকুর, ঘোমারি পুকুর, চেরাগদানী দীঘি, গলাকাটার দীঘি, ভাইবোন পুকুর, মিঠাপুকুর, পাঁচ পীরের দীঘি, হাঁসপুকুর, শ্রীরাম রাজার দীঘি, বেড় দীঘি, ফেনঢালা, চাউল ধোওয়া, কোদাল ধোওয়া ইত্যাদি। এই সমস্ত জলাশয়ের অধিকাংশেরই এখন কোন অস্তিত্ব নেই। বাজারের চারদিকে পুকুরাকৃতির অসংখ্য নিম্নভূমি দেখা যায়। একই স্থানে এতগুলি পুকুরের অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য গৌরবের সময়কে প্রমাণ করে।
ভৈরব নদীর উভয় তীরে এ প্রাচীন কীর্তি মন্ডিত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। বারবাজারের ভিতর দিয়ে কাটা রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে গ্রামের দিকে গেলে বেশীরভাগ প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ ও জলাশয়গুলোর অস্তিত্ব দেখা যায়। অনেকে বলেন এই বারবাজার প্রাচীন গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজধানী ছিল এবং এখানে প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ আমলের নিদর্শন বিদ্যমান। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে প্রাচীন হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের কোন নিদর্শন অদ্যাবধি এখানে পাওয়া যায়নি বা আবিস্কৃত হয়েছে তার অধিকাংশই মুসলিম যুগের। বর্তমানে এ সমস্ত এলাকায় বাজার, স্কুল অফিস ও আবাসগৃহ গড়ে উঠেছে। প্রায় সবগুলো আবাসগৃহের দেয়াল এখানকার প্রাচীন ইটের তৈরি যা থেকে সহজেই অনুমিত হয় কিভাবে বারবাজারের কীর্তিরাজ্য নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
প্রাচীন বাজার ঃ
বার বাজার যে একটি প্রাচীন স্থান তাতে কোন সংশয়ের অবকাশ নেই। প্রাক মুসলিম যুগের বিভিন্ন কীর্তির চিহ্ন বারবাজারে থাকলেও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ যথা শিলালিপি, মুদ্রা অথবা সময় নির্দেশিকা কোন মুর্তি এখানে পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায় পাল ও সেন আমলে এই অঞ্চল তাদের অধীনে ছিল, তাদের পর এই এলাকা মুসলমানদের অধিকার আসে। সুলতান জালাল উদ্দীন মোহাম্মদ শাহ্-এর আমলে এ স্থানে সর্বপ্রথম মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বাগেরহাটের বিখ্যাত দরবেশ শাসক উলুঘ খান-ই-জাহান তার সময় এ স্থান এসে ধর্মপ্রচার করেন। তিনি তার সহচর ও সৈন্য বাহিনী নিয়ে এখানে এসে যুদ্ধ করে এ স্থান অধিকার করেন এবং এখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। তিনি এখানে কিছু মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে, যদিও সে সমস্ত মসজিদের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যে সমস্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আবিস্কৃত হয়েছে সেগুলির গঠন প্রণালীর স্থাপত্য কৌশলের সাথে এগুলি কোন মিল নাই। সুলতানী আমল পর্যন্ত এ স্থানের সমৃদ্ধি বজায় ছিল। মুঘল আমলের কোন স্থাপত্য নির্দশন এখানে দেখা যায় না। তাতে মনে হয় এখানে মুঘলদের তেমন কোন প্রধান্য ছিল না।
নামকরণ ঃ
বারোটি বাজার নিয়ে প্রসিদ্ধ ছিল প্রাচীন বারবাজার। মনে করা হয় এখানে মুসলিম আমলে একটি বড় বাজার ছিল। জায়গাটি বারবাজার নাকি বড় বাজার তা অদ্যবধি জানা যায়নি। অনেকের মতে উলুম খান জাহান আলী এখানে ধর্ম প্রচারার্থে বারজন আউলিয়া নিয়ে এসেছিলেন এবং এই বারজন আউলিয়া থাকে এ স্থানের নামকরণ হয়েছে বার বাজার। এই মতটিই বহুল প্রচলিত।
বহু পূর্ব থেকেই বার বাজারে খনন কার্য চলে আসছিল। তবে ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছর থেকে নিয়মিতভাবে এখানে খনন কার্য পরিচালিত হচ্ছে এবং এ পর্যন্ত দশটি প্রত্নসম্পদ আবিস্কৃত হয়েছে। এসব প্রত্নসম্পদের মধ্যে অধিকাংশই সুলতানী আমলে নির্মিত মসজিদ। তবে দীঘি ও রাস্তাগুলি যে খান জাহানের সময়ের তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের ফলে আরো কিছু জিনিস আবিস্কৃত হবে বলে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা। বারবাজারে প্রত্নতাত্বিক খনন কার্যের ফলে যে সমস্ত পুরাকীর্তি আবিস্কৃত হয়েছে সেগুলির বর্ণনা নীচে তুলে ধরা হলো।
রাণী মাতার দীঘিঃ
বারবাজারের ভিতর দিয়ে কাঁচা সড়ক পথে কিছুদূর গেলে রাস্তার দক্ষিণ পাশে রাণী মাতার দীঘি। ৩৩ বিঘা ভূমিজুড়ে অবস্থিত শ্রীরাম রাজার মাতার দীঘি বলে পরিচিত জলাশয় পূর্ব পশ্চিমে ইষৎ দীর্ঘ। এ দীঘিটি রাণী মাতার বলে মনে হয় না। কারণ হিন্দুরীতি অনুযায়ী তাদের দীঘি উত্তর দক্ষিণে j¤^v হয়। কিন্তু দীঘিটি পূর্ব পশ্চিমে j¤^v বলে এটি কোন মুসলমান কর্তৃক খনন করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এ দীঘিটির পার্শ্বে কোন প্রাচীন কীর্তির চিহ্ন নেই। আগে কয়েকটি ঢিবি ছিল বলে জানা যায়।
সওদাগার দীঘি ঃ
দীঘিটি বার বাজারের পশ্চিমে একটি বড় জলাশয় আছে। উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ ৩৬ বিঘা ভূমি নিয়ে গঠিত এ জলাশয়কে সওদাগর দীঘি বলে। দীঘির পশ্চিম তীরে প্রাচীন ইটে পরিপূর্ণ প্রায় দশফুট একটি ঢিবি আছে যা সওদাগরের মসজিদ বলে পরিচিত। কিন্তু এটি মসজিদ নাকি মন্দির তা খনন না করলে কোন সিদ্ধান্ত আসা সম্ভব নয়।
গোড়ার মসজিদঃ
কিংবদন্তী অনুসারে গোড়াতেই এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল বলে এর নাম গোড়ার মসজিদ। এক M¤^yR বিশিষ্ট এই মসজিদটি খুবই অলংঙকরণে সমৃদ্ধ। বর্গাকারে নির্মিত এ মসজিদের প্রত্যেক বাহু বাইরের দিকে প্রায় ৩ ফুট ও ভিতরের দিকে ২০ ফুট j¤^v| দেয়ালগুলো পাঁচ ফুট প্রশস্ত। চারকোনে চারটি সুন্দর অষ্ট কোণকৃতির মিনার আছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে খিলানযুক্ত প্রবেশ পথ আছে। পশ্চিম দেয়ালে আছে দরজা বরাবর ৩টি মেহরাব। মাঝের মেহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড়। মেহরাবগুলো পোড়া মাটির ফলকে ফল ও লতাপাতার অলংকরণে সজ্জিত। এতদিন পরেও এগুলির সৌন্দর্য তেমন বেশী নষ্ট হয়নি। মসজিদের ভিতরে চার দেয়াল ঘেষে ৪টি পাথরের স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর মসজিদটির একমাত্র M¤^yRwU দেখতে অত্যন্ত মনোরম। মসজিদের বাইরের দেয়াল এবং চার কোনে পোড়ামাটির চিত্রফলকগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়াতে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর সেগুলোকে মেরামত করেছে। ফলে পোড়া-মাটির চিত্রফলকগুলির সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। মসজিদে এখন নামাজ পড়া হয়। মসজিদে কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি।
এ মসজিদ উলুঘ খান জাহান আলী কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল বলে প্রবল জনশ্রুতি আছে। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খনন কার্যের ফলে উৎঘাটিত হয়েছে এটি উলুঘখান জাহানের আমলে নির্মিত হয়নি। কারণ এর গঠন শৈলীর সাথে উলুঘ খান জাহানের সময় বাগেরহাট নির্মিত মসজিদসমূহের কোন মিল নেই। এটি সুলতানী আমলে নির্মিত মসজিদ বলে মনে হয়।
জোড় বাংলা মসজিদ
গোড়ার মসজিদ থেকে অল্প দূরে একটি প্রাচীন জলাশয়ের কাছে পরস্পর সংলগ্ন দুটি অনুচচ টিবি আছে। টিবি দুটি প্রাচীন ইটে পরিপূর্ণ। স্থানীয় লোকেএকে জোড়া বাংলার মসজিদ বলে। এক সংগে লাগানো দুটি মসজিদের অস্তিত্ব সাধারণত দেখা যায় না। তবে মসজিদের সংগে হুজরাখানা নির্মাণের অনেক প্রমান দেখা যায়। তাছাড়া এ টিবি দুটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে। খনন কার্য সম্পূর্ণ না হলে এ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাবেনা।
পীরের বাজার
গোড়ার মসজিদ থেকে কিছুটা উত্তরে একটি ছোট অনুচ্চ টিবি আছে। এটি পীরের বাজার বলে পরিচিত। কিন্তু কোন পীরের মাজার তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনা। এটি কোন ছোট মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বলেই মনে হয়। ইটগুলি খুবই প্রাচীন এবং মুসলমান আমলের বলে মনে হয় না।
চেরাগদানী মসজিদ
গলাকাটা মসজিদ থেকে কিছুটা উত্তর-পশ্চিমে একটি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ আছে। উত্তর-দক্ষিণে j¤^v একটি মাঝারি আকারের প্রাচীন দীঘির সংগে ইমারতটিকেও চেরাগদানী মসজিদ বলা হয়।
বর্গাকারে নির্মিত মসজিদের প্রত্যেক বাহু ভিতরের দিকে ছিল ২০ ফুট দীর্ঘ। দেয়ালগুলো ৪১/২ ফুট প্রশস্ত। মসজিদটির পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ এখানো আছে। পূর্ব দিকের দেয়াল প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়েগেছে। পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে একটি করে প্রবেশ পথ ছিল। ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে তিনিটি মোহরাব। মসজিদটির সংস্কার করে নামাজ আদায় করা হয়।
শুকুর মল্লিক ঢিবি
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ থানাধীন হাসিলবাগ গ্রামে ও মৌজায় অবস্থিত ক্ষুদ্রায়তনের প্রায় বর্গাকৃতি (14wgt15wgt) ও ¯^í”P ঢিবিটি মালিকের নামানুসারে শুকুর মল্লিকঢিবি নামে পরিচিত। স্রোতশ্বি শীর্ণকায়া ভৈরব এই ঢিবি হতে মাত্র ২০০ মিটার দক্ষিণে। ঢিবিটি ১৯৯৩ সনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক খননের ফলে এক M¤^yR বিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্রাকৃতির মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়েছে।
পীরপুকুর দীঘি
বার বাজার তাহেরপুর সড়ক থেকে ১০০মি: দক্ষিণে এবং বাজার থেকে ৫০০মিটার পশ্চিমে এই ঢিবির অবস্থান। আয়তাকারে (উত্তর-দক্ষিণে ৩০মিঃ ও পূর্ব-পশ্চিমে ১৯মিঃ) এই ঢিবির সর্বোচ্চ স্থান পার্শ্ববর্তী ভূমি হতে ২ মিটার উঁচু। ঢিবিতে প্রত্বতাত্ত্বিক খননের ফলে ১৫ M¤^yR বিশিষ্ট একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উম্নোচিত হয়েছে।
নুনগোলা ঢিবি
বর্গাকৃতি (2323 মিটার) ঢিবিটি গোড়ার মসজিদ থেকে আনুমানিক ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। আলোচ্য স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এক M¤^yR বিশিষ্ট একটি বর্গাকার মসজিদের ধ্বংসাশেষ আবিষকৃত হয়েছে।
পাঠাগার ঢিবি
তাহেরপুর বার বাজার সড়ক থেকে ১৫০ মি: উত্তরে ঢিবির অবস্থান। ঢিবির পূর্বদিকে উত্তরে-দক্ষিণে cÖjw¤^Z একটি দীঘি রয়েছে যা পাঠাগার দীঘি হিসাবে পরিচিত। এর পূর্ব পার্শ্বে বারবাজার পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক অবস্থিত। বর্গাকৃতির (1414wg:) এই ঢিবিতে খননের ফলে এক M¤^yRwewkó একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়েছে।
খড়ের দীঘি মাতারাণী দীঘিঢিবি
বাজারের নিকটেই খুলনা পার্বতীপুর রেল লাইনের পশ্চিম পার্শ্বে এবং বারবাজার তাহেরপুর সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত এলাকার বৃহত্তম দীঘির (খড়ের দীঘি বা মাতারানী দীঘি) দক্ষিণ পাড়ে আলোচ্য প্রত্নস্থানটির গুরুত্ব অনুধাবন করে বিগত ১৯৯২-৯৩ অর্থ মৌসুমে জমির মালিকের অনুমতি নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্য পরিচালনা করা হয়। ফলে এই স্থানে সুলতানী আমলের একটি পারিবারিক গোরস্থানের ধ্বংসাবশেষ উম্মোচিত হয়েছে।
গোরস্থানটি পূর্ব-পশ্চিমে ১৪মি: উত্তর-দক্ষিণে ১২মি: জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। উক্ত গোরস্থানের ১২টি পাকা এবং ৮টি কাঁচা করব উন্মুক্ত হয়েছে। পাকা কবরগুলি তিন সারিতে বিন্যস্ত। দক্ষিণ সারিতে ৪টি কবর অপেক্ষাকৃত নিম্ন ভূমিতে অবস্থিত। মধ্যসারির কবরগুলির ছই আকৃতির ছাদ ছিল। কয়েকটি কবরের অভ্যন্তরভাগে খনন করা হলে কংকাল পাওয়া যায়। কংকালগুলির অধিকাংশই পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের। কাঁচা কবরগুলির অধিকাংশতেই কেবলমাত্র মস্তিষ্ক পাওয়া গিয়াছে। অবশিষ্ট অস্থিসমূহ কালের প্রবাহে বিনষ্ট হয়েছে। একটি কবরে শিশুর কংকাল পাওয়া যায়। কংকালটি মোটামুটি ভাল অবস্থায় বিদ্যমান ছিল। প্রাচীন নগরী বারবাজারের এই প্রাচীন গোরস্থানটির বেশ প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে। উন্মোচিত স্থাপত্য নিদর্শনগুলি কালের প্রবাহে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এর সংস্কার অত্যাবশ্যক। তাই জরুরী ভিত্তিতে প্রত্নস্থানটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
মনোহর ঢিবি
মনোহর ঢিবি বারবাজার তাহেরপুর সড়ক থেকে ৫০০মিটার দক্ষিণে বারবাজার গ্রামে অবস্থিত। এ স্থলে একটি বৃহৎ ও দুটি ক্ষুদ্রাকার স্তুপ রয়েছে। তন্মধ্যে প্রথমোক্ত স্তুপের পরিমান উত্তর দক্ষিণে ৬০ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৬৭ মিটার। এটি পার্শ্ববর্তী কৃষিভূমি থেকে ২মিটার উঁচু। এই ঢিবি খননের ফলে ৩৫ M¤^yR বিশিষ্ট একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উন্মুক্ত হয়েছে।
বাদেডিহি ঢিবি
বারবাজার খাজুরা সড়ক থেকে ২০০মি: দক্ষিণে আলোচ্য প্রত্নস্থানটি অবস্থিত। ঢিবির দক্ষিণ পার্শ্বে পূর্ব-পশ্চিমে cÖjw¤^Z একটি দীঘি যা বাদেডিহি ঢিবি নামে পরিচিত। ঢিবিটিও পূর্ব পশ্চিমে cÖjw¤^Z| এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ২৫মি: ও পূর্ব-পশ্চিমে ৩৬মি:। আলোচ্য ঢিবি খননের ফলে একটি প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষ আবিষকৃত হয়েছে। ঢিবির পূর্ব পার্শ্ব পশ্চিম পার্শ্ব থেকে উচ্চতর। এর সর্বোচ্চ স্থান পার্শ্ববর্তী বসতবাটির ভূমি থেকে ২মি: উঁচু। ঢিবির মধ্যবর্তী কয়েক স্থানে ও পশ্চিম পার্শ্বে ছোট ছোট কয়েকটি গর্ত রয়েছে। সম্ভবত: ইট অপসারণের ফলে এইরূপ গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঢিবির বর্তমান ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে মনে হয় এটি কোন আবাসিক এলাকার ধ্বংসাবশেষ হবে।
জাহাজ ঘাট
ভৈরবের উত্তর তীরে হাসিলবাগ গ্রামে পূর্ব-পশ্চিমে cÖjw¤^Z আয়তকারে একটি ¯^‡ív”P ঢিবি। নদী তল থেকে আনুমানিক ৩ মিটার উঁচু। ঢিবিটি পূর্ব-পশ্চিমে ২৯ মি:এবং উত্তর-দক্ষিণে ২০মি: বিস্তৃত। স্থানীয় জনসাধারণ ঈদের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ঢিবির উপরিভাগ সমতল করে এর পশ্চিমার্ধে ঈদগাহ নির্মাণ করেছে। ফলে ধ্বংসস্তুপের বর্তমান আকৃতি পরিদৃষ্টে এর নীচে আবৃত স্থাপত্য কাঠামো সম্পর্কে কোন সম্যক ধারনা পাওয়া যায় না। ঢিবির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে, পূর্ব-পশ্চিমে ও উত্তরে-দক্ষিণে বিস্তৃত দুটি দেয়ালের (কোণসহ) অস্তিত্ব সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। জনশ্রুতি যে ঘাটতি প্রাচীনকালে বন্দর বা জাহাজ ঘাট হিসাবে ব্যবহৃত হতো এবং সেইসূত্রে এর নাম হয়েছে জাহাজ ঘাট। পারিপার্শ্বিক ভূ-প্রকৃতি, নদীতীরে অবস্থান স্তুপের আকৃতি ইত্যাদি পর্যালোচনা করলে অনুরূপ ধারণার সমর্থন পাওয়া যায়। নদীতীরে গড়ে উঠা প্রাচীন বারবাজার শহর এটি বন্দর হওয়া বিচিত্র নয়। তাই বারবাজার শহরের অনান্য পুরাকীর্তি থেকে এটি একটি ¯^Zš¿ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বলে মনে হয়। সে হিসাবে এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অনেক বেশী। জরুরী ভিত্তিতে এটি সরংরক্ষণ করে স্তুপের নীচে আবৃত স্থাপত্য কাঠামোর আকৃতি-প্রকৃতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব নিরুপনের জন্য এই স্থান খনন অত্যাবশ্যক। তজ্জন্য এটি সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।
নামাজগাঁও
বারবাজার বেলাবত দৌলতপুর কাঁচা সড়কের ৫০মি: দক্ষিণে এবং গলাকাটা মসজিদ থেকে ১ কি:মি: উত্তরে নামাজগাঁও ঢিবি অবস্থিত। আয়তাকার (উত্তর- দক্ষিণে ৪৮ মি: ও পূর্ব -পশ্চিমে ৪১ মি:) ¯^‡ív”P (২ মি: উচ্চ) এই ঢিবির পূর্বার্ধে অপেক্ষাকৃত নিম্ন সমতল ভুমিতে ঈদগাহ স্থাপন করে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসূত্রে স্থানটির বর্তমান নামকরণ হয়েছে নামাজগাঁও। বৃহদায়তনের এই ঢিবি শিশু ও অন্যান্য বিবিধ প্রকার গাছপালায় পূর্ণ। এই ঢিবির সাথে নানা প্রকার কিংবদন্তী জড়িত। ঢিবির মধ্যবর্তী স্থানে কিছু পুরাতন ইটের নমুনা দেখা যায়। ঢিবিটি কোন ধর্মীয় কাঠামো না হয়ে বসতবাটি বা অন্যকোন স্থাপত্য কাঠামোর নিদর্শন হতে পারে। এর প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুসন্ধানের জন্য সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক।
দমদনা
গোড়ার মসজিদ থেকে ২কি: মি: দক্ষিণ-পূর্বে ও জাহাজঘাট থেকে প্রায় ১মি: মি: উত্তর-পূর্বে প্রত্নস্থানটি অবস্থিত। বর্গাকারে (2424 মি:) ঢিবিটির উপর প্রাচীন আমলের ইট-পাটকেলের টুকরা থেকে অনুমান করা যায় যে এটি একটি সাংস্কৃতিক ঢিবি। জনশ্রুতি এই ঢিবির পশ্চিম ও উত্তর পার্শ্বে বিরাট এলাকাব্যাপী ভূ-পৃষ্ঠের ৫০সে:মি: নীচে সর্বত্র চুনসুরকীর পলাস্তরা বিদ্যমান। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক শফিকুল আলম সাহেব ৯২-৯৩ খনন মৌসুমে জোড় বাংলা ও গলাকাটা মসজিদে খনন করার সময় স্থানীয় লোকের কথামত কয়েক জায়গায় খনন করে ৫০ সে:মি: নীচে ১ সারি ইটের উপর ১৫ সে:মি: পুরু চুন সুরকীয় পলাস্তরা উন্মোচন করেন। বিরাট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বিধায় এখন পর্যন্ত ঢিবির পূর্ব ও দক্ষিণ পার্শ্বেও অনুরূপ পলাস্তরাযুক্ত মেঝে আছে কিনা জানা যায়নি। এমতাবস্থায় এই পুরাকৃতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোন সম্যক ধারনা করা পাওয়া যায় না। তাই এর বৈশিষ্ট্য সঠিকভাবে নিরূপনের জন্য খননের প্রয়োজন ও তজ্জন্য এটি সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক।
ধোপের ঢিবি
ভৈরবের দক্ষিণ তীরে ঘোপ গ্রামে অনতি উচ্চ (১.৫ মি:) ও ক্ষুদ্রাকার (1515wgt) এই ঢিবিটি অবস্থিত। ঢিবির বর্গাকারে চার পাশ থেকে মাটি কাটার ফলে ঢিবির প্রকৃত আকৃতি ও আয়তন বিনষ্ট হয়েছে। ঢিবির পশ্চিম পার্শ্বে খাল প্রবাহিত হওয়ায় ঢিবির নীচে আবৃত ইমারতটি বিপদজনক অবস্থায় আছে এবং পশ্চিম দেয়াল ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া কিছু উৎসাহী স্থানীয় যুবক ঢিবির কয়েকস্থানে (দক্ষিণ-পশ্চিম কোনসহ) খনন করে ইমারতের দেয়াল উম্মোচিত করেছে। স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জানা যায় এটি একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ এবং মসজিদের মেহরাবটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। এমনকি মেহরাবের অংশ ব্যাতীত মসজিদের পশ্চিম দেয়ালের অবশিষ্ট অংশও বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্তমানে ঢিবিটি খেজুর কাঁঠাল ও অন্যান্য বড় গাছ ও আগাছা দ্বারা পূর্ণ। ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে উম্মোচিত দেয়ালের অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি পর্যালোচনান্তে অনুমিত হয় স্থানীয় জনসাধারনের বক্তব্য অনুযায়ী সম্ভবত: এটি একটি বড় আকৃতির ১ M¤^yR বিশিষ্ট মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। খননের মাধ্যমে এর প্রত্নতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নিরূপনের জন্য ঢিবিটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
গলাকাটা মসজিদ
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয় ঝিনাইদহ জেলার বারবাজারস্থ গলাকাটা দীঘি ঢিবিতে ১৯৯২-৯৩ অর্থ মৌসুমে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে ছয় M¤^yR বিশিষ্ট একটি আয়তাকার মসজিদের স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়েছে। সদ্য উন্মোচিত এই স্থাপত্য কাঠামোটির বিরাজমান ধ্বংসাবশেষ সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
উল্লেখিত মসজিদ এবং মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও বারবাজারে প্রচুর জলাশয় এবং দীঘি ছিল। এই সমস্ত জলাশয় এবং দীঘির অধিকাংশই এখন চাষাবাদের জমিতে পরিনত হয়েছে। পূর্বে যেখানে জংগল ঘেরা ঢিবি ছিল অধিদপ্তরের খনন কার্যের ফলে যে সমস্ত নির্দশন আবিস্কৃত হচ্ছে তা ইতিহাসের এক নব অধ্যায় উম্মোচন করবে।
আপডেট :
০৯.০৬.০৮