
Home ঐতিহ্য (Tradition) > মধুসূদনেরস্মৃতি কাঠবাদাম গাছ - আপডেট চলছে
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86727 বার পড়া হয়েছে
মধুসূদনেরস্মৃতি কাঠবাদাম গাছ - আপডেট চলছে
রাজ্জাক আহম্মেদ
কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রাম। েই কপোতাক্ষ নদের কূলেই প্রায় ৩০ কছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি কাঠবাদাম গাছ। ধারণা করা হয় খুলনা বিভাগের মধ্যে এটিই একমাত্র ৩০০ বছর বয়সের কাঠবাদাম গাছ। গাছটি হওয়ায় জায়গাটি একন কাঠবাদাম ঘাট নামে পরিচিত। এই বাদামতলার ঘাটে মধুসূদন পরিবারের লোকজন স্নান করত বলে শোনা যায়। মধুসুধন শৈশবে এই কাঠবাদাম তলে বসে কবিতা লিখতেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। কিন্তু মধুসুদনের প্রথম জীবনীকার যোগেন্দ্রনাথ বসু তার মাইকেল মধুসুদনের প্রথম জীবনীকার যোগেন্দ্রনাথ বসু তার মাইকেল মধুসুধন দত্তের জীবনচরিত গ্রন্থে লিখেছেন- মধুসূদনকে ১২-১৩ বছর বয়সের সময় তার পিতা শিক্ষাদানের জন্য তাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে সংকল্প করলেন। পিতার ইচ্ছানুসারে মধুসুদন কলকাতায় গেলেন। মধুসূদনের অপর এক জীবনীকার ড. সুরেশ চন্দ্র মৈত্রী তার মধুসূদন রচনাবলী গ্রন্থ উল্লেখ করেছেন- ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। উপরিউক্ত দুজন জীবনীকারের কথা বিশ্বাস করলে কবির জন্মভূমি সাগরদাঁড়ী এলাকার জনশ্রুতি ভূল প্রমাণিত হয়।
মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর কপোতাক্ষ নদ দিয়ে বজরায় করে এই কাঠবাদাম তলার ঘাটে এসে তার বজরা ভেড়ান। পিতা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত তাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এই বাদামতলায় তাবু খাটিয়ে ১৪ দিন কাটান কবি। পরে এই কাঠবাদাম তলা থেকে ৪০০ গজ উত্তরের বিদায় ঘাট দিয়ে শেষ বারের মতো বিদায় নিয়ে চলে যান। এটাও জনশ্রুতি। কতটুকু সত্য সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
এই বিদায় ঘাটে কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি পাথরে খোদাই করে একটি স্মৃতিফলকে সেঁটে দেওয়া হয়েছে।
মধুসূদন খ্রিষ্ঠধর্ম
গ্রহণের পর কপোতাক্ষ
নদ দিয়ে বজরায় করে
এই কাঠবাদাম তলার
ঘাটে এসে তার বজরা
ভেড়ান। পিতা
জমিদার রাজ নারায়ন
দত্ত তাকে বাড়িতে
প্রবেশ করতে না
দেওয়ায় এই
বাদামতলার তাবু
খাটিয়ে ১৪দিন কাটান
কবি ।
মধুস্মৃতি ধরে রাখার প্রয়াসে যশোর পরিষদ কর্তৃপক্ষ ১৯৪৪ সালে কাঠবাদাম গাছের গোড়া চারপাশ থেকে পাকা করে গেথে প্লাষ্টার করে দেয়।
কাঠ বাদাম গাছের ফুল কানের দুলের মতো হয়। ফুল †m‡Þ¤^i মাসে আর ফল হয় অক্টোবর মাসে। ফল পাকে মার্চ - এপ্রিলের দিকে। কাঠ বাদাম পাকলে এর গায়ের রঙ হয় লাল। পাকার আগে রঙ থাকে সবুজ। কাঠ বাদাম পেকে তলায় পড়ে থাকে। গাছের তলায়ও চারা হতে দেওয়া যায়। আবার অনেকেই পাকা কাঠবাদাম পেড়ে মাটিতে পুতে রাখেন চারা করে বিক্রির জন্য।
তবে অধিকাংশ কাঠবাদাম পাখিরা নষ্ট করে ফেলে। কোনো কোনো পাখি কাঠবাদাম ঠুকরিয়ে খায়। আবার অনেক পাখি ঠোঁট দিয়ে ছিড়ে নিয়ে যায়। কাঠ বাদাম গাছে সব সময় টিয়া পাখিদের বসতে দেখা যায়। বয়সের ভারে জরাগ্রস্থ হয়ে পড়ায় গাছটিতে অনেক ছোট বড় গর্তেই বাসা করে টিয়া পাখি, ডিম পাড়ে বাচ্চাও ফোটায়।
মধু কবির বাড়িতে বেড়াতে আসা অনেকেই বিরল প্রজাতির এই কাঠবাদাম পেড়ে খায়, আবার তলা থেকে কুড়িয়েও খায়। মধুকবির স্মৃতি হিসেবে কাঠবাদামে বড় বড় লাল পাতা ব্যাগে বাড়িতেও নিয়ে যান অনেকে।
মধু প্রেমিক দর্শনার্থী, পর্যটক, পিকনিক পার্টির লোকজন এই কাঠবাদাম গাছতলায় বসে বিশ্রাম নেন।
এখন কালের সাক্ষী এই কাঠবাদাম গাছটি বয়সের ভারসাম্য আর ধরে রাখতে পারছে না। µgvš^‡q তার বড় বড়ডালগুলো মুল শরীর থেকে খসে পড়ছে। কালজয়ী কবি মাইকেল মধুসূদন নেই, কপোতাক্ষ ও তার কৈশোর - যৌবন হারিয়ে বয়সের ভারে বৃদ্ধ হয়ে পলি পড়ে মরতে বসেছে। তবুও কবির স্মৃতি ধরে টিকে আছে কাঠবাদাম গাছটি। ##