
Home ঐতিহ্য (Tradition) > নেংটা বাবার আশ্রম ও মন্দির
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86700 বার পড়া হয়েছে
নেংটা বাবার আশ্রম ও মন্দির
মাগুরা শহরের পূর্ব অংশে নবগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে সাতদোহা নেংটা বাবার আশ্রম। নদী তীরের গভীর জঙ্গালাকীর্ণ শ্মশাণভূমির প্রান্তবর্তী লতাগুল্মতলে একদিন পরিধেয়বিহীন এক সাধক পুরম্নষের আবির্ভাব লক্ষ করে স্থানীয় অধিবাসীগণ বিস্মিত ও চমৎকৃত হন। ক্রমশ: এই সাধক পুরম্নষের নানা অলৌকিক ক্ষমতা ও আধ্যাত্মিক গুণাবলীর পরিচয় চতুর্দিকে ব্যাপ্ত ও প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে ভক্ত সম্প্রদায়ের আগমন ঘটতে থাকে এখানে। বাকসিদ্ধ মহাপুরুষ হিসেবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় জনমনে পরম শ্রদ্ধার আসনে অভিষিক্ত আজীবন অকৃতদার এই সাধক পুরুষের নাম জীতেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী। যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন ভবানীপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বেনীমাধব চক্রবর্ত্তী, মাতা পূর্ণ সুন্দরী। গৌরবর্ণ শ্মশ্রগুম্ফবিহীন সোনালী চুলের সুদর্শন এই সাধকপুরুষ বিনা পরিধেয়ে জীবন কাটিয়েছেন। যারা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন তাদের অনেকে জানিয়েছেন তাকে কখনো কারো সম্মুখে আহার গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ভাষায় কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেন না। তাঁর যা কিছু প্রকাশ তা আকার ইঙ্গিতে বুঝে নিত ভক্ত সম্প্রদায়। আশ্রমে বর্তমান সেবাইত জনাব ধীরেন্দ্রনাথ দাস এর পিতা ফটিক চন্দ্র দাস ০.৮৬ একর জমি, নেংটা বাবার আশ্রমের জন্য দান করেন। স্বচ্ছতোয়া নবগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে এই আশ্রমের আঙ্গিনায় নেংটা বাবার রোপিত পঞ্চবটীতরু আজ মহীরূহে পরিণত হয়েছে। এখানে অগণিত ভক্তের নিত্য সমাগম হয়। তারা পঞ্চবটীতরুমূল হতে ধূলিকণা সংগ্রহ করে পরম শ্রদ্ধাভরে আস্বাদন করেন বা মস্তমকোপরি ধারণ করেন রোগমুক্তি বা মনোবাঞ্ছনা পূরণের আশায়। ল্যাংটা বাবার স্মৃতিধন্য সাতদোহা আশ্রমে নিত্য পূজার্চনা অনুষ্ঠিত হয়। মধ্যাহ্নে অন্নভোগ আর সন্ধ্যা রাত্রে ফলাহার নিত্য আয়োজন হয়। পঞ্চবটীর সিণগ্ধশ্যামল ছায়ায় ঢাকা নবগঙ্গা তীরের এই আশ্রমের সৌম্যশামিত্ম নির্জনতা আর সিণগ্ধতা মানবচিত্তকে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রাত্যহিকতার টানাপোড়েন আর মোহবন্ধন থেকে মুক্তি দিতে পারে। এই মহান সাধক পুরুষ বাংলা ১৩৭০ সালের ৩০ শে বৈশাখ মঙ্গলবার আসনে উপবিষ্ঠ অবস্থায় অগণিত ভক্তকূলকে অশ্রসাগরে ভাসিয়ে দেহত্যাগ করেন। এখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।