
Home ভাষা ও সংস্কৃতি (Language and Culture) > মাগুরায় ব্যতিক্রমী বাঙালি সাংস্কৃতিক উৎসব
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86901 বার পড়া হয়েছে
মাগুরায় ব্যতিক্রমী বাঙালি সাংস্কৃতিক উৎসব
“ফিরে চল মাটির টানে” কিংবা “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম”-গ্রামীণ সংস্কৃতির শেকড়ের সন্ধানে ফিরে যাওয়ার প্রেরণা বাঙালির চিরকালীন।

বুধবার দিনব্যাপী এমনি এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা লিচু বাগান এলাকায়।
কলার পাতায় খেজুর রসের ক্ষির, মাটির বাসনে ভাত ও তেতুল দিয়ে বুনো কচুর খাট্টা, খড়ের আগুনে পোড়ানো ছোলা, সেদ্ধ মটরসুটি ও মিষ্টি আলুর স্বাদ, মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ।
লুঙ্গি, গামছা পরে ডাংগুলি কিংবা কাচের বল খেলা। বাউল গান। এ সবই এক সময় ছিল আমাদের চিরায়াত বাংলার অন্যতম ঐতিহ্যের ধারক বাহক। কিন্তু কালের বিবর্তনে শহরায়নের ফলে ও পশ্চাত্য সংস্কৃতির জোয়ারে আমাদের এইসব শাশ্বত সংস্কৃতি কৃষ্টি ও বাঙালিপনা হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন আর ঋতু বৈচিত্রের ধারায় এইসব ঐহিত্যগত চর্চা চোখে পড়ে না। অথচ এগুলোই আমাদের বাঙালি স্বত্তার প্রকৃত রূপ।
এ ঐতিহ্যগত সত্যকে ধারণ করেই সদর উপজেলার ইছাখাদা লিচু বাগানে বুধবার বসেছিল ব্যতিক্রমী এ বাঙালি সংস্কৃতির আসর। ইছাখাদা কৃষক উন্নয়ন সমিতি এ আসরের আয়োজন করে।
যেখানে জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, সাংবাদিক, এনজিও কর্মকর্তা, ব্যাংকারসহ স্থানীয় কৃষক নের্তৃবৃন্দের অংশগ্রহণে বাঙালি পোশাক পরে দিনভর মেতেছিলেন বাঙালিপনায়।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উপস্থিত সকলের অংশগ্রহণে সম্মিলিতভাবে চলে মটরসুটি, মিষ্ট আলু সেদ্ধ, বুনো কচু তেতুলের খাট্টা রান্না, খড়ের আগুনে ছোলা পুড়িয়ে খাওয়া। খেজুরের রস দিয়ে দেশী চালের ক্ষির, সজিনা ডাটার তরকারি দিয়ে মাটির বাসনে ভাত খাওয়া। এই সব বাঙ্গালী খাবারের পাশাপাশি দিনব্যাপী আসরে চলে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা ও বাউল গান।
বাঙালি সংস্কৃতির আদি অন্ত বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন খন্দকার সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের উদ্যোক্তা হাজরাপুর কৃষক উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ওলিয়ার রহমান, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খবির হোসেন, সুনিল সরকার, অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান টুকু, ব্যাংকার সৈয়দ গোলাম আরেফিন, ডা. শাহবুদ্দিন সাবু, ফরিদ হোসেন, অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান, জেলা এনজিও কোঅর্ডিনেটর মো. আব্দুল হালিম, এনজিও কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান মুকুল, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খায়রুল আনাম টুকু, সাংবাদিক শামীম খান, সাংবাদিক অলোক বোস, সাংবাদিক লিটন ঘোষ, সাংবাদিক রূপক আইচ, বিশ্বজিৎ বাপি প্রমুখ।
বক্তারা সবাই শৈশব ও কৈশোরের বিভিন্ন স্মৃতি রোমান্থন করে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতির এ ধরণের আয়োজনকে সাধুবাদ জানান। পাশাপাশি সবাই ধর্ম বর্ণ দলমত নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সত্বার এ চেতনাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমানে সাম্প্রদায়িক শক্তির থাবায় দ্বিধাবিভক্ত জাতির ঐক্য ফিরিয়ে আনা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশিলতা মোকাবেলায় এ ধরণের আয়োজন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।