
Home বৃহত্তর যশোর জেলা / Greater Jessore District > ভূষণা- আপডেট চলছে
এই পৃষ্ঠাটি মোট 91294 বার পড়া হয়েছে
ভূষণা- আপডেট চলছে
ভূষণা একটি প্রাচীন নগর। রেনেল সাহেবের অঙ্কিত মানচিত্রের দিকে তাকালে সহকে অনুমিত হয় ফরিদপুর ও যশোর জেলার কিছুটা অংশ নিয়ে সেকালের ভূষণা নগর বিস্তৃত ছিল। এখানে এক সময় হিন্দু রাজারা রাজত্ব করেছেন ; মুসলমান ফৌজদারেরা বাস করেছেন। মোঘল, পাঠান, হিন্দু ও মুসলমান বহুবার এই নগরটিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। কালের নিয়মে আজ একটি ছোট্ট গ্রামে পরিণত হয়েছে ভূষণা। কিন্তু নগরের স্মৃতিচিহ্ন আজ অবধি বিদ্যমান। প্রাচীন দুর্গের ভগ্নাবশেষ, প্রাচীর ও পরিখার নিদর্শন আজো দেখা যায়। ইষ্টক নির্মিত গৃহও কিছু কিছু চোখে পড়ে। লোকমুখে ছড়িয়ে আছে এখানকার অনেক গল্প কাহিনী। কত রাজা এলেন, কত ফৌজদার এলেন এই ভূষণায়- সবই যেন রূপকথার মতো প্রাচীন লোকদেও মুখে সরস কাহিনী হয়ে যুগ-যুগান্তর ধরে প্রচারিত হয়ে আসছে। লোকে এখনো হাত ইশারায় দেখিয়ে দেয়-ওইখানে রাজাদের অশ্বারোহী বাহিনীর শিবির ছিল, ওইখানে অপরাধীদের শূলে দেওয়া হতো। ভূষণার একদিকে ছিল চন্দনা ও অপর দিকে ছিল খরস্রোতা কালী গঙ্গা। এই পথে শত সহস্রবার এসেছে জলদস্যুরা। আবার তারা লুণ্ঠন করে জাহাজ বোঝাই করে চলে গেছে পৃথিবীর অন্য কোন বন্দরে। সংগে করে নিয়ে গেছে খুবসুরত বঙ্গ ললনাদের। দূর দেশের বন্দরে বন্দরে ফেরি করে বেঁচেছে তাদের। আবার এই নদী বেয়ে দেশ বিদেশ থেকে এসেছে সওদাগরী জাহাজ। ভূষণাকে করেছে সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যে ভরপুর। ‘দ্বিগিজয় প্রকাশ’ নামক একখানি ভৌগলিক গ্রন্থে পাওয়া যায়- ধেনু কর্ণ নামে জনৈক ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন। তিনি নাকি “যশোরেশ্বরী” মন্দির পুনঃ নির্মাণ করেছিলেন। তার পুত্রের নাম ছিল কণ্ঠহার। এই কণ্ঠহারের উপাধি ছিল বঙ্গভূষণ। তিনি যশোরের উত্তর ভাগ অধিকার করে এর নাম রাখেন ভূষণা। মুসলমান আমলে এই ভূষণা নগরটি ছিল সাতৈর পরগনার অধীন। মোগলদের রাজত্বকালে সুবে বাংলা (উড়িষ্যাসহ) চব্বিশটি সরকারে বিভক্ত হয়েছিল। তখন দেখা যায় সাতৈর সরকার ছিল মাহমুদাবাদের অন্তর্গত। পাশাপাশি দুটি সরকার ছিল। একটি মাহমুদাবাদ ও অপরটি ফতেয়াবাদ। এই দুটি সরকারের ইতিহাস যেন একই সূত্রে গাঁথা। ফতেয়াবাদ সরকার ছিল বেশ বিস্তৃত এবং এর জনপদ ছিল বিশাল। “আইন-ই-আকবরীতে” আছে, বর্তমান ফরিদপুর জেলার কিছুটা অংশ, যশোর জেলার অংশ, ঢাকা, নোয়াখালী ও বরিশাল জেলার কিছুটা অংশ নিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছিল। মাহমুদাবাদ সরকারের মধ্যে ছিল যশোর, ফরিদপুর ও নদীয়া জেলার কিছুটা অংশ। এর মহাল ছিল ৮৮টি। ১,৬১০২৫৬ টাকা ছিল রাজস্ব আদায়। ফতেয়াবাদ সরকারের চেয়ে মাহমুদাবাদ সরকার অধিক পরিমাণে রাজস্ব দিতো। এর বিনিময়ে ফতেয়াবাদ সরকার মোগল বাদশাদের সৈন্য যোগাতো। বিজয় গুপ্ত প্রণীত “মনসা মঙ্গলে” কোন এক অর্জুন রাজার উল্লেখ পাওয়া যায়। তার রাজ্যসীমা বিস্তৃত ছিল, “মল্লুক ফতেয়াবাদ বঙ্গ রোড়া তক সীম।” এই রাজা পাঠানদেও বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন, কিন্তু মাহমুদাবাদ গৌড় সুলতানদেও দুর্বলতা দেখলেই বিদ্রোহ ঘোষণা করতো। মাহমুদাবাদ এমন ভাবে সুরক্ষি ও দুর্ভেদ্য ছিল যে সহজে জয় করা সম্ভবপর হতো না। আশেপাশে নদী দ্বারা বেষ্টিত ছিল। কেল্লা ছিল সুরক্ষিত। যার জন্যে শের শাহকে পর পর দু’বার আক্রমণ করতে হয়েছিল প্রদেশটিতে। সেই যুদ্ধের সময় মাহমুদাবাদের কয়েকটি হাতী জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এই রাজার রাজধানী ছিল ভূষণা নগরে। মাহমুদাবাদ ও ফতেয়াবাদ নামের উৎপত্তি হয়েছিল বাংলার পাঠান সুলতান ফতেহ শাহের আমলে। তারই নামানুসাওে (১৪৮১-৮৭) ফতেয়াবাদ। এই দুটি সরকার এতোই দুর্জয় ছিল যেম মোগল বাদশাদের শাসনে আনতে বেগ পেতে হয়েছিল। সম্রাট আকবরের সময় বাংলাদেশ বিদ্রোহ ভাবাপন্ন ছিল। বার ভূঁইয়ারা কিছুতেই দিল্লীর বশ্যতা স্বীকার করে নাই। সর্বদা যুদ্ধ-বিদ্রোহে লিপ্ত ছিল বাংলাদেশ। সেই জন্যে এর নাম হয়েছিল “বুলঘাক”। মুরাদ খাঁ নামক জনৈক সেনাধ্যক্ষ আকমহলের যুদ্ধের পর ফতেয়াবাদ ও বাকলা সরকার দখল করে নেন। এই মুরাদ খাঁর মৃত্যু হলে মুকুন্দরাম নামক জনৈক ভূস্বামী তার পুত্রগণকে আমন্ত্রণ করে এনে গুপ্তহত্যা করেন। মুরাদ খাঁর সমস্ত সম্পত্তি নিজের দখলে আনয়ন করে স্বয়ং শাসনকর্তা হয়ে বসেন। ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে খাঁ আজিম কোকা বাংলাদেশে বিদ্রোহ দমন করতে আসেন। তার বিরুদ্ধে ফতেয়াবাদের কাজী জাদা যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তিনি অনেক যুদ্ধজাহাজ এনেছিলেন। আজিম কোকার সংগে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকাকালে কোন এক যু্েদ্ধ তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তার মৃত্যুর পর কালাপাহাড় নৌবহরের ভার গ্রহণ করেন। এর কিছুকাল ভূষণায় মোগলদের বিরুদ্ধে এক গোলযোগের সূত্রপাত হয়। চাঁদ রায় ও কেদার রায় ভূষণা অধিকার করেন। মুকুন্দ রামের পুত্র সত্রাজিও এই যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়েন। আফগানরা এই সময়ে বিদ্রোহী হয়ে লূঠতরাজ করতে করতে ভূষণার দিকে ধাবিত হয়। চাঁদ রায়ের ইচ্ছা ছিল গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আফগানদিগকে তিনি কৌশলে বন্দী করবেন। পাঠান সর্দার দিলওয়ার খাঁ, সুলেমান খাঁ ও উসমান খাঁকে তিনি ভূষণার দুর্গে নিমন্ত্রণ করলে সুলেমান খাঁ চাঁদ রায়ের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে কোষ হতে তলোয়ার মুক্ত করে রুখে দাড়ালেন। তার তরবারীর আঘাতে নিকটবর্তী অনেকেই ধরাশায়ী হয়। বেশ কিছুক্ষণ দ্বন্দ যুদ্ধের পর তিনি দুর্গের দ্বার হতে বের হয়ে এলেন। চাঁদ রায়ও তার পশ্চাদ অনুসরণ করলেন। উসমান খাঁও যোগদান করলেন সুলেমানে সংগে। ঘটনার বিবরণ শুনে চাঁদ রায়ে অধীনস্থ পাঠান সৈন্যরাও ক্ষেপে গেল। উভয় পক্ষের তুমুল যুদ্ধের পর চাঁদ রায় নিহত হলেন। আফগানরা সহজেই ভূষণার দুর্গ অধিকার করে নিলেন। তার পর ঈশা খাঁর ষড়যন্ত্রে আফগানরা তার সংগে যোগ দিলে কেদার রায়ের হস্তে ভূষণার দুর্গ ও রাজ্য তারা সমর্পণ করলেন। কেদার রায় এইভাবে ভূষণার মালিক হলেন। এসব ঘটনা মোগল সম্রাটের কর্ণগোচর হলে তারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। সেনাপতি মানসিংহ দুর্জন সিংহকে বিদ্রোহ দমন করতে ভূষণায় প্রেরণ করলেন। এ হচ্ছে ১৫৯৬ খৃষ্টাব্দের ঘটনা। সুলেমান খাঁ ও কেদার রায় যৌথভাকে মোগলদের প্রতিরোধ করবার জন্যে তৎপর হলেন। মোগল সৈন্যরা ভূষণায় দুর্গ অবরোধ করলো। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হলো। ভাগ্যের কি বিপর্যয়! দুর্গের মধ্যে একটি কামান ফেটে যাওয়ায় সুলেমান খাঁর মৃত্যু হলো। কেদার রায় আহত হয়ে ঈশা খাঁর আশ্রয় নিলেন। ১৫৯৮-৯৯ খৃষ্টাব্দে সত্রাজিৎ আবার ভূষণায় স্বীয় ক্ষমতা প্রবল করে তুললেন। জনশ্র“তি আছে, তোডর মল্ল মুকুন্দ রায়কে ভূষণার শাসনকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সতীশ চন্দ্র মশায়ের ‘যশোর-খুলনার ইতিহাসে’-এ পাওয়া যায়, মুকুন্দ রায় ও তার পুত্র সত্রাজিৎ প্রতাপাদিত্যের যখন রাজ্যাভিষেক হয়েছিল, তাতে উভয়েই যোগদান করেছিলেন। ১৯৫৩ খৃষ্টাব্দে বিক্রমাদিত্যের মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রতাপাদিত্য সিংহাসনে উপবেশন করেন। সত্রাজিৎ বহুকাল যাবৎ ভূষণার শাসন ক্ষমতা অক্ষুণœ রাখেন। তিনি সুযোগ বুঝে কখনো মোগলদের পক্ষ অবলম্বন করতেন, কখনো বিরোধিতা করতেন। আব্দুল লতিফ নামক জনৈক পরিব্রাজকের ‘বাহারিস্তান’ নামে একখানি ভ্রমণ কাহিনী আছে। তাতে দেখা যায়, সত্রাজিৎ যখন মোগলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছিলেন, তখন সুবেদার ইসলাম খাঁ ইফতেখার নামক এক সেনাপতিকে এই বিদ্রোহ দমন করবার জন্য প্রেরণ করেন। সত্রাজিৎ ইফতেখার যুদ্ধ যাত্রার খবর পেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুললেন। এই যুদ্ধে সত্রাজিতের পরাজয় হয়েছিল। ইফতেখার তাকে বন্দী করলে, সত্রাজিত ইসলাম খাঁর সাক্ষাৎ প্রার্থনা করলেন। খুলনা জেলার আঠারো বাকি নদী পার হয়ে সুবেদার ইসলাম খাঁ তখন ভৈরব নদের সঙ্গমস্থল আলাইপুর থেকে নাজিরপুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। ১৬০৯ খৃষ্টাব্দে ফতেহপুর নামক একটি স্থানে সত্রাজিৎ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। সুবেদারকে উপযুক্ত উপটৌকন স্বরূপ আঠারটি হস্তি প্রদান করে বশ্যতা স্বীকার করলেন। দুইপক্ষে আপোষ মীমাংসা হলো। সত্রাজিৎ এর পর থেকে মোগলদের পক্ষ হয়ে বিদ্রোহ দমনে মনোযোগ দিলেন। ফতেয়াবাদের তখন শাসনকর্তা ছিলেন মজলিস কুতুব। তিনিও মোগলদের বিরুদ্ধাচারণ করতেন। সত্রাজিতের সহায়তায় ইসলাম খাঁ হাবিবুল্লা নামক একজন সেনাপতিকে মজলিস কুতুবের বিরুদ্ধে পাঠিয়ে ছিলেন। ফতেয়াবাদ দুর্গ অবরোধ করলে মজলিস কুতুব মুসা খাঁর সাহায্যপ্রার্থী হলেন। মুসা খাঁ সাহায্য প্রেরণ করলেন। মজলিস কুতুবের পাঠান সৈন্যরা দুর্গ থেকে বের হয়ে মোগলদের বাধা দিতে লাগলো। কিন্তু সত্রাজিতের কাছে যুদ্ধে বারে বারে ব্যর্থ হয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়লো। অনেকক্ষণ সংঘর্ষের পর মজলিস কুতুব মুসা খাঁর সংগে মিলিত হবার চেষ্টা করলেন। সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। উপায়ান্তর না দেখে তিনি রণভঙ্গ দিয়ে দুর্গ থেকে পালিয়ে গেলেন। সত্রাজিৎ এর পর কুচবিহার আক্রমণে অংশ গ্রহণ করেন। সুবেদার আলাউদ্দীন ইসলাম খাঁর আহ্বানে মোগল সৈন্যদের সংগে সত্রাজিৎ কোচ হাজা অভিযানেও যোগদান করেন। এই যুদ্ধে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ছিল সত্রাজিতের। যুদ্ধে জয়লাভ করলে সুবেদার তার শৌর্য-বীর্যে মুগ্ধ হয়ে পাণ্ডু ও গৌহাটির সীমান্ত রক্ষক পদে নিযুক্ত করেন। ভূষণার রাজা হিসাবে তার সুনাম ছিল যথেষ্ট। এই সুনামের জন্যে আসামবাসীরা তাকে প্রীতি চোখে দেখতেন। পরবর্তীকালে কোন রাজবংশের সহিত তার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এই ঘনিষ্ঠতার দরুন তিনি মোগলদের প্রতি বিরূপ হয়ে পড়েন। কোচ-রাজার সহিত এমন সৌহার্দ্য জন্মেছিল যে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে চাইতেন না। সুবেদার আলাউদ্দিন ইসলাম খাঁর মৃত্যুর পর যারা ঢাকায় সুবেদার হয়ে আসেন, তাদেরকে তিনি বিশেষ আমল দিতেন না। পূর্ব প্রথামত পেশকশও দেওয়া বন্ধ করেছিলেন। মোগল সেনাপতি আবদার সালাম যখন কোচ-রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন, তখন সত্রাজিতের বিশ্বাসঘাতকটায় আহোম নৌবাহিনী কর্তৃক মোগল সৈন্যরা চরম পরাজয় বরণ করে। এই বিশ্বাসঘাতকতার সংবাদ শাসনকর্তার নিকট পৌছলে তিনি সত্রাজিতকে চরম শিক্ষা দেবার জন্যে বিরাট এক বাহিনী প্রেরণ করেন। সত্রাজিত উপায়ান্তর না দেখে সসৈন্যে পলায়ন করলেন। মোগল বাহিনী তার পিছু পিছু ধাওয়া করলো। অবশেষে ধূবড়ির নিকট এক খণ্ড যুদ্ধে তিনি ধৃত হলেন। তাকে বন্দী করে ঢাকায় প্রেরণ করলে সেখানে তার রাজদ্রোহের বিচার হয় এবং ১৬৩৬ খৃষ্টাব্দে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সত্রাজিতের পর ভূষণার শাসনকর্তা হন মোগল সেনাপতি সংগ্রাম শাহ। তিনি এ দেশীয় ছিলেন না। কেউ বলেন-তার আদি নিবাস জম্মুতে, কেউ বলেন-রাজপুতানায়। পূর্ব বাংলায় তিনি প্রথম এসেছিলেন দস্যু দমন ও বিদ্রোহ দমন করবার জন্যে। মোগল সম্রাট তার কার্যে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ভূষণায় জমিদারী দান করেন। ভূষণা তার “নাওরা” মহলভূক্ত ছিল। শাসনকার্যের দক্ষতার জন্রে তাকে সম্রাট খুব সুনজরে দেখতেন। তার আধিপত্য ও প্রতাপের কথা আজও প্রবীণ লোকদের মুখে শোনা যায়। তার নিজের পুত্র-কন্যাদের বিয়ে দিয়েছিলেন বৈদ্য সমাজে। এই কারণে তাকে সবাই “হামবৈদ্য”বলতো। তিনি অনেক কীর্তি স্থাপন করে গেছেন। মাথুরাপুরের সুবিখ্যাত দেউল সংগ্রাম শাহের কীর্তির পরিচয় বহন করছে। কালুখালি জংশন হতে বহরপুর স্টেশনের ৩ মাইল পূর্বদিকে বাণীসহ নামে একটি পুরাতন ও প্রসিদ্ধ গ্রাম আছে। এই গ্রামে সংগ্রাম শাহের বংশীয়গণেরা বাস করতেন। বাণীবহের চৌধুরী নামে এরা পরিচিত হন। এই চৌধুরীরা “নাওয়ারা” মহলের কর্তৃত্ব করতেন। চন্দনা নদীর তীরে আড়কান্দীতে বাণীবহের নাওয়ারা চৌধুরীদের নৌকা নির্মাণে কারখানা ছিল। সংগ্রাম শাহের আধিপত্য ঠিক কোন সময়ে ভূষণায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন, তা’নির্ণয় করা কঠিন। কুলজী গ্রন্থের প্রমাণে বুঝতে পারা যায়, নবাগত সামন্তকে সময়ে বল প্রয়োগ করতে হয়েছিল। সংগ্রাম বা তার পুত্রের প্রতাপ ভূষণা অঞ্চল হতে কিভাবে বিলীয়মান প্রাপ্ত হয়েছে তা’ ঐতিহাসিকেরা নির্ণয় করতে পারেন নাই। আনন্দনাথ রায় তার ফরিদপুুুরের ইতিহাসে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় বাংলাদেশে সংগ্রাম শাহের নানা কীর্তির কথা উল্লেখ্র করেছেন। আবার যশোর কালেক্টরীর তায়দাদে ১৬২৬ ও ১৭৪১ (১৬৪১) খৃষ্টাব্দে সংগ্রাম শাহ কর্তৃক ভূমি দানের কথা লিখেছেন। ১৬২৬ খৃষ্টাব্দে জাহাঙ্গীর সম্রাট হলে সত্রাজিৎ হন ভূষণার রাজা। সে সময়ে সংগ্রাম শাহের ভূমিদান কি করে সম্ভব হয়? ১৬৪১ খৃষ্টাব্দে শাহজাহান দিল্লীর বাদশাহ হন। ঐতিহাসিকেরা অনুমান করেছেন যে, সংগ্রাম শাহ ও তার পুত্রদের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়লে ফতেয়াবাদ থেকে ফৌজদারের আসন স্থানান্তরিত হয়ে ভূষণায় আসে। ফতেয়াবাদের উপরে পদ্মদেবীর অনুগ্রহ এবং সংগ্রাম শাহ বা তার পুত্রের ভূসম্পত্তি শাসন এর কারণ হতে পারে।
তথ্যসূত্র: যশোরাদ্য দেশ
লেখক: হোসেন উদ্দিন হোসেন