
Home ঐতিহ্য (Tradition) > যশোর প্রেসক্লাবের ইতিকথা -১৯৭৪
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84727 বার পড়া হয়েছে
যশোর প্রেসক্লাবের ইতিকথা -১৯৭৪
তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রেসক্লাব ‘যশোর প্রেসক্লাব’। ১৯৫৮ সালে হাতেগোনা যে ক’জন সংবাদকর্মী যশোরে অবস্থান করে
সাংবাদিকতা করতেন, তাদের উদ্যোগে একটি আবাসিক হোটেলে বসে যশোর প্রেসক্লাব গঠিত হয়। সে সময় পূর্ববঙ্গে শুধুমাত্র ঢাকায় একটি প্রেসক্লাব ছিল। পরে পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে প্রেসক্লাব গঠিত হয়। তবে যশোর প্রেসক্লাব বেশিদিন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেনি কিছু দুর্বলতার কারণে। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে যশোরের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নতুন করে প্রেসক্লাব গঠনের উদ্যোগ নেন। এবারের ক্লাবটির নামকরণ করা হয় ‘প্রেসক্লাব যশোর’। সংগঠনটির নির্বাহী কমিটি তৎকালীন যশোর জেলা প্রশাসক এনাম আহমেদ চৌধুরীর কাছে প্রেসক্লাবের জন্য সরকারি জায়গা বরাদ্দের আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক সিভিল কোর্টের পাশে সরকারি একখণ্ড জমি (১৮ শতক) বরাদ্দ দেন প্রেসক্লাবের অনুকূলে। এর কয়েক মাস পর তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোর সফরে আসেন। প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবসুলভ উদারতায় সাথে সাথে নগদ ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন এবং তদানিন্তন জেলা প্রশাসক আখতার আলীকে নামমাত্র মূল্যে প্রেসক্লাবের জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দেন। অবিলম্বে কার্যকর হয় এই নির্দেশ। বঙ্গবন্ধুর বরাদ্দ দেয়া সেই জায়গাটিই আজও যশোরের সাংবাদিকদের মিলনক্ষেত্র প্রেসক্লাব যশোর।

জরাজীর্ণ ভবনে বসে স্থানীয় সাংবাদিকরা যশোর অঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ, উন্নয়ন-বঞ্চনার কথা লিখেছেন বছরের পর বছর। পরে বঙ্গবন্ধু-তনয়া শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী আসেন যশোরে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসক্লাব যশোর প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা অবগত হন এবং এর উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রেসক্লাবের উন্নয়নে নগদ ৫ লাখ টাকা অনুদান দেন।
এরআগে প্রেসক্লাব নগদ ১ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে।
এসব অর্থের সঙ্গে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে প্রেসক্লাবের একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রেসক্লাব যশোরের ভবন নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করে। যশোর জেলা পরিষদের মাধ্যমে এই নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। তবে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত টাকায় নবনির্মিত ভবনটি পুরোপুরি ব্যবহারোপযোগী হয়নি।
ভবনটি ব্যবহারোপযোগী করতে একরাম-উদ-দ্দৌলা ও আহসান কবীরের নেতৃত্বাধীন কার্যনির্বাহী কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর পরই উদ্যোগী হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রফেসর ড. আতিউর রহমান এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারোপযোগী করতে নগদ পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেয়। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড প্রেসক্লাব যশোরের দুটি রুম সজ্জিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া স্থানীয় ধনাঢ্য, দানশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে নিয়মিত। তাদের দান-অনুদানে যশোরের একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত ভবনে পরিণত হতে চলেছে প্রেসক্লাব যশোর। ইতিমধ্যে চালু হয়েছে ক্লাবের নিজস্ব ওয়েবসাইট। দেশের কোনো প্রেসক্লাবের প্রথম ওয়েবসাইট এটি। নবস্থাপিত ইনফরমেশন সেন্টার ও লাইব্রেরি চাহিদা মেটাচ্ছে স্থানীয় সাংবাদিকদের।
মফস্বল হলেও যশোরকে বিবেচনা করা হয় সংবাদপত্রের শহর হিসেবে। এই শহর থেকে প্রকাশিত হয় ১৩টি দৈনিক পত্রিকা।
ঢাকার পরে অনলাইন পত্রিকার সুতিকাগার বলা হয় যশোর প্রেসক্লাব কে। জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা ওয়ান নিউজ বিডি.কম, যশোর ২৪ রেডিও, যশোর খবর, যশোরনিউজ২৪, দৈনিক গ্রামের কাগজ, দৈনিক লোকসমাজ নিয়মিত প্রকাশ হয়। এর মধ্যে বিশ্ব জুড়ে বাংলা সংবাদ মুহুর্তেই শ্লোগান সমৃদ্ধ ওয়ান নিউজ বিডি.কম এর ভিজিটর প্রত্যহ ১৪০০০ +।
প্রকাশিত হচ্ছে বেশ কয়েকটি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা। রাজধানী থেকে প্রকাশিত প্রথম সারির প্রায় সব দৈনিকের অফিস রয়েছে যশোরে। এছাড়া টেলিভিশন চ্যানেল, ওয়েবভিত্তিক পত্রিকা, নিউজ এজেন্সি এবং খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলোর সংবাদদাতারা কাজ করছেন যশোরে। সব মিলিয়ে যশোর শহরে এই মুহূর্তে সাংবাদিকের সংখ্যা ৩০০। এদের মধ্যে প্রেসক্লাব যশোরের সদস্য ৯৫ জন। বহু সাংবাদিক প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তবে সদস্য না হলেও সংবাদ কর্মী হলেই তিনি সহযোগিতা নিতে পারেন অবলীলায়।
তথ্যসূত্র: ফেইসবুক