
Home ঐতিহ্য (Tradition) > শতবর্ষের স্মারক যশোর জেলা পরিষদ ভবন
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84728 বার পড়া হয়েছে
শতবর্ষের স্মারক যশোর জেলা পরিষদ ভবন
যশোর জেলা পরিষদের অফিস ভবনটির বয়স এবার ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ১৯১৩ সালে ভবনটি স্থাপিত হয়। এটি এখন কালের সাক্ষী,

যশোরে যে কয়েকটি পুরনো ভবন ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে মাথা উঁচু করে আছে তার মধ্যে জেলা পরিষদ ভবন অন্যতম। উল্লেখযোগ্য আরো দুটি ভবন হলো জেলা কালেকটরেটের প্রথম ও দ্বিতীয় ভবন। প্রথম ভবনটি স্থাপিত হয় ১৮০১ সালে। ৮৫ বছর ধরে এখানে চলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ। কাজের পরিধি বাড়ায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় দ্বিতীয় ভবনের একতলা স্থাপন করা হয় ১৮৮৫ সালে এবং দোতলা স্থাপন করা হয় ১৯৮২ সালে। প্রথম ভবনটি এখন জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের পরিত্যক্ত ভবন।
অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা হলো যশোর। এই যশোরকে জেলা করা হয় ১৭৮১ সালে। আর অবিভক্ত বাংলায় সেলফ গভর্নমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় ১৮৮৫ সালে ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকেই ১৮৮৬ সালে যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫৯ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল করা হয় এবং ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার আইনে করা হয় জেলা পরিষদ। যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর ১৯১৩ সালে নিজস্ব ভবন স্থাপন করা হয়। অবিকৃত অবস্থায় ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বণিক জানান, প্রতিষ্ঠানটির সেবা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, জনপথ, কালভার্ট ও ডাকবাংলো নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উদ্যান, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি। এ ছাড়া রয়েছে শিক্ষা-সংষ্কৃতি ও সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি। দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের ১৬টি খাতে গত অর্থবছর ১৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে বৃত্তি বাবদ দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা। পাঁচ লাখ টাকা সামাজিক খাতে ও চার লাখ টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির আয়ের জন্য আছে নিজস্ব দুই হাজার ৩৪৫ দশমিক ৮৫ একর জমি, জেলা সদরে বিডি হলো (জেলা পরিষদ মিলনায়তন), শার্শায় একটি অডিটোরিয়াম, সাগরদাড়িতে একটি পিকনিক কর্নার ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ১০টি ডাকবাংলো। এ ছাড়া ১৬৬টি সড়কের পাশে আছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ৮০ প্রজাতির বৃক্ষ সম্পদ।
সূত্র জানায়, ১০০ কোটি টাকার গাছের মধ্যে ৩০ কোটি টাকার গাছ দীর্ঘদিন বেহাত ছিল। বিষয়টি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আনা হলে ২০১১ সালের ২ মার্চ আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী জেলা পরিষদ গাছের মালিকানা ফিরে পায়। জেলা পরিষদের ১৬৬টি রাস্তার পাশে যেসব গাছ আছে তার মধ্যে ছয়টি হাইওয়ের পাশে আছে ৩৫ কোটি টাকার গাছ। এগুলো হলোÑ ৩৮ কিলোমিটার যশোর-বেনাপোল সড়কে ১৮ কোটি টাকার আড়াই হাজার গাছ, ২৪ কিলোমিটার যশোর-নড়াইল সড়কে সাত কোটি টাকার ৬০০ গাছ, ১৫ কিলোমিটার যশোর-ঝিনাইদহ সড়কে তিন কোটি টাকার ৩০০ গাছ, ২০ কিলোমিটার যশোর-মাগুরা সড়কে এক কোটি টাকার ১০০ গাছ, ৩৮ কিলোমিটার যশোর-চুকনগর সড়কে পাঁচ কোটি টাকার ৫০০ গাছ এবং ১৯ কিলোমিটার নাভারণ-ইলিশপুর সড়কে এক কোটি টাকার ১০০ গাছ। এ ছাড়া ৬৫ কোটি টাকার গাছ আছে ১৬০টি সাধারণ সড়কের পাশে। এসব রাস্তার মধ্যে রয়েছে শার্শায় ২৬টি, চৌগাছায় ১৩টি, জেলা শহরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক ১৮টি, কেশবপুরে ১৭টি, মনিরামপুরে ১৬টি,অভয়নগরে ১২টি, বাঘারপাড়ায় ১৬টি, সদরে ২২টি এবং ঝিকরগাছায় ১০টি।
জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী এস এম নূরুল ইসলাম জানান, একসময় জেলার সব উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজ করত জেলা পরিষদ। ১৯৫৭-৫৮ সালের নথি ঘেটে দেখা গেছে, বিস্তৃত পরিসরে এসব কাজ করার জন্য এর লোকবল ছিল ৩০০। কিন্তু প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে কাজের পরিমাণ কমে আসায় লোকবল নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৫-এ। অস্বাভাবিকভাবে লোকবল কমানোর ফলে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা ও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন আগে গাছ পাহারা দেওয়ার জন্য রোড মহরার পদে লোক নিয়োগ ছিল। সে পদ এখন বিলুপ্ত। এতে ১০০ কোটি টাকার বৃক্ষসম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এলাকার একশ্রেণীর লোক প্রকাশ্যে কেটে নিয়ে যাচ্ছে এসব গাছ।
যশোর জেলা পরিষদ একটি কমিটির দ্বারা পরিচালিত হয়। এই কমিটির প্রধান হচ্ছেন চেয়ারম্যান। ১৯২০ সাল থেকে নির্বাচিত বা মনোনীত ১০ জন চেয়ারম্যান যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার, প্লিডার বিজয় কৃষ্ণ মিত্র, অ্যাডভোকেট সৈয়দ নওশের আলী, অ্যাডভোকেট ওয়ালিউর রহমান, অ্যাডভোকেট খান বাহাদুর লুৎফর রহমান (দুবার), অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান, অ্যাডভোকেট সৈয়দ আবদুর রউফ, অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামসুর রহমান, অ্যাডভোকেট রওশন আলী ও অ্যাডভোকেট আবদুল কাদের।
সূত্র: যশোরনিউজ২৪