
Home সাহিত্যিক / Litterateur > পাগলা কানাই / Pagla Kanai (1809-1889)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 91403 বার পড়া হয়েছে
পাগলা কানাই / Pagla Kanai (1809-1889)
পাগলা কানাই
Pagla Kanai
Home District: Jhenaidah
Pagla Kanai
Home District: Jhenaidah

আধ্যাত্নিক চিন্তা চেতনার সাধক-অসংখ্য দেহতত্ত্ব, জারি, বাউল, মারফতি, ধূয়া, মুর্শিদি গানের স্রষ্টা পাগলা কানাই ১৮০৯ সালে তৎকালীন যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার লেবুতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কুড়ান সেখ এবং মাতা মুমেনা খাতুন।
বাল্যকালে পিতৃ বিয়োগের কারণেই বেড়বাড়ি গ্রামে তাঁর ভগ্নী সরনারা বেগমের আশ্রয়ে তিনি এবং তাঁর ছোট ভাই উজল লালিত পালিত হন। তাঁর প্রকৃত নাম কানাই সেখ। বাল্যকালে তিনি কিছুটা পাগলাটে স্বভাবের ছিলেন এবং পরবর্তীকালে আধ্যাত্নিক চেতনায় বিভোর হয়ে ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন। তাই লোকে তাঁকে পাগলা কানাই বলে ডাকতো। এ কারণেই ‘পাগলা কানাই’ নামে তিনি সমধিক পরিচিত।
শিক্ষাজীবন:
গ্রামের মক্তবে তিনি কিছুদিন পড়াশোনা করলেও চঞ্চল স্বভাবের জন্যে তাঁর লেখাপড়া বেশীদূর অগ্রসর হতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর রচিত একটি গানের

“লেখাপড়া শিখব বলে পড়তে গেলাম মক্তবে
পাগলা ছ্যাড়ার হবে না কিছু
ঠাট্টা করে কয় সবে।
ছ্যাড়া বলে কিরে তাড়ুম তুড়ুম
মারে সবাই গাড়ুম গুড়ুম
বাপ এক গরীব চাষা
ছাওয়াল তার সর্বনাশা।
সে আবার পড়তে আসে কেতাব কোরান ফেকা
পাগলা কানাই কয় ভাইরে পড়া হল না শেখা।
বাউলজীবন:
তৎকালীন সময়ে কবিত্ব প্রতিভায় লালনের পরেই তাঁর স্থান নিরূপণ করা যায়। পুঁথিগত বিদ্যা না থাকলেও আধ্যাত্নিক চেতনায় জ্ঞানান্বিত হয়ে অপরূপ সৃষ্টি সম্ভার নিয়ে গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে দোতারা হাতে ঘুরে ফিরেছেন তিনি। তাঁর কণ্ঠের একটি গান আজও উচ্চারিত হয় মানুষের মুখে মুখে।

“সালাম সালাম সালাম রাখি দেশের পায়।
পয়লা সালাম করি আমি খোদার দরগায়
তারপর সালাম করি নবীজীরে
যিনি শোয়া আছেন মদিনায়
ওরে সালাম করি ওস্তাদের আর সালাম পিতা-মাতায়
অধম আমি পাগলা কানাই এল্যাম চাঁদ সভায়
আল্লাহ তরাও হে আমায়।”
পাগলা কানাই ইসলাম ধর্মের পরিপূর্ণ অনুসারী ছিলেন এবং ইসলাম ধর্মের বিধি বিধানগুলি সঠিকভাবে মেনে চলতেন। তাঁর বিভিন্ন গানের মধ্য দিয়ে তাঁর এই অভিব্যক্তি পরিস্ফুটিত হয়েছে।
ও, মোমিন মুসলমান, কর এই আকবারের কাম
বেলা গেল হেলা করি বসে রয়েছো
গা তোল্ গা তেল্
মাগরেবের ওয়াক্ত হয়েছে, এই সময় নামাজ পড়।

যশোর জেলার কেশবপুরের রসুলপুর গ্রামের নয়ন ফকিরকে তাঁর ওস্তাদ বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এই স্বভাব কবির সর্বাপেক্ষা পদচারণা ছিল ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। পরবর্তীতে তিনি ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফিরে পাবনা ও সিরাজগঞ্জে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। পাবনার বিখ্যাত ভাবুক কবি ফকির আলীমুদ্দীনের সাথে তাঁর আন্তরিক সখ্যতা গড়ে ওঠে।
এ সকল অঞ্চলের বিভিন্ন আসরে গান বেঁধে বিভিন্ন ভঙ্গীতে পরিবেশন করে হাজার হাজার শ্রোতাকুলকে ঘন্টার পর ঘন্টা সম্মোহিত করে রাখতেন পাগলা কানাই। তাঁর কন্ঠস্বর ছিল অত্যন্ত জোরালো মধুর। ৩০/৩৫ হাজার স্রোতা তার গান মাইক ছাড়াই শুনতে পেত। তাঁর জনপ্রিয় আধ্যাত্নিক গানের কয়েকটি লাইন।
‘গেলো দিন
শুন মুসলমান মোমিন
পড় রব্বিল আলামিন
দিন গেলে কি পাবি ওরে দিন
দীনের মধ্যে প্রধান হলো মোহাম্মদের দীন”।

পরলোক গমন:
বাংলার পথে, দোতারা হাতে, গান গেয়ে ফেরা মরমী গীতিকবি পাগলা কানাই ১৮৮৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য সূত্র:
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক: কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট:
ফেব্রুয়ারী ২০১২
ইউনুচ আলী