
Home নড়াইল জেলা / Narail District > লোহাগড়া উপজেলার প্রসিদ্ধ জনপদ / The glorious place of Lohagara upazila
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86877 বার পড়া হয়েছে
লোহাগড়া উপজেলার প্রসিদ্ধ জনপদ / The glorious place of Lohagara upazila
লোহাগড়া উপজেলার প্রসিদ্ধ জনপদ
The glorious place of Lohagara upazila
লোহাগড়া :
লোহাগড়া জেলার এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন নদী বন্দর ও জনপদ। লোহাগড়া সম্পর্কে বলা হয় এটি রাজা সীতারামের রাজ্যের অংশ। এখানে সীতারামের একটি সেনানিবাস ছিল। ফলে যুদ্ধের প্রয়োজনে গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর জন্য এখানে কামারশালা ছিল। ফলে পরবর্তীতে কারখানার বিলুপ্তি ঘটলেও মাটির নীচে যত্রতত্র লোহার বিভিন্ন খন্ড পাওয়া যাওয়ায় স্থানটি লোকমুখে লোহাগড়া নামে অভিহিত হতে কালক্রমে এই নামটিই স্থায়ী হয়ে যায়।
বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ডাঃ মহেন্দ্রনাথ সরকার, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, আইনজীবি ও যশোরের সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের (CIE- Companion of Indial Impair) মত বিখ্যাত ব্যক্তির জন্য প্রসিদ্ধ এ এলাকা। এখানকার গুড়ের সন্দেশ, গৌরাঙ্গ মন্দির বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। এখানকার গুড়ের সন্দেশ সম্পর্কে প্রখ্যাত বৃটিশ লেখক উলিয়াম হান্টার তার INDIAN MUSALMAN নামক গ্রন্থে প্রশংসা করেছেন। তাছাড়া প্রাচীনকালে এখানে বড় একটি স্টীমার ঘাট এবং রাজা সীতারাম রায়ের শক্তিশালী সেনানিবাস ছিল।
ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য খ্যাত এই লোহাগড়া দেশীয় পদ্ধতিতে গুড় থেকে চিনি তৈরীর ৬/৭টি কারখানা ছিল। কিন্তু উণবিংশ শতাব্দীর দিকে এই চিনি কারখানাগুলির বিলুপ্তি ঘটে। এখানে একসময় সোডালেমনেড নামে সফটড্রিংক তৈরীর বেশ কয়েকটি কারখানাও ছিল। এছাড়া ছিল ৪/৫টি কাঠের গোলা। নৌকা ও আসবাবপত্রাদি তৈরীতে এই সমস্ত কাঠ ব্যবহৃত হতো। লোহাগড়ায় এক সময় প্রচুর মাছ ও দুধ পাওয়া যেত। দুধ সস্তার ফলে বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি, খাঁটি ঘি এবং মাখনের জন্য লোহাগড়ার খ্যাতি ছিল। কিন্তু এখন লোহাগড়ার ব্যবসা বাণিজ্যের অতীত ঐতিহ্য তেমন আর নেই। কিন্তু এখন লোহাগড়ার ব্যবসা বাণিজ্যের অতীত ঐতিহ্য তেমন আর নেই। তবে বর্তমানে এলাকাটি ধান, পাট ও ডালের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে লোহাগড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় এবং রামনারায়ন পাবলিক লাইব্রেরীর অবদান উল্লেখযোগ্য। লোহাগড়া পাবলিক লাইব্রেরীটিতে বহু প্রাচীন আমলের তালপাতায় সুন্দর হস্তাক্ষরের পুথির বিরল সংগ্রহ লাইব্রেরীটিকে গৌরব দান করেছে।
অর্ধশতাব্দী পূর্বেও লোহাগড়ার সাথে খুলনা এবং অন্যান্য অঞ্চলে নৌপথে ব্যবসা বাণিজ্য চলত। তখন নৌপথ ছাড়া লোহাগড়ার অন্য কোন বাণিজ্য পথ ছিল না। কিন্তু নবগঙ্গা নদী নাব্যতা হারানোর ফলে কৃষিপণ্যের সমৃদ্ধশালী বাণিজ্য কেন্দ্র লোহাগড়ার সাথে এখন স্থলপথে পণ্য আনা-নেয়া করা হয়।
লক্ষ্মীপাশা :
লোহাগড়া উপজেলা সদরের অধিকাংশ অফিস আদালত এখানে অবস্থিত। এখানে আছে লক্ষ্মীপাশার প্রাচীন কালিবাড়ী। এক সময় এই গ্রামে প্রসিদ্ধ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে এখানে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি উচ্চবিদ্যালয়ও এখানে রয়েছে।
ইতনা :
প্রাচীন সরকারী কাগজে লেখা আছে ইতিনা। বর্তমানে সবাই ইতনা লেখে। মধুমতি নদীর তীরে একটি প্রাচীন ঐতিহ্য ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম এই ইতনা। প্রচুর সংখ্যক শিক্ষিত পরিবারের বাস এখানে। এখানে একটি প্রাচীন উচ্চবিদ্যালয় ও একটি বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে। গত কয়েক বছর আগে এখানকার হাইস্কুলের সাথে গড়ে উঠেছে একটি উচ্চমাধ্যমিক কলেজ। এ গ্রামে আছে পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পোস্ট অফিস, গণ-গ্রন্থাগার, ইউনাইটেড ক্লাব ইত্যাদি। এছাড়া প্রথম মহাযুদ্ধের সময় গঠিত সেবা সমিতি সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখনও চালু রয়েছে। ১টি বাজার, একটি ব্যাংকের শাখাও এখানে আছে। ১৯৭১ সালের ২৩ মে পাক বাহিনী এই গ্রামে গণ হত্যা চালিয়ে ৬৮ জনকে হত্যা করে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন ও বৈদেশিক সার্ভিস), সেনা, নৌ-বাহিনীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন পদে কর্মরত আছেন এই গ্রামের অনেক সন্তান। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে ইতনা একটি বিখ্যাত গ্রাম।
মহিশাহপাড়া :
একটি প্রাচীন মুসলিম ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। মধুমতি নদীর করাল গ্রাসে গ্রামটির বেশীরভাগ অংশ বিলীন হয়েছে। হযরত খান জাহান আলীর এক নৌ-সেনা হযরত শাহ মহিউদ্দিনের নাম অনুসারে গ্রামটির নাম হয় বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়।
লোহাগড়া কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমাজকল্যাণ অনুষদের ডীন ও লোক প্রশাসন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ মিঞার জন্মস্থান এ গ্রামে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ ফতেহ আলী মিঞা, নড়াইল সরকারী ভিক্টেরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শেখ আব্দুর রউফ, উপাধ্যক্ষ জহুরুল হক ঠাকুর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক জহুরুল হক, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ শাহ ফয়েজ আলম, ডাঃ শাহ ফজল এলাহী, আমেরিকার প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডাঃ গোলাম মোহাম্মদ নওয়াজ মিঞা, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ গরীবনেওয়াজ মিঞা, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক মনিরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা শেখ মতিয়ার রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন সেকেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নির্বাচিত সেক্রেটারী মোঃ মুজিবর রহমান, পুলিশ অফিসার ফকির মতিয়ার রহমান, বি.সি.এস (শিক্ষা) ফকির মনিরুল ইসলাম, জনতা ব্যাংক সি.বি.এ নেতা শেখ মিজানুর রহমান, সোনালী ব্যাঙ্কের অফিসার এসোসিয়েশনের নেতা সরদার মোস্তফা কামাল, এককালীন কৃষক নেতা শেখ আজিজুর রহমান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পরিচালক সাহাবুদ্দিন আহমেদ, সলিমুল্লাহ (পাপ্পু) সহ অনেক নামকরা লোকের জন্মস্থান এই গ্রামে।
দীঘলিয়া :
বর্তমান ভরাট হয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এককালের প্রসিদ্ধ নদীবন্দর। এখানে রয়েছে নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
ঘাগা :
মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রাম। এক সময় বহু বর্ধিষ্ণু হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল এখানে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল হাসানের গ্রামের বাড়ী। এই গ্রামের প্রবীণ আওয়ামীলীগের নেতা মরহুম মাহবুবুল হক (বাবু বিশ্বাস) শেখ মুজীবের অতি ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন।
লংকার চর :
মধুমতি নদীর তীরে পূর্ব নড়াইল জেলার একটি গ্রাম। ১৯৭১ সালে মধুমতি নদীর গতি পরিবর্তন হওয়ার ফলে বিরাট বাওড় সৃষ্টি হয়েছে। এই বাওড় আজও জয়বাংলার বাওড় নামে পরিচিত। শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা সেখ ওলিয়ার রহমানের জন্মস্থান এই গ্রাম।
পাংখার চর :
পূর্ব লোহাগড়া উপজেলার চরাঞ্চলের প্রসিদ্ধ একটি গ্রাম। এখানে একটি হাইস্কুল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। একটি বেসরকারী ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস.এম. আলম, অধ্যাপক মোশারফ হোসেন সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম এই গ্রামে।
রাধানগর :
বৃটিশ রাজত্বকালে সার্ভে পিলার ও প্রসিদ্ধ বাজার ছিল। বহুদিন বাজারটি জমজমাট ছিল না। নব্বই দশক থেকে এই বাজারটি জমজমাট হয়েছে এবং লোহাগড়া থেকে পাকা রাস্তা এই বাজার পর্যন্ত তৈরি হয়েছে।
মকমপুর :
লোহাগাড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের একটি গ্রাম। প্রখ্যাত মহিলা জমিদার রাণী রাসমনি নির্মিত কাছারী, অট্টালিকা ও দীঘির জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম।
কলাগাছী :
মহাভারতের বাংলা অনুবাদক বাবু কালি প্রসন্ন ঘোষের জন্মভূমি। বৃটিশ আমলে এই গ্রামে একটি হাইস্কুল ছিল। রাজা সীতারাম রায়ের প্রধান সেনাপতি মৃন্ময় ঘোষ (মেনাহাতি) এর জন্মভূমি। রায় গ্রামে বিখ্যাত একটি জোড় মন্দির রয়েছে।
বাহির পাড়া :
বহু শিক্ষিত লোকের বাস এখানে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সদরুদ্দিনের পৈত্রিক বাড়ী এ গ্রামে। ফরিদপুর শহরের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী মহসীন আলীরও এ গ্রামের বাসিন্দা।
যোগিয়া :
পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রধান দোসর, ‘‘প্রভাতী জামাত’’ এবং ‘‘আসছে মুগুর’’ নামক বিখ্যাত বইয়ের রচয়িতা, বৃটিশ সরকার কর্তৃক পুরস্কার প্রাপ্ত মরহুম মৌলভী শামছুদ্দীন আহম্মদ (তারা মিঞা) এর জন্মস্থান। এই গ্রামে বঙ্গবন্ধু নামে ৩৩ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল ও ‘একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সাবেক পরিচালক মোল্লা তবিবুর রহমান, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ মোজাহার উদ্দিন, পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক রবিউল ইসলাম সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মস্থান এ গ্রাম।
পাচুড়িয়া :
একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। বহু উচ্চ শিক্ষিত ও পদস্থ চাকুরী জীবীর বাসস্থান। গ্রামটি নবগংগা নদীর তীরে অবস্থিত। লন্ডনে বসবাসরত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক ডাঃ মোঃ শরীফ আনোয়ার হোসেনের জন্মস্থান এখানে। বছরে তিন মাস তিনি গ্রামে এসে স্বল্পব্যায়ে রোগী দেখেন। এখানে একটি হাইস্কুল, পোস্ট অফিস ও বাজার আছে।
ধলাইতলা :
একটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম। বহু পদস্থ অফিসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ জাফর, পুলিশ বিভাগের সাবেক ডি.আই.জি.পি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুর রহমান, সাবেক এ.আই.জি.পি মরহুম গাজী ওলিউর রহমান, তারপুত্র কর্ণেল (অবঃ) গাজী কামাল, ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান, আমেরিকার টেকশাস শহরে কর্মরত বিশিষ্ট চিকিৎসক সৈয়দ মিজানুর রহমান, অবসর প্রাপ্ত নৌ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সৈয়দ ওলিউর রহমান, ত্রান মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ আবু নাছের, মোঃ আবুল কালাম (সাবেক ইপিসিএস ১৯৭০), পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবুল বাশার, অধ্যক্ষ কাজী এমদাদুল হক, অধ্যক্ষ গাজী লুৎফর রহমান, অধ্যক্ষ বাদশা মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ঢাকাস্থ যশোর সমিতির নেতা গাজী সাইফুল ইসলাম, সৈয়দ মুরাদ হোসেন (বহুদিন ব্যাংককে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত ছিলেন এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক সৈয়দ হাসনুজ্জামান (ফুড), ডেসার কর্মকর্তা শেখ হারুনর রশিদ সহ অনেক সরকারী ও বেসরকারী এবং সামরিক কর্মকর্তার জন্মভূমি। এই গ্রামে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাকঘর, মাদ্রাসা ও একটি লঞ্চঘাট রয়েছে।
কুমড়ি :
জেলার লোহাগড়া উপজেলার একটি বড় গ্রাম। এখানে একটি হাইস্কুল ও ডাকঘর আছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এই গ্রামে অবস্থানরত নক্সালদের সংঘষ হয়। মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস (যতু) সহ ৫জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়। এই গ্রামের মানুষের রয়েছে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবজ্জল ভূমিকা। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শামছুর রহমান, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি-অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান, সাবেক জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি আলতাফ হোসেন, সাবেক ছাত্র নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার চাঁদ মিয়া, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শেখ মোশারফ হোসেন (ডাবু) সহ বহু সরকারী ও বেসরকারী পদস্থ কর্মকর্তারা এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন।
তালবাড়ীয়া :
সাবেক যুব সচিব আকরামুল ইসলাম ও সাবেক যুগ্ম সচিব কাতেবুর রহমানের জন্মস্থান এই গ্রাম।
কালিগঞ্জ :
এক সময় মধুমতি নদী কালিগঞ্জ দিয়ে প্রবাহিত হত। তখন কালিগঞ্জ ছিল বিরাট নদী বন্দর। সে সময় এই কালিগঞ্জের হাট ছিল বিখ্যাত। এখন এই হাট বিলুপ্ত। কারণ মধুমতি নদী অনেক দূরে সরে গেছে। এখন সেই জমজমাট হাট লাহুড়িয়ায়।
লাহুড়িয়া :
মুঘর সেনাপতি লাহুড় খাঁর নামানুসারে লাহুড়িয়া গ্রামের নাম হয়েছে বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রাম। এখানে একটি বাজার, ব্যাংকের শাখা, সিনিয়ার মাদ্রাসা, বালক ও বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং একটি কলেজ রয়েছে। লাহুড়িয়াকে একটি থানা করার জন্য এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন দাবী জানিয়ে আসছে। বর্তমান যশোর শহরে বসবাসরত বিশিষ্ট শিল্পপতি এস.এম. এ আহাদ এর পৈত্রিক বাড়ী। এছাড়াও প্রায় ৫০ বছর লন্ডনে বসবাসরত বিশিষ্ট সমাজ সেবক সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেন, হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ আতিয়ার রহমান, সাবেক জেলা জাতীয় পার্টির সম্পাদক তবিবুর রহমান (মানু জমাদ্দার) এর জন্মস্থান এই গ্রাম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এই গ্রামে কিছুদিন পর্যন্ত চরমপন্থি কম্যুনিষ্ট পার্টির রাজনৈতিক একটি ঘাঁটি ছিল। এলাকায় এরা নক্সাল বলে পরিচিত। ৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে নক্সালদের সাথে এই গ্রামে মুক্তি যোদ্ধাদের সম্মুখে যুদ্ধ হয়। এতে ১জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২ জন নক্সাল নিহত হয় এবং আহত হয় ১১ জন। ধরা পড়ে অনেক নক্সাল।
ঝাউডাঙ্গা :
জেলার লোহাগড়া উপজেলার একটি ছোট মুসলিম গ্রাম। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ ফরিদ আহমদ, সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মমিনউদ্দিন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এম আবুল কাশেম এর জন্মস্থান এই গ্রাম।
নওখোলা :
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ ও বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা খাঁন নূরুল আমানের গ্রামের বাড়ী এখানে।
পার শালনগর :
লোহাগড়া উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ড. সৈয়দ ফরিদ আহমদ এবং শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেনের জন্মস্থান এই গ্রামে।
মানিকগঞ্জ বাজার :
১৯৮০ সালের পর লোহাগড়া লাহুড়িয়া, মরিচপাশা, বাবরা ও আড়পাড়া চৌরাস্তায় গড়ে উঠেছে একটি বাজার। প্রথমে মানিক নামে এক যুবক ছোট একটি পান সিগারেটের দোকান শুরু করে রাস্তার পাশে। ধীরে ধীরে আরও দোকান ঘর গড়ে উঠে। সেখান থেকে মানিকগঞ্জ বাজার নামে ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে উঠে। এখন খুব জমজমাট বাজারটি।
করফা :
একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। এই গ্রামের নৌকা ব্যবসা এককালে বিখ্যাত ছিল। আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘‘করফায়ে নৌকা’’ হিসাবে পরিচিত। মধুমতি নদীর ভাংগনে গ্রামটি সম্পূর্ন বিলীন হয়ে গেছে। এই গ্রামের লোকেরা অন্যত্র বসবাস করছে এবং অনেকে উচ্চ পর্যায়ে আসীন হয়েছেন। বৃহত্তর ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ (ডেসা) পরিচালক শিকদার সাইদুর রহমান, অধ্যক্ষ হেমায়েত উদ্দিন ভূঁইয়া, এক সময়ে খুলনার বিশিষ্ট শিল্পপতি মরহুম সরোয়ার রহমান ভূঁইয়া, বনবিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ, চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। যশোরের বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক ডাঃ আকতারুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা মোঃ মহসীন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) নেতা শমশের আলী (পল্টন) সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মস্থান। প্রাচীনকালে একটি ষ্টীমার ঘাট ছিল এখানে। বর্তমানে লঞ্চঘাট রয়েছে। এখানে বহুদিন যাবৎ সাপ্তাহিক হাট বসে।
রঘুনাথপুর :
লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। এখানে একটি ইন্টারমিডিয়েট (আলিম) পর্যায়ের মাদ্রাসা আছে। এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ঐ গ্রামের মৌলভী মহিউদ্দিন বরকতী।
শিয়ারবর :
মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত। এক সময় বৃহত্তম পাট বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। নদীর ভাংগনে শিয়ারবর হাট অনেক দূরে সরে গেছে। হাটটিতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়।
আমডাঙ্গা :
মধুমতি নদীতে গ্রামটি সম্পূর্ন ভেঙ্গে গেছে। নতুন করে পূর্বতীরে ও পশ্চিমতীরে গ্রামটি তার প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে রয়েছে। বৃটিশ রাজত্বকালে এই গ্রামে একটি প্রসিদ্ধ নীলকুঠি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আশরাফ আলী, এককালীন মেধাবী ছাত্র হোটেল শেরাটন ও হোটেল সেনারগাঁও এর সাবেক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুন্সি মোবাস্বের হোসেন (বুলু) এর জন্মস্থান। তিনি বর্তমানে কানাডায় কর্মরত। এছাড়া বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি আজহার উদ্দিন ঠাকুরের জন্মভূমি।
চাচই :
একটি বড় গ্রাম। হাইস্কুল, মাদ্রাসা, এতিমখানা রয়েছে এখানে। এই গ্রামে একটি প্রাচীন দীঘি আছে। মুক্তিযুদ্ধে এই গ্রামের মানুষের সাহসী ভূমিকা গৌরবজ্জল।
মরিচপাশা :
একটি প্রাচীন গ্রাম। এখানে একটি উচ্চবিদ্যালয় এবং একটি দাতব্য চিকিৎসালয় আছে। লেখক ডাঃ এস.এম. লুৎফর রহমানের দাদার বাড়ি।
বাবরা :
ছোট্ট একটি গ্রাম। এই গ্রামের শরীফ বংশের লোকেরা বর্ধিষ্ণু।
গোবিন্দপুর :
জেলার লোহাগড়া উপজেলার গোবিন্দপুর এক সময় খুব দরিদ্র গ্রাম ছিল। শিক্ষার হার ছিল অত্যন্ত কম। বর্তমানে এই গ্রামের দুটি পরিবারের সন্তানেরা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে ভাল করছে। এদের মধ্যে মেজর কিবরিয়া, ক্যাপ্টেন তানজির, বিমান বাহিনীর অফিসার জুয়েল, ইঞ্জিনিয়ার কোরের মেজর সবুজ ও জাকির (বর্তমানে জাপানের টোকিওতে কর্মরত)।
মন্ডলবাগ :
মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত একটি পুরাতন বাজার। এর পাশেই অবস্থিত শালনগর মর্ডাণ একাডেমী।
কালনা :
একসময়ে যশোর অঞ্চলের বৃহৎ নৌ-খেয়াঘাট ছিল। একটি প্রাচীন নদী বন্দরও ছিল। বর্তমানে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জন্য কালনায় এক ফেরী ঘাট গড়ে উঠেছে। এক সময় কালনায় লোহাগড়া থানা অফিস অবস্থিত ছিল। এখানে মুন্সেফী আদালতও ছিল। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এখানে একটি ছোট সেনা ছাউনি ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এখানে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়েছিল। কালনার পূর্ব তীরে ভাটিয়াপাড়ায় (গোপালগঞ্জ জেলায়) পাক বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল।
মল্লিকপুর :
একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। ইংরেজ রাজত্বকালে এই গ্রামের উচ্চবর্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা শিক্ষিত খ্যাতিমান ছিল। সুসাহিত্যিক মালধর চট্টপাধ্যায়, প্রখ্যাত চিকিৎসক মরহুম ডাঃ মোকলেসুর রহমান, লেখক মমিনুর রহমান, বনবিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুন্সী আনোয়ারুল ইসলামের জন্মভূমি। এখানে একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র অবস্থিত। এছাড়া স্বাধীনতার পর সত্তর দশকের শেষের দিকে এই গ্রামের আরও কিছু যুবক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ভাল সরকারী চাকরি করছেন। বিসিএস (বিচার) বিভাগে কর্মরত শেক হুমায়ুন কবির ও সাজ্জাদ হোসেনের জন্মস্থান এই মল্লিকপুর।
চরকরফা :
ছোট একটি গ্রাম। শিক্ষার হার অনেক কম। আশির দশকের মাঝে স্থাপিত হয়েছে একটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাট গবেষণা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান (মন্নু), ডাক ও টেলিযোযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিকদার বুলুমিয়া ও বিসিএস (শিক্ষা) থেকে সরকারি কলেজে কর্মরত সরদার ইমদাদুল হক ও ফুল মিয়ার গ্রামের বাড়ী। ইদানিং এই গ্রামের মানুষের মাঝে লেখা পড়ার উৎসাহ জেগেছে।
রামকান্তপুর :
জেলার লোহাগড়া উপজেলার একটি গ্রাম। নড়াইল শহরের প্রথম মুসলিম ধনী ব্যবসায়ী মরহুম আব্দুল মোতালেবের গ্রামের বাড়ি। এছাড়া বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজকর্মী মেজর (অঃ) লুৎফর রহমানের জন্মস্থান।
ধোপাদহ :
প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ মফিজুর রহমান, প্রকৌশলী এটিএম ওয়াহিদ আজহারসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মস্থান। জনাব ওয়াহিদ আজহার বর্তমান খুলনার কেডি. এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত।
আড়িয়ারা :
প্রখ্যাত কামেল শাহ মঈনুদ্দিনের জন্মস্থান। এখানে একটি হাইস্কুল রয়েছে। এই গ্রামের দেওয়ান (ফকির) পরিবার খুব প্রসিদ্ধ।
কোলা :
পেড়লীর প্রখ্যাত পীর এবং বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সাবেক উপ প্রধান কমোডর মরহুম জালাল আকবরের গ্রামের বাড়ি।
আমাদা :
একটি বড় গ্রাম। এখানে একটি হাইস্কুল, বালিকা বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। পঞ্চাশ ও ষাট দশকে যশোর অঞ্চলের বিশিষ্ট আইনজীবি মরহুম মোশারফ হোসেন খান, ব্রিগেডিয়ার হাশেম খানসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি। এই গ্রামের খাঁন বংশের বহুকাল যাবৎ খ্যাতি রয়েছে। ইংরেজ শাসনামলে এই গ্রামের জমির হোসেন খাঁন ছিলেন একজন পুলিশ বিভাগের উর্ধ্বন কর্মকর্তা।
কাশিপুর :
জমিদার দুর্গাচরণ, এককালের প্রসিদ্ধ চিকিৎসক প্রয়াত কিরণচন্দ্র, দার্শনিক ক্ষিতিশচন্দ্র চট্টোপধ্যায়, কবি জ্ঞানাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর ডিপার্টমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর ডিপার্টমেন্টের এক সময়ের প্রধান ডঃ তুষার কান্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান। এখানে একটি হাইস্কুল রয়েছে।
চরবালিদিয়া :
বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র তারকা সুচন্দা, ববিতা ও চম্পার মাতুলালয় (নানা বাড়ি)। এছাড়া বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর) বিভাগে কর্মরত অতিরিক্ত কর কমিশনার ফিরোজ আহমদের জন্মস্থান।
চরকোটাকোল :
অতিরিক্ত জজ আব্দুর রউফ, বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ আজিজুর রহমান, অধ্যক্ষ আতিয়াররহমান, ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবুল বাশারের জন্মস্থান।
নলদী :
একটি ইতিহাস প্রসিদ্ধা গ্রাম। মুসলিম শাসন আমল হতে নলদী প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্ব পেয়ে আসছে। ‘‘পরগনা নলদী’’ একটি প্রসিদ্ধ পরগনা। নলদীতে রাজা সীতারাম রায়ের একটি সেনানিবাস ছিল। বর্তমানে নলদীতে ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে তার অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এখানে একটি হাইস্কুল, ব্যাংকের শাখা, টেলিফোন (পি.সি.ও) সহ পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।
জয়পুর :
নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। এককালে এই গ্রামের বহু বর্ধিষ্ণু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল। বিখ্যাত কবিয়াল তারক গোসাই এর জন্মভূমি। এই গ্রামে নবগঙ্গা ও ছাতরা খালের ত্রিমোহনায় একটি সুন্দর ঈদগাহ নির্মিত হয়েছে। এই ঈদগাহ ময়দানের অবস্থান ও সৌন্দর্য্যে বিমুগ্ধ হয়ে কবি ও সাহিত্যকরা এর রূপ বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। ১৯৫৪ সালের জুলাই মাসে এ অঞ্চলে বেড়াতে এসে পাকিস্তানী বিশিষ্ট উর্দু কবি শাহ মোঃ সরফরাজ এই ঈদগাহ ময়দান দেখে মন্তব্য করেছেন “স্থাপত্য শিল্প যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্য্য পিপাসু মানুষের হৃদয়ের পথ প্রদর্শক হিসাবে এক উজ্জ্বল গৌরব বহন করে আনে”। আশির দশকে এই ঈদগাহের সাথে একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা স্থাপিত হয়েছে। এখন আর ঈদগাহ এর পাশে ত্রিমোহন নদী নেই। ঈদগাহের সামনে ১৯৯৩ সালে জয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুর আলম ও ঢাকায় কর্মরত বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ জাফরের প্রচেষ্টায় একটি ক্রস বাঁধ নির্মাণ হয়েছে।
এগারনলী :
বৃটিশ শাসনামলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মরহুম আকরামুজ্জামানের জন্মস্থান। তার ছোট ভাই ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা লোহাগড়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ স.ম. আনোয়ারুজ্জামান। গ্রামটি মধুমতি নদীর ভাংগনে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
মাকড়াইল :
জেলার লোহাগড়া উপজেলার উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রাম। মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাংগনের ফলে গ্রামটির বহু লোক অন্যত্র চলে গেছে। তথাকথিত আগরতলা ষঢ়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী মরহুম লেঃ (অবঃ) মতিয়ার রহমানের জন্মস্থান এখানে। এছাড়া খুলনার বিশিষ্ট শিল্পপতি ও প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কাজী শাহনেওয়াজ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (অডিট এন্ড একাউন্ট) কর্মকর্তা মিয়াদ মোহাম্মদ শহীদ, ইঞ্জিনিয়ার দাউদ হোসেন, অধ্যাপক আরিফ আযদানি (বিসিএস শিক্ষা), অধ্যাপক মা’রুফ সামদানি সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মস্থান। এই গ্রামে একটি হাইস্কুল আছে। মিয়া মোহাম্মদ শহিদের প্রচেষ্টায় ১৯৯৩ সালে স্থাপিত হয়েছে লাল মিয়ার নামে একটি এতিমখানা ও মাদ্রাসা।
বাতাসী :
ঢাকাস্থ যশোর সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদ শেখ রাহেন উদ্দিনের জন্মস্থান। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী ঢাকায় পলাশী ব্যারাকে সরকারী কলোনীতে ঢুকে নামাজ পড়ার সময় গুলি করে এই ব্যক্তিকে হত্যা করে। তিনি বিশিষ্ট সমাজ সেবক ছিল।
আযমপুর :
মুসলিম অধ্যুষিত একটি গ্রাম। মধুমতি নদীর ভাংগনে গ্রামটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। প্রখ্যাত চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক কাজী মশিউর রহমান এর জন্মস্থান।
কোটাকোল :
লোহাগড়া উপজেলার একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। এই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সরকার বংশ এক সময় বিখ্যাত ছিল। সরকার বংশের পূর্ব পুরুষ রাজা সীতারাম রায়ের দেওয়ানা ছিলেন। এই গ্রামের জোড় মন্দির পুরাকীর্তির অন্তর্ভূক্ত। একটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। এই গ্রামের নামে ইউনিয়ন পরিষদ।
মোচড়া :
লোহাগড়া উপজেলার অতি নিকটে এক সময়ের খরস্রোতা কান্ধার খালের তীরে অবস্থিত। গ্রামের অনেক শিক্ষিত যুবক বর্তমানে ভাল ভাল কর্মসংস্থানে দিয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার আলীনুর হোসেন, ডাঃ আমিনুর রহমান, নৌ-বাহিনীর অফিসার লেঃ কমান্ডার এম.এ. ইদ্রীস, চক্ষু বিশেষজ্ঞ রেজানুর রহমান এর জন্মভূমি এই গ্রাম।
কামঠানা :
এই গ্রামে একটি প্রাচীন ডাকঘর ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার গণেশ মজুমদার ও ইঞ্জিনিয়ার শোয়েব হোসেনের জন্মভূমি।
নকখালি :
জেলার লোহাগড়ার উপজেলার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম। সেনাবাহিনীর অফিসার কর্ণেল আব্দুল হাই এর জন্মভূমি। তিনি সেনাবাহিনী থেকে বেশ কিছুদিন বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন।
কুমুরকান্দা :
ছোট্ট একটি গ্রাম কিন্তু ইতিহাস খ্যাত। রাজা সীতারাম রায়ের নৌ-ঘাঁটি ছিল এখানে। বিচারপতি মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর জন্মস্থান। এই গ্রামের মহিলাদের তৈরি নকশী কাঁথা এক সময় প্রসিদ্ধ ছিল। এই গ্রামের মরহুম আব্দুল হাকিম মিয়া ছিলেন একজন মুসলিম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
কুন্দশী :
এককালে গ্রামটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের কুমার ও মৎস্যজীবি সমপ্রদায়ের অধিবাসিরা বসবাস করতো। এছাড়া উচ্চ বর্ণের হিন্দু সমপ্রদায়ের গুটি কয়েক পরিবারও বাস করতো। নড়াইলের বিশিষ্ট আইনজীবি বারিন ভট্টাচার্য, ঢাকায় কর্মরত ব্যবসায়ী ও এককালীন বাকশালী রাজনীতির সাথে জড়িত সমির রায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মরত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেবদাস রায় (দেবু) সহ বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মস্থান।
বাটিকা বাড়ি :
ছোট গ্রাম। লোহাগড়া কলেজের অধ্যক্ষ ইবনে হাসানের জন্মভূমি।
গন্ডব :
এক কালের এ জেলার প্রসিদ্ধ বিল ইছামতি তীরে অবস্থিত গন্ডব। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় এ জেলার বিশিষ্ট ছাত্র নেতা এবং ১৯৭১ সালের নক্সালপন্থী নেতা মমতাজ উদ্দিনের জন্মস্থান। সাবেক ছাত্রনেতা শেখ আজিজুর রহমান, জেলা জাসদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম, বিসি.এস. (প্রশাসন) সার্ভিসে কর্মরত শেখ শোয়েবুল আলম, বিসিএস (পুলিশ) সার্ভিসে কর্মরত শেখ নাজমুল আলম ও শেখ আবু তালেবের জন্মস্থান।
শরশুনা :
ইছামতির তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা বিশিষ্ট আইজীবি ও রাজনীতিবিদ মরহুম মুন্সী আসাদুজ্জামানের জন্মস্থান। এছাড়া এই গ্রামের অনেক শিক্ষিত চাকুরীজীবি অন্যত্র বসবাস করছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই গ্রামে নক্সালপন্থীদের একটি ঘাঁটি ছিল। সে সময়ের নক্সালপন্থী নেতা পরবর্তীতে লোহাগড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান আওয়ামীলীগে যোগদানকারী নেতা শেখ আব্দুস সবুর এর জন্মস্থান।
নারান্দিয়া :
লোহাগড়ার উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম। এককালে বহু হিন্দু (নমশুদ্র) সম্প্রদায়ের বাস ছিল। খুলনা মেডিকেল কলেজের মানসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ ধিরাজমোহন বিশ্বাস ও তার ভাই বিসিএস (প্রশাসন) সার্ভিস-এ বর্তমান ঢাকা কালেক্টরে আরডিসিও পদে কর্মরত অশোক কুমার বিশ্বাসের জন্মস্থান।
মঙ্গলহাটা :
লোহাগড়া উপজেলার একটি বড় গ্রাম। এক সময় গ্রামটি লেখাপড়ায় অনগ্রসর ছিল। এখন বেশ অগ্রসর হয়েছে। সাধারণ বিমার কর্মকর্তা এম.এ. খায়ের, শ্রম আদালতের যুগ্ম পরিচালক এস.এম আজিজুর রহমান ও একটি বেসরকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান জন্ম এই গ্রামে।
তথ্য সূত্র :
নড়াইল জেলার অতীত ও বর্তমান
লেখক : আকরামুজ্জামান মিলু
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
১১ আগস্ট ২০১২