
Home ঐতিহ্য (Tradition) > শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম, যশোর
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86921 বার পড়া হয়েছে
Ramkrishan Asram Mission
যশোর রেল স্টেশনের নিকটবর্তী প্রায় পাঁচ বিঘা জমির উপর এক নির্জন ও শান্ত পরিবেশে যশোর শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমটি অবস্থিত। যশোরের কৃতি সন্তান স্বামী সুধানন্দজী ইংরাজী ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে এটি স্থাপন করেন। স্বামীজীর পিতার নাম কালিদাস মুখার্জী এবং মাতার নাম শ্রীমতি সিদ্ধেশ্বরী দেবী। ১৩০৮ সালের ২৪ শে অগ্রহায়ণ নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পরিবারে এক সুন্দর কান্তি শিশু জন্মগ্রহণ করে। সংসার ত্যাগ করে দীক্ষা নিয়ে একদা স্বামী সুধানন্দ নাম ধারণ করেন। স্বামী সুধানন্দজী যশোর রেল ষ্টেশনের সন্নিকটে “শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম” প্রতিষ্ঠা করে এখানেই সারা জীবন ইষ্ট সাধানায় ব্যাপৃত থাকেন। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ছেলেরা তাঁর কাছে এলে তিনি আদর করতেন এবং তাদের শিক্ষা দেবার জন্য ১৯৪০ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোড়ে তোলেন। তাঁর মধুর ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যশোর মিউনিসিপ্যালিটির হাতে স্বামীজীর তুলে দেন এবং বর্তমানে বিদ্যালয়টি সরকারী রামকৃষ্ণ আশ্রম প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত।
যশোর শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমের সুদৃশ্য মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের একটি মর্মর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল। যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে ধ্বংস হয়। ঠাকুরঘরের পার্শ্বে যে শিব মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে তা রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজবাড়ীতে পূজিত হোত। ঠাকুরঘরের অপর পার্শ্বে আশ্রামের প্রক্তন সম্পাদক শ্রী অজিত কুমার ঘোষের অর্থে রাধাগোবিন্দ মন্দির প্রতিষ্ঠিত আছে। রাধা-গোবিন্দ মন্দিরের দক্ষিণ পার্শ্বে দুর্গা মন্ডপটি একদা স্বামী তারানন্দজীর ভগ্নি সরোজিনী দেবীর অর্থে নির্মিত হয়েছিল, যা কালের আবর্তনে ভগ্নপ্রায় হলে যশোরের অন্যতম ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক বাবু স্বপন ভট্রাচার্য ও তদীয় পত্নী শ্রীমতি তন্দ্রা ভট্টাচার্যের আর্থিক সহায়তায় সম্প্রতি একটি সুদৃশ্য দুর্গা মন্দির নির্মিত হয়েছে। সন্ন্যাসীদের বিশ্রামের জন্যে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা টিনের ঘর ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা টালির ঘর ছিল। এখন তা আর সেখানে নেই তবে সেখানে পূর্ব নির্মিত স্বামী সুধানন্দজীর সাধন কুঠি আজও বর্তমান। এর চূড়ায় লেখা সিদ্ধেশ্বরী স্মৃতি মন্দির-১৩৪৮। দরিদ্র ছাত্রদের বাসস্থান সমস্যা শহরে বড় একটি সমস্যা। এই সমস্যা দূরীকরণে শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা মহাশয়, ডাঃ গৌতম সাহা এবং শ্রী সাধন কুমার চন্দ্র তাদের স্ব স্ব পিতার নামে একটি বৃহৎ ছাত্রাবাস ১৯৮৬ সালে নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে আশ্রমের স্বীয় তহবিল থেকে ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলা নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে ছাত্রাবাসটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বেলুড় মঠের দ্বাদশ অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী ভূতেষানন্দজী মহারাজ।
শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম, যশোর এর প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রায় ৫০/৬০ গজ দূরে একেবারেই মুখোমুখি প্রতিষ্ঠিত আছে একটি বিরাট দ্বিতল ভবন। যার নীচতলা আশ্রমের সাধারণ ভক্তবৃন্দের অনুদানে নির্মিত হয়েছে। ভবনটির নীচ তলার একটি কক্ষ বর্তমান অফিস কক্ষ এবং বাকীটা ‘বিবেকানন্দ পাঠাগার’ রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৬টি পৃথক আবাস কক্ষ। যার প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে শৌচ ও স্নানাগার রয়েছে। ঐ ছটি কক্ষই আশ্রমের সাধু নিবাস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। ভবনের দ্বিতীয় তলার কক্ষ ছয়টি ছয় জন ভক্তের অনুদানে নির্মিত। তাঁরা হলেন শ্রীমতি লীলা কাপুড়িয়া, শ্রী নগেন্দ্র নাথ পাল, শ্রী শ্যাম সুন্দর সাহা, শ্রী হরেন্দ্র নাথ নন্দী, শ্রী শীতল চন্দ্র মোদক ও ডঃ সুধীর কুমার সাহা।
শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শ্রী দিলীপ কুমার বিশ্বাস ও তদীয় স্ত্রী শ্রীমতি মঞ্জুরাণী বিশ্বাস তাদের স্বর্গীয় পিতার নামে আশ্রমে প্রধান ফটকটি নির্মাণ করে দিয়েছেন। তাছাড়া আশ্রমের পুকুরটির ঘাট পাকা করে নির্মাণ করে দিয়েছেন প্রবাণী ভক্ত শ্রীমতি প্রতিমা রাণী সাহা।
আশ্রম পাঠাগারে আছে বহু ধর্মীয় এবং সাধারণ পুস্তক। আশ্রমের সমগ্র বেষ্টনী প্রাচীরের গাত্র সুদৃশ্য লোহার গ্রীল দ্বারা বেষ্টিত এবং গ্রীলের অভ্যন্তরভাগ মনোরম ফুল বাগান দ্বারা শোভিত যা সর্বদাই ভক্ত ও দর্শকবৃন্দের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এছাড়া দুর্গা মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে ভক্ত শ্রীমতি অতুলা রাণী বিশ্বাস ১টি এবং শ্রী প্রদীপ কুমার সুর ও তদীয় ভ্রতাগণ ১টি মোট ২টি ছাত্রাবাসের কক্ষ সম্প্রতি নির্মাণ করে দিয়েছেন। আশ্রমের অভ্যন্তরে সামগ্রিক রাস্তা উন্নতমানের পীচ দ্বারা নির্মিত। সর্বোপরি অত্র আশ্রমটির ফুল বাগান ও সুসজ্জিত ভবন সমৃদ্ধ মনোরম পরিবেশ ভক্ত সহ যে কোন দর্শকের হৃদয় আকর্ষণ করে। আশ্রমটি যশোর জেলার অন্যতম রুচিশীল ও ভাবগম্ভীর উপাসনালয় হিসাবে আজ সর্বজন স্বীকৃত।
যে কোন জাতীয় এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে অত্র আশ্রম পরিচালনা পরিষদ আজ এক যুগ ধরে ব্যাপক ত্রাণ কার্য পরিচালনা করে এতদাঞ্চলে সুনাম অর্জন করেছে।
প্রত্যহ মন্দিরে বিগ্রহের পূজা হয়। সন্ধ্যারতি, ভজন, গান, ধর্মীয় পুস্তক পাঠ ও আলোচনা হয়। প্রতি শুক্রবার কথামৃত পাঠ হয়। আশ্রম পরিচালনায় জন্য ২৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদ আছে। উপদেষ্টা আছেন ২৫ জন। এই আশ্রমে স্থায়ী আয়ের কোন ব্যবস্থা নেই, সহৃদয় ভক্ত মন্ডলী ও জনসাধারণের দানের দ্বারাই সমস্ত ব্যয় নির্বাহ করা হয়ে থাকে।
গোবিন্দ লাল সাহা সভাপতি শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম, যশোর। |
দিলীপ কুমার বিশ্বাস সাধারণ সম্পাদক শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম, যশোর। |
সংগ্রহ :
শ্রী তারাপদ দাস
প্রাক্তন শিক্ষক, সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন, যশোর
১৭.০৪.১১