
Home ঐতিহ্য (Tradition) > শ্মশান
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86850 বার পড়া হয়েছে
শ্মশান
Crematorium
হিন্দুদের মৃতদেহ সৎকারের জন্য মূলতঃ শ্মশানের সৃষ্টি। প্রবহমান নদীর তীরে শ্মশানগুলির অবস্থান। কালক্রমে এই শ্মশানগুলি তান্ত্রিক সাধনার কেন্দ্র হিসাবেও পরিগণিত হইয়াছে। ফলে অধিকাংশ শ্মশানে নির্মিত হইয়াছে তান্ত্রিক সাধকদের ক্ষুদ্র আবাস গৃহ। অনেক শ্মশানে দানশীল ধর্ম প্রাণ ব্যক্তিগণের বদান্যতায় গড়িয়া উঠিয়াছে মন্দির। এই সমস্ত মন্দিরে স্থাপিত হইয়াছে শিব, কালী, দূর্গা মহাকাল প্রভৃতি দেবদেবীর মূর্তি এবং ব্যবস্থা হইয়াছে নিত্য পূজা অথবা বাৎসরিক পূজার।
শ্মশানগুলির অধিকাংশই দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে রেকর্ড ভূক্ত থাকেলেও অনেক শ্মশান পূর্বকালের রাজা, জমিদার প্রভৃতি বনাঢ্য ব্যক্তিগণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। তাহাদের বংশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের স্মৃতি জাগরুক রাখিবার জন্য বহু স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপন করায় শ্মশানগুলি দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিগণিত হইয়াছে। অবশ্য নদী বা খাল শুকাইয়া গেলে শ্মশানের স্থানও পরিবর্ত্তিত হইয়াছে। যে সমস্ত স্থানে কোন নদী বা খাল নাই সেখানে দীঘি খনন করিয়া শ্মশানের প্রতিষ্ঠা করা হইয়াছে। বিলের মধ্যেও যথেষ্ট শ্মশান দেখিতে পাওয়া যায়। ৫/৬ টি গ্রামের জন্য এক একটি শ্মশান আছে। অনেক যায়গায় কাছা কাছি নদী, খাল বা বিল না থাকায় দূরবর্তী অঞ্চলে শবদাহ করিবার জন্য যাইতে হয়। সাধারণতঃ নদীর ধারে শহর গড়িয়া উঠায় শহরের জন্য একটি শ্মশান থাকে। যশোরে ছোট বড় বহু শ্মশান আছে। অনেকগুলি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত আবার অনেকগুলি খোলা। ২/১ টিতে বৈদ্যুতিকরণ করা হইয়াছে আবার অনেকগুলিতে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা নাই। অনেক গুলিতে স্থানীয় জনসাধারণের চেষ্টায় পাকা চিতা, শবদাহকারীদের বিশ্রাম স্থল আছে আবার অনেকগুলিতে ইহার কিছুই নাই। শ্মশানের জমিগুলি অধিকাংশই দেবোত্তর। বর্তমানে স্থানীয় স্বার্থে-পর লোভী ব্যক্তিগণের লালসার শিকারে পড়িয়া অনেক জমি বেহাত হইয়া যাইতেছে।
যশোর নীলগঞ্জ মহাশ্মশান
নীলগঞ্জ শ্মশানটি শহরের পূর্বেদিকে ভৈরব নদীর পূর্বতীরে সীতারামপুর গ্রামে অবস্থিত। স্বর্গীয় তারিনী চরণ চৌধুরীর স্ত্রী গোপী সুন্দরী চৌধুরাণী এই শ্মশান স্থাপন করেন। এখানে একটি মন্দির স্থাপিত আছে। মন্দিরে দুর্গামুর্ত্তি স্থাপিত আছে। একজন পূজারী নিত্য পূজা করেন। শারদীয় পূজার সময় দরিদ্র জনসাধারণকে অন্নদান করা হয়। এখানকার সার্বিক দেখা শুনার জন্য একটি সংসদ আছে। সংসদের সম্পাদক শ্রী সুনীল কুমার হালদার এবং শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ শ্মশানটির উন্নতির জন্য প্রাণপন চেষ্টা করিতেছেন। এলাকার হিন্দু জনসাধারণের প্রদত্ত চাঁদায় এখানকার পূজা পার্বনাদির ব্যয় সংকুলান হয়।
নড়াইল কালুডাঙ্গার শ্মশান
ইহা একটি বিখ্যাত শ্মশান। শ্মশানের পার্শ্বে মন্দির আছে। একজন সন্ন্যাসী এখানে সাধনা করেন।
চণ্ডীতলা শ্মশান (ঝিনাইদহ)
ইহাও এতদঞ্চলের একটি প্রাচীন শ্মশান। কুমার নদীর তীর ৫, ৬ একর জমির উপর অবস্থিত। এখানে একটি মন্দির আছে। এখানে বহু সাধক সাধনা করেন। বর্তমান সাধকের নাম দীনু পাগলা।
মাগুরার সাত দোয়া শ্মশান
নেংটা বাবাজী প্রতিষ্ঠিত এই শ্মশানটি বহু প্রাচীন কালের। এখানে একটি মন্দির আছে। মন্দিরে প্রতি বৎসর মহাসমারোহে কালীপূজা হয়। দূর দূরান্ত হইতে বহু ভক্তের সমাগম হয়।
তথ্য সূত্র :
যশোরে হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য
লেখক : শ্রীতারাপদ দাস
সর্বশেষ আপডেট :
১৪.০৫.১১