
Home ঐতিহ্য (Tradition) > যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৫৪)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86905 বার পড়া হয়েছে
যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৫৪)
Institute Public Library
‘যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি’ উপমহাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত স্বল্প সংখ্যক গণপাঠাগারের একটি। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে যখন ইউরোপ আমেরিকায় গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন প্রবল হয় তখন ভারত উপমহাদেশেও সে আন্দোলনের প্রসার ঘটে। যশোর পাবলিক লাইব্রেরি সে আন্দোলনেরই সফল ফসল। শত চড়াই উৎরায় পেরিয়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি আর কৃষ্টি চর্চার লালন ক্ষেত্র হিসেবে এই গণগ্রন্থাগারটি অতিক্রম করেছে দেড় শতাব্দীকাল। যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিশাল আয়তন জমির ওপর অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি এ সময়ের মধ্যে জন্ম দিয়েছে আরো অনেকগুলি জনকল্যাণ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের। যশোর পাবলিক লাইব্রেরির পাশাপাশি যশোর টাউন হল বা আলমগীর সিদ্দিকী হল, টাউন ক্লাব, মুন্সি মেহেরুল্লা ময়দান বা টাউন হল ময়দান, স্বাধীনতার মঞ্চ বা উন্মুক্ত মঞ্চ, নিউ আর্য থিয়েটার বা ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ, বি সরকার মেমোরিয়াল হল বা তসবীর মহল, ইনস্টিটিউট প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশ্বনাথ লাইব্রেরি হল, বই ব্যাংক বা আঞ্চলিক কেন্দ্রীয় বই ব্যাংক ও পাবলিক লাইব্রেরির শিশু কিশোর বিভাগ এর মধ্যে অন্যতম। এই সমগ্র প্রতিষ্ঠান মিলে আজ এর নামকরণ হয়েছে যশোর ইনস্টিটিউট।
যশোর ইনস্টিটিউটের আজ পাঁচটি বিভাগ চালু রয়েছে-যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি, যশোর ইনস্টিটিউট ক্রীড়া সংসদ, যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও যশোর ইনস্টিটিউট সাধারণ বিভাগ।
যশোর পাবলিক লাইব্রেরির গোড়ার কথা :
দুনিয়াব্যাপী ধ্বংস আর পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে এগোতে থাকে গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। তারই এক কুক্ষণে (শোষক শ্রেণীর জন্য) ১৮০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যের সালিসবারিতে প্রতিষ্ঠিত Bingham Library for Youth সর্বপ্রথম পৌর কর্তৃপক্ষের আর্থিক সহায়তা লাভ করে। ১৮৩৮ সালে মিশিগান রাজ্য গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয় এবং ১৮৪৯ সালে নিউহ্যামশায়ার রাজ্য গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠার জন্য সুস্পষ্ট আইন পাস করে। ঐ একই সময়ে ইংল্যান্ডে পার্লামেন্ট সদস্যদের কয়েকজনের সোচ্চার দাবির মুখে পাবলিক লাইব্রেরি সংক্রান্ত একটি সিলেক্ট কমিটি গঠিত হয়। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮৫০ সালে পার্লামেন্টের অভিজাত ও রক্ষণশীল সদস্যদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও পাবলিক লাইব্রেরি এ্যাক্ট পাস হয়। জনগণকে শিক্ষিত করে তুলতে সরকারি অর্থ ব্যয় যে খুবই যুক্তিযুক্ত এবং কল্যাণকর শুধু এই কথাটুকু পার্লামেন্টের রক্ষণশীল সদস্য এবং সমাজের অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকদের বোঝাতে পাবলিক লাইব্রেরির আন্দোলনকারীরা রীতিমত হিমশিম খান। ১৮৫০ সালের পাবলিক লাইব্রেরি এ্যাক্ট কেবল মাত্র ১০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত নগর পরিষদগুলিকে পাবলিক লাইব্রেরির ভবন, একজন গ্রন্থাগারিক, বাতি ও জ্বালানী সরবরাহের অধিকার দেয়। পরের বছরেই ১৮৫১ সালে সীমিত পরিসরে হলেও উপমহাদেশে রাজনারায়ণ বসুর উদ্যোগে মেদিনীপুরে গণপাঠাগার স্থাপিত হয়। ১৮৫২ সালে আমেরিকার বোস্টন শহরে বোস্টন পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর আমেরিকায় গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। দুনিয়াব্যাপী সে গতি আন্দোলিত করে। আন্দোলিত হয় ভারতবর্ষ। উপমহাদেশেও শুরু হয় পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। কিন্তু বাদ সাধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের রক্ষণশীল সদস্যরা যেমন, তেমন সমাজের অভিজাত শ্রেণীও (ভারতবর্ষ যেহেতু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপনিবেশ)। উপমহাদেশের অন্যত্র সে বাঁধা কার্যকর হলেও বাংলা প্রদেশ তা মানেনি। এখানে তীব্র আকার ধারণ করে গণপাঠাগার স্থাপনের আন্দোলন। প্রধানত কলকাতা এবং অন্যান্য প্রেসিডেন্সি জেলা সদরে সদ্য বিলেত থেকে আসা ইংরেজ রাজকর্মচারী এবং স্থানীয় ইংরেজি শিক্ষিত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চেষ্টায় গণপাঠাগার গড়ে উঠতে থাকে। এই সব পাঠাগারগুলি গড়ে ওঠে বেসরকারি উদ্যোগে। এভাবেই ১৮৫৪ সালে স্থাপিত হয় যশোর, বগুড়া, রংপুর, বরিশাল ও হুগলী পাবলিক লাইব্রেরি। তখনও স্থাপিত হয়নি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, স্থাপিত হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয, ঢাকা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, খুলনা উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি এমনকি প্রতিষ্ঠিত হয়নি যশোর পৌরসভা।
যতদূর জানা যায়, প্রায় দেড়শ’ বছরের প্রাচীন ঐ পাঁচটি লাইব্রেরির মধ্যে একমাত্র জীবিত আছে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি। বেসরকারি উদ্যোগে যশোরের তৎকালীন জেলা কালেক্টর মিঃ আর সি রেক্স যশোর পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। খোদ স্কটল্যান্ড যখন পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার আইনগত অধিকার পায়নি সে সময় যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার পেছনে ভাবার কোন কারণ নেই যে, যশোর কোন আহামরি শহর ছিল। বরং ছিল একটি গ্রামীণ জেলা সদর। ১৮৭২ সালে ভারতের প্রথম আদমশুমারী অনুযায়ী যশোর পৌর এলাকার (দশটি মৌজা) লোকসংখ্যা ছিল ৮,১৫২ জন। এর মধ্যে কসবা এলাকায় কোর্ট কাচারী অবস্থিত বলে সেখানেই অধিকাংশ সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা, উকিল, মোক্তার বাস করত। বকচর, শঙ্করপুরসহ পৌর এলাকার অন্যান্য স্থানে বসবাস করত সরকারি অফিসের গরীব কর্মচারীরা। বাকিরা সাহেবদের বাড়িতে ফাইফরমাস খাটত। বকচর, মুড়লীতে বাস করত কিছু নীলকর সাহেব আর চাঁচড়ায় রাজা বরদাকান্ত; এমন একটি জেলা সদর ছিল যশোর। ওয়েস্ট ল্যান্ডের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ১৮৭১ সালে ৩৯১৩ বর্গমাইল বিস্তৃত যশোর জেলায় ইংরেজি শিক্ষা দেবার জন্য স্কুল ছিল মাত্র একটাই; যশোর জিলা স্কুল। ১৮৫৬-৭১ সাল পর্যন্ত স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৬৮-১৭২ জন। ডব্লু, ডব্লু হান্টারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ঐ সময়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের জন্যও স্কুল ছিল একটি। প্রবীণদের ধারণা মতে সম্ভবত সেটিই মোহনগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত (চুরিপট্টিতে)। এসব বিবরণী থেকে সহজেই বোঝা যায় যশোর শহরে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য পরিবেশ কতটুকু অনুকূল ছিল। অন্যদিকে তখনকার যশোরের সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ছিল বিস্ফোরন্মুখ। যশোর ও তার আশেপাশের নীলকুটি তখন নীলচাষীদের নির্যাতনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভ ধুমায়িত হচ্ছিল কৃষকদের মনে। যে কোন মুহুর্তেই সে বিক্ষোভ বিদ্রোহে বিস্ফোরিত হতে পারে। হয়েছিলও তাই। ১৮৬০ সালে যশোরেই নীল বিদ্রোহের সুত্রপাত হয়। এবং তার সফল নেতৃত্বে ছিলেন যশোর জেলার চৌগাছা থানার দুই ভাই দিগম্বর বিশ্বাস ও বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস।
তথাপি যশোরের কালেক্টর মিঃ রেক্স এই দুঃস্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলেন শুধুমাত্র এ কারণে নয় যে, বিলেতে তখন পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল হয়েছে এবং সেই আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তরুণ রেক্স। আবার এ কারণেও নয় যে-বিলেত থেকে আসা সাহেব আর সামান্য ইংরেজি শিক্ষিত স্থানীয় কিছু মোসাহেবদের অবসর বিনোদনের জন্য রেক্স সাহেব যশোরে পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপনে সচেষ্ট হন। বরং একথা স্বীকার করতেই হবে, শিক্ষা এবং গ্রন্থাগার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সমাজের পরিদৃষ্ট পরিবর্তনের ইতিহাস থেকে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি আদৌ বিচ্ছিন্ন নয়, এবং বিচ্ছিন্ন নয় বলেই এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কঠিন দীর্ঘ এক সংগ্রামের মাধ্যমে এই গণপাঠাগার স্থাপনের সমতা অর্জন করে। কেননা বিশ্বের মানদণ্ডে বিচার করার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য যশোরের রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের কালে বাংলা সাহিত্যে যে নবযুগের সূচনা হয়েছিল যশোরের মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার পুরোভাগেই ছিলেন, সংবাদ পত্রে সাহসী প্রতিবেদন লিখেছেন শিশির কুমার ঘোষ, দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ-এর সফল ইংরেজি অনুবাদ করে ইংরেজ শাসকদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সুতরাং ঐতিহাসিক কারণ, সময়ের দাবি আর সামাজিক অনুপ্রেরণার সাথে যুক্ত হন কালেক্টর রেক্স। তিনি পাবলিক লাইব্রেরির ভবন নির্মাণ আর পুস্তক সংগ্রহের কাজে ব্যক্তিগত সাহায্য সংগ্রহ করেছিলেন সেকালের বিত্তবান শ্রেণীর কাছ থেকে। কয়েকজন সুহৃদয় নীলকর সাহেব এবং নলডাঙ্গার রাজা ও নড়াইলের জমিদার এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় রেক্সকে অর্থ দিয়ে সাহা্য্য করেছিলেন।
১৮৫৪ সালের যশোর পাবলিক লাইব্রেরির নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়। ১৮৬৪ সালে যশোরে পৌরসভা স্থাপিত হলে পাবলিক লাইব্রেরি ভবনেই পৌরসভার কমিশনারগণ সভা করতেন। তবে যশোর পাবলিক লাইব্রেরির সেই প্রথম ভবনটি কোথায় ছিল সে সম্পর্কে এখন আর কিছু জানা যায় না। সে সময় সদস্যদের চাঁদায় নির্বাহ হতো লাইব্রেরির ব্যয়। এভাবে দেড় শতাব্দীকাল ধরে হাঁটি হাঁটি পা-পা করে গড়ে উঠেছে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি।
লাইব্রেরির বিকাশ কাল :
শুরুর দিকে লাইব্রেরিতেই পড়ালেখার পাশাপাশি চলত অবসর বিনোদন আড্ডা। তখনকার লাইব্রেরি ছিল একাধারে গ্রন্থাগার ও আড্ডাঘর, একপাশে পুস্তক সংগ্রহ-অন্যপাশে বিলিয়ার্ড টেবিল। যশোর পাবলিক লাইব্রেরি অবসর-বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়েছে-এমনকি বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যন্ত। এভাবে লাইব্রেরি হয়ে ওঠে এই জনপদের মানুষের চিন্তা-চেতনা বিকাশের তথা রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু। পূর্বে যেখানে এই পাবলিক লাইব্রেরি পরিগণিত হতো শাসক ইংরেজ আর তাদের এদেশীয় সহযোগী জমিদার এবং আত্মসুখ পরায়ণ ইংরেজি শিক্ষিত উপনিবেশিক মধ্যবিত্তের আনন্দবর্ধক প্রতিষ্ঠান হিসেবে, বিশ শতকের প্রথম দশক থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক শক্তির নেতৃত্বে ক্রমেই তা প্রকৃত গণপাঠাগারে রূপান্তরিত হতে থাকে। সেই সাথে কলেবর বৃদ্ধি হতে থাকে লাইব্রেরির। ১৯০৯ সালে স্থাপিত হয় টাউন হল; লাইব্রেরি স্থানান্তরিত হয় টাউন হলে। ১৯১৯ সালে টাউন ক্লাব ও নিউ আর্য থিয়েটার স্থাপিত হয়। নিউ আর্য থিয়েটারের জন্য ১৯২১ সালে নির্মিত হয় বি সরকার মেমোরিয়াল হল (তসবীর মহল)। এ দিকে পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে গেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও রুশ বিপ্লব। এই দুটি যুদ্ধেরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, ভাল ও মন্দ দুই প্রভাবই এসে পড়লো যশোর পাবলিক লাইব্রেরির ঐতিহ্যের ওপর। জনপদের শিক্ষিত তরুণরা আরো আরো বেশি মাত্রায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে থাকে এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে আরো বেশি করে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি সাধনে তৎপর হয়। পড়ার টেবিলে, খেলার মাঠে কিংবা নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক জোয়ার সৃষ্টিতে তৎপর হলো তারা। এই সামগ্রিক তৎপরতা যাতে যৌক্তিক পরিণতিতে যেতে পারে তার জন্য ১৯২৭ সালে যশোর জেলার লোহাগড়ার মজুমদার পরিবারের কৃতি সন্তান, বহু ভাষাবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ধর্ম শাস্ত্রজ্ঞ এবং আইনজীবী যদুনাথ মজুমদার উদ্যোগ নিলেন পাবলিক লাইব্রেরি, নিউ আর্য থিয়েটার আর টাউন ক্লাব মিলেমিশে একটা পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে। এভাবেই ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো ইনস্টিটিউট। এক সরকারি আদেশ বলে পাবলিক লাইব্রেরি হলো ইনস্টিটিউটের অঙ্গ সংগঠন। বেড়ে গেল কাজের পরিধি আর বৃদ্ধি পেল সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা। সে সময়ে এই সাংস্কৃতিক উজ্জীবনে যারা প্রধান ভূমিকা পালন করেন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার উদার হাত বাড়িয়েছিলেন আর একজন সাংস্কৃতিক পুরুষ খান বাহাদুর এম. এ. মোমিন। সে সময় তিনি যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পদাধিকার বলে যশোর ইনস্টিটিউটের সভাপতি ছিলেন।
১৯২৮ সালে যশোর পাবলিক লাইব্রেরির ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। লোহাগড়ার সরকার পরিবারের সন্তান আইনজীবী অবিনাশ চন্দ্র সরকার যশোর পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে দেন। পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে এই ভবনের নামকরণ করেন বিশ্বনাথ লাইব্রেরি ভবন। যে নামটি এখন আর চোখে দেখা যায় না। যশোর ইনস্টিটিউট হয়ে উঠল পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বিশ্বনাথ লাইব্রেরি হলে ভিড় হতো নানা বয়সের পাঠকের, সম্মুখের টাউন হলে বসতো নিয়মিত সাহিত্য সভা, পূর্ণিমা সম্মেলন আর গানের আসর; খেলার মাঠে টাউন ক্লাবের জয়জয়কার; বি. সরকার মেমোরিয়াল হলের ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চের বিচিত্র স্বাদের নাটকের নিয়মিত অভিনয় এবং সে অভিনয়ে অংশ নেবার জন্য কলকাতা থেকে নামী-দামী অভিনেতাদের নিয়মিত আসা-যাওয়ায় যশোর ইনস্টিটিউটের সাংস্কৃতিক অঙ্গন মুখরিত হতো।
পরবর্তীকালে সরকারী অনুদানে পুরাতন ভিত্তির উপর নতুন দোতলা ভবন নির্মিত হয় ১৯৬৪ সালে। বই ব্যাংক নির্মিত ১৮৭৮ সালে সরকারী অনুদানে। ষাট-এর দশকে শুরু হয় এর আধুনিকায়ন পর্ব। খোলা তাক প্রবর্তন, বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে বইয়ের শ্রেণীবিন্যাস শুরু তখন থেকে। মরহুম রওশন আলী ও অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফ হোসেনের নেতৃত্বে এক কর্মীবাহিনী যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিকে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পাঠাগারে রূপান্তরিত করেন। আধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফ হোসেন যশোর পাবলিক লাইব্রেরিকে একটি আধুনিক গণপাঠাগারে বিকশিত করার প্রধান স্থাপতি। ১৯৬৩ সাল থেকে সুদীর্ঘ ২০ বছর তিনি এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের অবিশ্বাস্য পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশে প্রথম বই ব্যাংক আঞ্চলিক কেন্দ্রীয় বই ব্যাংক আঞ্চলিক কেন্দ্রীয় বই ব্যাংক অধ্যাপক শরীফ হোসেনের মেধা ও সাধনার ফল। এশিয়া ফাউন্ডেশন ও মরহুম সরদার জয়েনউদ্দিন বই ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ ও পরামর্শ দান করেন।
এতৎ সত্ত্বেও বিশ শতকের তৃতীয় এবং চতুর্থ দশক জুড়ে যশোর ইনস্টিটিউটের সাংস্কৃতিক জীবনে যে প্রাণবন্যার সৃষ্টি হয়েছিল পরবর্তীকালের ইতিহাসে তেমনটি আর দেখা যায়নি।
পাবলিক লাইব্রেরির ভাটার পর্ব :
বিশ শতকের প্রথম চার দশক যশোর পাবলিক লাইব্রেরির ইতিহাসে অগ্রগতির যুগ, বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ দশক তো ভরা কোটালের কাল; কিন্তু পঞ্চম দশকে শুরু হলো তার রাহুগ্রাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশ বিভাগ আর মাতৃভাষার দাবিকে অত্যাচারের স্টিমরোলার চাপিয়ে স্তব্ধ করে দেবার মতাদর্শী শাসকগোষ্ঠীর অপচেষ্টার মুখে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান শুধুই মৃত্যুর প্রহর গুনেছে।
১৯৩৯ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর হিটলারপন্থী নাৎসি জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হলে ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি গাড়লো যশোরে। ১৯৪২ সালের মে মাসে সামরিক প্রয়োজনে রাজকীয় বিমান-বাহিনী যশোর ইনস্টিটিউটের সকল ভবন হুকুম দখল করে নেয়। ফলে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি গৃহহীন হয়ে পড়ে। সেই ঘোর দুর্দিনে এই অমূল্য প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন যশোরের পাঠাগার ভক্ত সাধারণ মানুষ আর যশোর পৌরসভা। লাইব্রেরি স্থানান্তরিত হয় পৌরসভার হলরুমে। নাট্যবিভাগ স্থানান্তর করা হয় নারায়ণ চন্দ্র সাহার টিনের চালা ঘরে আর ক্লাবের জায়গা হলো রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার কর্তৃক নির্মিত বৈশ্য বারুজীবী সভা হলে। যুদ্ধ শেষে লাইব্রেরি ও তার শরিক সংগঠনগুলি ফিরে আসে ক্ষত বিক্ষত তার পুরাতন অস্তিত্বে।
প্রায় দেড়শ শতাব্দী পূর্বে একটি বিদেশী শোষক শ্রেণীর প্রতিনিধির হাতে যার জন্ম, যে প্রতিষ্ঠান ১৮৫৭ সালের প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৮৫৯-৬০ সালের নীল বিদ্রোহ, ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠাকাল, ১৯০৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের জন্ম প্রত্যক্ষ করেছে, যে প্রতিষ্ঠান ভারতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিকাশের সাথে সাথে সমৃদ্ধি লাভ করেছে, দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধের বিষাক্ত নখর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে, আনন্দ উদ্বেলিত বক্ষ পেতে স্থান দিয়েছে মেহনতি মানুষের রাষ্ট্র-ক্ষমতা দখলের গৌরবময় ইতিহাস, যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয়ের নীরব সাক্ষী (১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর বিকেলে প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যশোর পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্ন টাউন হল ময়দানে মুক্ত বাংলাদেশের প্রথম বিজয় সভা করেন), যে প্রতিষ্ঠান দেশের ভবিষ্যৎ ইতিহাস নির্মাতাদের গড়ে তুলতে নীরবে কাজ করে এসেছে, যে প্রতিষ্ঠান বুক পেতে ঠাঁই দিয়েছে দেশ-কাল-মত নির্বিশেষে সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষের চিন্তার ফসল-সংকীর্তন করেছে অমৃতের সন্তান মানুষের মঙ্গল গান, সেই পবিত্রতম জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রটি আজ বর্ণচোরা শাদা পোশাকি কথিত সমাজ সেবকদের সতিনি স্পর্শে হারাতে বসেছে অতীতের ঐতিহ্য। পিছনে তাকালে দেখা যায় ’৪৭ উত্তর পাকিস্তান সরকারের অশুভ দৃষ্টিতে পড়ে যশোর পাবলিক লাইব্রেরি। ক্ষতিগ্রস্থ হয় নানাভাবে এবং তা অব্যাহত থাকে একটানা ’৭১ পর্যন্ত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দেশ স্বাধীন হয়েছে; পশ্চাৎপদ অসভ্য শক্তিকে আমরা রক্তগঙ্গা বইয়ে হলেও তাড়াতে সক্ষম হয়েছি কিন্তু পাবলিক লাইব্রেরি বিকাশের রাস্তাকে আমরা আজও মসৃণ করতে পারিনি। মাঝে মধ্যে দুই একজন আমাদের অহংকার ও সভ্যতার প্রতীক যশোর পাবলিক লাইব্রেরির পরিচালক মণ্ডলীতে অংশ নিলেও তাদেরকে টিকতে দেয়া হয়নি বেশিদিন। বরং প্রতিষ্ঠানটির মস্তিষ্কে জেকে বসেছে কিছু মুর্খ অর্থলিপ্সু চক্র; যাদের সতিনি স্পর্শে আজ সে হারাতে বসেছে তার পুরনো জৌলুস।
যে সংগ্রহের জন্য যশোর পাবলিক লাইব্রেরির গুরুত্ব :
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যশোর পাবলিক লাইব্রেরির গুরুত্ব শুধুমাত্র এ কারণে নয় যে, বাংলাদেশে গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এটি এ দেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম চারটি পাবলিক লাইব্রেরির অন্যতম, এ জন্যও নয় যে ১৮৫৪ সালে এই লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাকালে ¯^vaxb ইউরোপ ও আমেরিকায় গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সবে শুরু হয়েছে, অথবা এ জন্যও গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, যশোর পাবলিক লাইব্রেরির রয়েছে দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্য বরং তার গুরুত্ব এজন্য যে, যশোর পাবলিক লাইব্রেরির রয়েছে ৬৪ হাজার ৬শ’ ৪০টির বিশাল সংগৃহীত গ্রন্থরাজি যার মধ্যে ৪৭ হাজার ১শ’ ৪০টি বাংলা, ৩শ’টি আরবি ফার্সি, উর্দু, ১৭ হাজার ইংরেজি এবং ২শ’টি হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি। এই হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির মধ্যে রয়েছে মহাকাব্য মহাভারতের তুলট কাগজে লেখা হস্তলিপি, রয়েছে মহাকবি কালিদাস, শ্রী রঘুরাম কবিরাজ, শ্রী কাশিরাম দাশ, ত্রিলোচন দাস, শ্রী ভর্ত্তৃহরি, পদ্মনাম দত্ত, শ্রী রামদত্ত, অমর সিংহ, শ্রীমচ্চানক্যে’র পাণ্ডুলিপি, রয়েছে প্রাচীন মহাকাব্য রামায়ণ বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা গ্রন্থ রাবণ ইন্দ্রজিত সংবাদের পাণ্ডুলিপি এছাড়াও আরো অনেক রয়েছে প্রাচীন পণ্ডিত মহাপুরুষদের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি যার বক্তব্য এখন পর্যন্ত ব্যাপক পঠন পাঠন ও গবেষণার অভাবে আবিষ্কার করা যায়নি। এছাড়া যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সদস্য রয়েছে ১২৫৪ জন। তারমধ্যে ৫০ জন দাতা ও ১৪৬ জন জীবন সদস্য। এবং বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে সর্বমোট ৩০৯ জন। এর মধ্যে পাঠাগার বিভাগে ১৬৪ জন, ক্রীড়া বিভাগে ৮৬ জন, নাট্যকলা বিভাগে ৩৪ জন, সিআরসিতে মোট ৫২ জন। আলোচ্য বছরে নতুন সদস্যপদ লাভ করেছে মোট ২১ জন। তারমধ্যে দাতা ২ জন, জীবন সদস্য ৮ জন এবং সাধারণ বিভাগে ১১ জন ইনস্টিটিউটের নিয়মিত বেতনভুক্ত কর্মচারী রয়েছে ২৫ জন। এছাড়াও লাইব্রেরিকে আরো বেশি অর্থবহ করে তোলার জন্য এর রয়েছে এক মহান পরিকল্পনা যার মাধ্যমে একে অগ্রসরমান পূর্ণাঙ্গ গণপাঠাগার হিসেবে গড়ে তোলা যায়, যেখানে থাকবে দুষপ্রাপ্য পাণ্ডুলিপি, বইপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সুব্যবস্থা, প্রাচীনগ্রন্থ এবং পত্রিকা সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভস, পুরুষ ও মহিলা পাঠকদের জন্য পৃথক নির্দেশক কক্ষ, চিত্রশালা, মিলনায়তন, অডিও-ভিজ্যুয়াল ব্যবস্থা, ভাষা শিক্ষার সুবন্দোবস্ত, সঙ্গীত কক্ষ এবং যাদুঘর। যশোর পাবলিক লাইব্রেরির আরো গুরুত্ব এ কারণে যে, বাংলাদেশে যশোর পাবলিক লাইব্রেরিই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যার সংগৃহীত গ্রন্থরাজি চার দেয়ালের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে পৌঁছতে পেরেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সেই সব গ্রামীণ পাঠকের কাছে যারা নিঃশ্ছিদ্র অন্ধকারের বেড়া পেরিয়ে বইয়ের সুন্দর ভুবনে আসার সুযোগ পান না; তাদের কাছে।
পাবলিক লাইব্রেরির সম্পদ :
যশোর পাবলিক লাইব্রেরির রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে তিন একর জমির ওপর এই লাইব্রেরি অবস্থিত। শুধু জমির মূল্যই বর্তমানে কমপক্ষে দুই কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। এই জমির ওপরে প্রতিষ্ঠিত দশতলা ফাউন্ডেশনের ত্রিতল বিশিষ্ট বিশাল আঞ্চলিক বই ব্যাংক, দ্বিতল বিশিষ্ট বিরাট বই ইস্যুর বিভাগ (বিশ্বনাথ লাইব্রেরি হল), ১৯৭০ সালে স্থাপিত দ্বিতল বিশিষ্ট যশোরের অন্যতম আধুনিক স্কুল যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝারি ধরণের সিনেমা হল-তসবির মহল, বি. সরকার মেমোরিয়াল ঘূর্ণায়মান মঞ্চ (অবিভক্ত বাংলার প্রাচীনতম মঞ্চের একটি), ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ, আধুনিক মানের উন্মুক্ত মঞ্চ, শত বছরের পুরনো ব্রিটিশ স্থাপত্য টাউন হল এবং প্রায় দুই বিঘা জমির ওপরে পুকুর। এছাড়াও পাবলিক লাইব্রেরির নিজস্ব সম্পদ রয়েছে শহরের এমএম আলী রোডে ৩৩টি দোকানসহ ইনস্টিটিউট মার্কেট, আর এন রোডে ১৭টি দোকানসহ উন্মেষ মার্কেট, বকুলতলায় ১টি দোকানঘর ও ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্ন মুন্সি মেহেরুল্লা ময়দান। সব মিলিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে কোটি-কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি।
প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস :
যশোর ইনস্টিটিউটের অর্থ আয় হয়ে থাকে বিভিন্ন খাত থেকে যেমন, বি. সরকার মেমোরিয়াল হল ভাড়া, দোকান ঘরসমূহের ভাড়া, টাউন হল ভাড়া, টাউন হল ময়দান ভাড়া, ময়দান স্টেজ ভাড়া, টেলিফোন চার্জ আদায়, সদস্যদের মাসিক চাঁদা আদায়, ভর্তি ফরম বিক্রয়, পুকুর লিজ বাবদ, ভর্তি ফি বাবদ, রেজিঃ চার্জ আদায়, ব্যাংকের সুদ, সংবিধান বই বিক্রয়, সিনেমা সার চার্জ, টি.আর প্রকল্প বাবদ আয়, মিনিবাস থেকে দান, পৌরসভা থেকে দান, পানি কর আদায়, নির্বাচনী আয়, ঈদে মিলাদুন নবী, জরিমানা আদায়, পুরাতন কাপড় ব্যবসা এবং অন্যান্য থেকে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি আয় হয়ে থাকে দোকান ঘর ভাড়া বাবদ। এসব উৎস থেকে প্রতি বৎসর গড়ে আয় হয় ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা।
প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক খরচ :
যশোর ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বছরে খরচ হয় বিশাল অংকের টাকা। যেমন-কর্মচারীদের বেতন, উৎসব ভাতা, অতিরিক্ত কাজের বেতন, ছাপা খরচ, স্টেশনারি দ্রব্যাদি ক্রয়, ডাক টিকিট ক্রয়, ধোলাই বাবদ, সভা (বার্ষিক সভাসহ), বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিল, অডিট ফি, দোকান নির্মাণ/মেরামত/রং, টেলিভিশন এবং রেডিও লাইসেন্স নবায়ন বাবদ, নির্বাচনী খরচ, টিএ এবং ডিএ, ঈদে মিলাদুন নবী, পৌরকর, লেখক শিল্পীদের সাহায্য, বৈদ্যুতিক দ্রব্যাদি ক্রয়, বাসনাদি ক্রয়, মিনিবাস টার্মিনাল উন্নয়ন, টাউন হল ময়দান উন্নয়ন, বৃক্ষ রোপণ, টি.আর প্রকল্প, লাইব্রেরি বিভাগ, ক্রীড়া বিভাগ, নাটক বিভাগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, অনুষ্ঠান, আপ্যায়ন ও অন্যান্য। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বরাদ্দ দিতে হয় লাইব্রেরি ও ক্রীড়া বিভাগে। প্রতি বৎসর লাইব্রেরি বিভাগে গড় বরাদ্দ থাকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা এবং ক্রীড়া বিভাগে বরাদ্দ থাকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা।
লাইব্রেরির বর্তমান হালহকিকত :
যশোর ইনস্টিটিউটের বর্তমান হালহকিকত অত্যন্ত করুণ। ঐতিহ্য, অহংকার আর সভ্যতার প্রতীক এই প্রাচীন গণগ্রন্থাগারটির অতীত গৌরবময় ইতিহাস আজ হুমকির সম্মুখীন। নানা সমস্যার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছে কিছু উদ্দেশ্য প্রণোদিত স্বার্থন্বেষী অর্থলিপ্সু মহল বিশেষের। ফলে যে উদ্দেশ্য ও সিপ্রড নিয়ে সময়-কাল-সমাজ এবং জনপদের মানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন হিসেবে জন্ম নিয়েছিল যশোর পাবলিক লাইব্রেরি, আজ সে তার প্রতিশ্রুতি হারাতে বসেছে।
এর প্রত্যেকটি অঙ্গ সংগঠন বিশেষ করে পাবলিক লাইব্রেরি হারাতে বসেছে তার দেড় শতাব্দীকালের গৌরবময় ঐতিহ্য। কালের আহ্বানে সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঘামঝরা শ্রমে তিলে তিলে গড়ে ওঠা যশোর সভ্যতার প্রতীক এই জনপদের অহংকার আজ অযোগ্য অথর্ব উদ্দেশ্য প্রণোদিত স্বার্থপরায়ণ মহলবিশেষের খপ্পরে পড়ায় প্রতিষ্ঠানটির এই বেহাল অবস্থা বলে দীর্ঘদিন ইনস্টিটিউটের সাথে সম্পর্কিত সুধী মহলের অভিমত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কোটি কোটি টাকার সম্পদ এই প্রতিষ্ঠানটি আজ হরিলুটের মালে পরিণত হয়েছে। নামমাত্র মূল্যে শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইনস্টিটিউটের দুটি মার্কেটের দোকান ঘর এবং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পুকুর ও তসবির মহল সিনেমা হলটি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ও তাদের পরিচিতজনের ভাড়া ও লিজ নেয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বঞ্চিত হয়েছে বর্তমান বাজার অনুযায়ী মূল্য অর্থাৎ লক্ষ লক্ষ টাকা থেকে। এরপরও ইনস্টিটিউটটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থ হয়েছে ভাড়া ও লিজের টাকা আদায় করতে। জানা গেছে, অনেক ভাড়াটিয়াই তৃতীয় পক্ষের কাছে নিজ নামে বরাদ্দকৃত ঘর ভাড়া দিয়ে কামাচ্ছে মোটা অংকের টাকা। দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন জনের কাছে অনাদায়কৃত টাকার পরিমাণ বর্তমানে আড়াই লক্ষের ওপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানায়, স্বজনপ্রীতিই এই অনাদায়ের প্রধান কারণ। আবার কিছু কিছু ভাড়াটিয়া প্রভাবশালী রাজনীতিক বিধায় ইনস্টিটিউট ভাড়া আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে।
লাইব্রেরি সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত আয়ে বিঘ্ন ঘটায় ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণী হয়ে পড়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুটি পত্রিকা এজেন্ট এর কাছে ঋণী হয়েছে ৯০ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল বাকি হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও ইনস্টিটিউট ব্যর্থ হচ্ছে প্রতি মাসে নিয়মিত কর্মচারীদের বেতন দিতে, ব্যর্থ হচ্ছে নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ করতে, উন্নত খেলার টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে আর ব্যর্থ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ঐ লাইব্রেরির প্রাণস্পন্দন গতি সঞ্চারে প্রয়োজনীয় বই ক্রয় করতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রায় দশ বছরকাল ধরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই ক্রয় করা হয়নি। মাঝে মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থানীয় লেখকদের দশ কপি বই, বিভিন্ন সুধীজনসহ প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র ও এশিয়া ফাউন্ডেশন থেকে অনুদানকৃত গ্রন্থছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ ক্রয় করা হয়নি উন্নত প্রকাশনা বাংলা একাডেমীসহ অন্যান্য প্রকাশনার বই। অথচ এই লাইব্রেরির ইতিহাস আছে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার বই কেনার। দীর্ঘদিন যাবৎ লাইব্রেরি বই ক্রয় করছে না যেমন, তেমনি ঘরের বই বাইরে বের করে দেওয়ার এক নজিরবিহীন ন্যাক্কারজনক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ধারাবাহিকভাবে জেঁকে বসা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাবৃন্দ। সূত্র জানিয়েছে বর্তমানে লাইব্রেরিতে ২২ হাজার বই এর কোন হদিস নেই। গত মে মাসেই জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র কর্তৃক দানকৃত নতুন বই এর ২৫টি চুরি হয়ে গেছে। এই সমুদয় বই এর অধিকাংশই ইনস্টিটউটের কর্মকর্তাদের বাড়িতে চলে গেছে। এ কথাও জানা গেছে, কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের প্রিয়জনদের উপহারস্বরূপ প্রদান করেছে পাবলিক লাইব্রেরির বই। ইনস্টিটিউট অঙ্গনে এ তথ্য এখন ওপেন সিক্রেট। সূত্র থেকে আরো জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে লাইব্রেরিতে সংঘটিত হয়েছে আরো একটি কলংকজনক অধ্যায়। ’৯৩ সালের পর্বের সমস্ত দৈনিক খবরের কাগজ ওজন দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে; কিছু কিছু পুড়িয়ে ফেলাও হয়েছে। সুধীজনের অনেকেই এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রতিদিনের কাগজ আগামী দিনের জন্য ইতিহাস। ইনস্টিটিউট কর্মকর্তারা সে ইতিহাস বিক্রি করে প্রমাণ করেছে লাইব্রেরিতে তাদের অনুপ্রবেশ উদ্দেশ্যমূলক। একাজে লাইব্রেরির মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, লাইব্রেরিতে চলছে যথেচ্ছাচার অনিয়ম, কোন প্রকার নিয়মনীতি না মেনেই ইনস্টিটিউট কর্মকর্তারা লাইব্রেরির গণ্ডিবদ্ধ বই নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। নিয়মিত কর্মচারী নিয়োগ দানের ক্ষেত্রেও চলছে একই অবস্থা। ইতিমধ্যে লাইব্রেরির জন্য প্রয়োজনীয় পিয়নের পরিবর্তে অপ্রয়োজনীয় পদে ৩ জনকে রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের ব্যাসিক কোন কাজ নেই। জানা গেছে, লাইব্রেরিতে সাধারণ সদস্য করার ক্ষেত্রেও সংকীর্ণ ভোটবাজীর দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে প্রবলভাবে। শর্ত মেনে দরখাস্ত করলেও সদস্য হওয়া যাবে না যদি ঐ সংশ্লিষ্ট মহলের অনুগত না হওয়া যায়। একটি সূত্র জানিয়েছে, কেবলমাত্র অনুগতদের সদস্য করা হয় এবং তাদের সদস্য ফি এমন কি ইনস্টিটিউটে নির্বাচনের সময়ে তাদের বকেয়া চাঁদা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে পরিশোধ করা হয়। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে উৎকোচের বিনিময়েও কখনো কখনো সদস্য করা হয়। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্রীড়া সংসদে তাসের জন্য টাকা বরাদ্দ হয় এবং সেই তাস পরে বাইরে বিক্রি করে নতুন বরাদ্দ নেয়া হয়। এভাবে অর্থ আত্মসাৎ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। অনেক অবিশ্বস্ত কথা জানা গেছে যে, ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদে প্রায়ই অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়, ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে ইনস্টিটিউট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপে জানা গেছে, বহুকাল ধরে এই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় না। প্রতি বছরই সভার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু উপযুক্ত কোরামের অভাবে তা কার্যকর হয় না। একটি সূত্র জানান, কোরাম পূরণ হলে সভায় সমুদয় অব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠতে পারে বিধায় সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা কোরাম যাতে না পূরণ হয় সেভাবেই মিটিং ডেকে থাকেন। ইনস্টিটিউটে দুর্নীতি, অব্যবস্থা, অনিয়ম ও অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের হেডকার্ককে প্রশ্ন করলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, “এখানে অনেক কিছুই হয়। কিন্তু আমি বলবো না-আমার নিষেধ আছে।”
পরিশেষে :
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের ৫০ বছর কাল অতিক্রম করলেও যে দেশে ১২ কোটি মানুষের মধ্যে বেশির ভাগই অশিক্ষিত অর-জ্ঞানহীন, যে দেশ ১৯৪৬ থেকে আজ পর্যন্ত কার্যত কোন নতুন গ্রন্থাগারের জন্ম দিতে পারেনি সেখানে যশোরের এই বিশাল সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির তিলে তিলে ধ্বংস প্রক্রিয়া নিশ্চয় সমাজের কোন বিবেকবান মানুষই নীরবে মেনে নিতে পারে না। যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি কোন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান নয় বরং সমগ্রের, সমাজের এবং রাষ্ট্রের। সুতরাং ব্যক্তি, সমগ্র সমাজ এবং রাষ্ট্রের সকলেরই আজ এগিয়ে আসতে হবে, দেখতে হবে, প্রয়োজনে গণতদন্ত করতে হবে-প্রতিষ্ঠানটির ধ্বংস প্রক্রিয়ায় মৌল কারণ কি?
এখনো সময় আছে তরিৎ পদক্ষেপ না নিলে হয়তো প্রতিষ্ঠানের বিশাল বিশাল অট্টালিকা থাকবে, তা লুটপাটের জন্য কিছু মানুষের কথিত কমিটি থাকবে, নামকাওয়াস্তে লোক দেখানো কিছু অনুষ্ঠানও হয়তো বা হবে যেখানে ঐ প্রকৃত জ্ঞানহীন, মেধাহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত স্বার্থপর মানুষ প্রদর্শিত হবে কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিয়ামক সম্পদ-ঐতিহ্য আর সৃজনশীলতার উন্মিলন হবে অন্তঃসার শূন্য। বই চুরি, পত্রিকা বিক্রির পাশাপাশি ইতিমধ্যে নষ্ট হতে শুরু করেছে লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত হাজার হাজার বছরের তালপাতা ও তুলট কাগজে লিখিত পাণ্ডুলিপিসমূহ। এখনই প্রয়োজন ঐ পাণ্ডুলিপিগুলির মাইক্রোফিল্ম করা সেই সাথে তার পাঠ উদ্ধার। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা একাডেমীর একটি উচ্চতম টিম এসে ঐ পাণ্ডুলিপির তথ্য উদঘাটন ও তা মাইক্রোফিল্ম করে সংরক্ষিত করেছে।
সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ও প্রশাসনের দেখা দরকার সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার জন্য এক সময়ে যে বি. সরকার মেমোরিয়াল বা তসবির মহলের জন্ম হয়েছিল আজ তা শুধুমাত্র অর্থ আয়ের দোহাই দিয়ে অশ্লীল, পর্ণো ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে সমাজে অপ-সংস্কৃতি চর্চার উৎকৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে লাইব্রেরির ভিতর ও বাইরের পরিবেশ। লাইব্রেরির দক্ষিণ গেট পরিণত হয়েছে প্রস্রাবখানায় আর পশ্চিম গেট হয়েছে পুরাতন কাপড় বিকিকিনির বাজারে। ফলে একদিকে যেমন টাউন হল ময়দানের বিশালায়তন স্থানের সংকোচন হচ্ছে তেমনিভাবে পরিবেশ হচ্ছে নষ্ট। সে কারণে বড় বড় জনসভার স্থান বর্তমানে অন্যত্র নির্ধারিত হচ্ছে। ইনস্টিটিউট বঞ্চিত হচ্ছে ময়দানের ভাড়া থেকে। অনেক পাঠকই এই প্রতিবেদককে অভিযোগ করেছে রাতে লাইব্রেরিতে অধ্যয়নরতাবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলেও টাউন হলের খেলার আসরে বিদ্যুৎ যায় না। এখানে অধ্যয়নের চেয়ে খেলার গুরুত্ব বেশি পেয়েছে।
যশোরের প্রবীণ অনেক সুধীজন এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বেহাল দশার জন্য অন্যতম মৌলিকভাবে দায়ী কর্মকর্তাদের পশ্চাৎপদ সংকীর্ণ মানসিকতা। হয়তোবা ঐ মানসিকতার কারণেই প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকে জড়িত ও উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে মিঃ রেক্স, যদুনাথ মজুমদার ও অন্যান্যের নামে কোন একটি অঙ্গ সংগঠনের নামকরণ করা হয়নি। আর হয়নি বলেই প্রতিষ্ঠানটির অতীত ইতিহাস সহজেই আমাদের নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থিত হয় না। সর্বোপরি অকৃতজ্ঞ ঐ পশ্চাৎপদ অসভ্য মানসিকতা কাটিয়ে আজ প্রয়োজন জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম বিকশিত আধুনিক দুনিয়ার গতির সাথে তাল মিলিয়ে এ দেশ ও জনপদের মানুষের চেতনা বিকাশের পথ সুগম করার লক্ষ্যে যশোর ইনস্টিটিউটকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
তথ্য সূত্র :
প্রকাশিত গদ্য
লেখক : বেনজিন খান
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
শামিউল আমিন (শান্ত)
প্রথম আপডেট : ১১.১১.০৬
শেষ আপডেট : ১৬.০৫.১১