
Home ঐতিহ্য (Tradition) > কোট চাঁদপুরের ম্যাকলিউড সাহেবের বাড়ি
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86703 বার পড়া হয়েছে
কোট চাঁদপুরের ম্যাকলিউড সাহেবের বাড়ি
প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরানো কোটচাঁদপুরের সাহেব বাড়ি এখনও ম্যাকলিউড পরিবারের স্মৃতি বহন করে চলছে। কালের সাক্ষী এ বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। সাহেব বলতে এদেশের মানুষের মনে আতঙ্ক নানান অত্যাচারের কাহিনী ফুটে উঠে। কিন্তু কোটচাঁদপুরবাসি আজও ম্যাকলিউড পরিবারকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
নীল চাষের পাশাপাশি চিনির ব্যবসায়ের সুবাদে কোটচাঁদপুর এলাকায় সাহেবদের আগমন ঘটে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বালকে নামে এক সাহেব কোটচাঁদপুরে একটি চিনি ফ্যাক্টরী স্থাপন করেন। ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিলে তিনি ফ্যাক্টরিটি নিউ হাউজ নামে আরেক সাহেবের কাছে বিক্রি করে দেন। তিনি তাহেরপুরে আরো একটি চিনি ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন। পরে লোকসান শুরু হলে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে ‘রাম’ মদ তৈরি করা হতো। কোটচাঁদপুরে তখন চিনি শিল্পের রমরমা অবস্থা ছিলো। কিন্তু দেশীয় ময়রাদের সাথে প্রতিযোগিতায় চিনি ব্যবসায়ে সাহেব টিকতে পারেন না। অন্যান্য সাহেব বিলেতে পাড়ি জমালেও নিউ হাউজ কোটচাঁদপুরে এক বিশাল বাড়ী তৈরী করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার একমাত্র কন্যার নাম ছিল সারা। সিনোলার ম্যাকলিউডের সাথে সারার বিয়ে হয়। ম্যাকলিউড ছিলেন স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা। তিনি চৌগাছায় গ্লাডস্টোন এন্ড কোম্পানী নামক একটি চিনি ফ্যাক্টরির দ্বিতীয় ম্যানেজার ছিলেন। কোটচাঁদপুর শহরের উন্নয়নে তিনি যথেষ্ট অবদান রেখেছিলেন। তার তিনপুত্র ছিল এডওয়ার্ড জি ম্যাকলিউড, জেমস ম্যাকলিউড ও হ্যারল্ড ম্যাকলিউড। জি ম্যাকলিউড ব্যরিস্টার ছিলেন। তবে তিনি কোটচাঁদপুরে ব্যবসা করতেন। কপোতাক্ষ নদীর তীরে তিনি এক বিশাল বাড়ি নির্মাণ করেন। ১৮৬৯ সালে কোটচাঁদপুর পৌরসভা স্থাপনে তিনি অবদান রাখেন। ১৮৯২-১৯০৪ সাল পর্যন্ত তিনি পৌরসভার মনোনীত প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ছোট ভাই হ্যারল্ড জি ম্যাকলিউড পৌরসভার চেয়ারম্যান হন (১৯০৪-১৯০৮)। তিনিও বড় ভাইয়ের পাশে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। তাঁর বাড়িটি ছোট সাহেবের বাড়ি নামে পরিচিত। এটি বর্তমানে কোটচাঁদপুর হাইস্কুলের মূলভবন। দ্বিতল এ ভবনটির ১৪টি কক্ষ রয়েছে। তবে দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় বাড়িটি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে বসেছে। দীর্ঘদিন ব্যবহারে কাঠের সিঁড়ি ক্ষয়ে জরাজীর্ন হয়ে পড়েছে। ১৫ একর জমির উপর স্থাপিত এ বাড়ির চারপাশে আম ও লিচু বাগানে ঘেরা ছিল। বড় ও ছোট সাহেব বাড়ির মাঝখানে পারিবারিক কবরস্থান এবং চারিদিকে লোহার গ্রিলে ঘেরা ছিল। কবরগুলো এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রাতের আঁধারে দুর্বত্তরা কবরগুলো ভেঙ্গেচুরে খুঁড়ে ভেতরে কোন লুকানো ধন সম্পদ আছে কিনা সন্ধান করেছে। তবে বাড়ির মালিকানা বদল হয়ে ঘোষ জমিদারদের হতে যায়। বড় সাহেবের বাড়ি ভেঙ্গে চুরে বিক্রি করে দেয়া হয়। ১৯৫৭ সালে ছোটসাহেব বাড়িটিতে কোটচাঁদপুর হাইস্কুলে স্থানান্তরিত হয়। স্কুলের নতুন নতুন ভবন তৈরীর কারণে মুল সাহেব বাড়ির গুরুত্ব কমে গেছে। এখন অফিসের কাজ ও লাইব্রেরী হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান বিপুল
প্রথম আপডেট : ১১.১১.০৬
দ্বিতীয় আপডেট : ১৬.০৫.১১